তিনি কুড়িতে নয় বুড়ি হয়েছেন ১০৯ বছরে!

রহমান মৃধা | Mar 30, 2022 06:32 am
ডাগনি ভলবরি কার্লসন

ডাগনি ভলবরি কার্লসন - ছবি : সংগৃহীত

 

এ শুধু গল্প নয়। এ এক অস্বাভাবিক ঘটে যাওয়া ঘটনা। যা ঘটে চলেছে তার বাস্তব জীবনে ১০৯ বছর ধরে। টাইটানিক জাহাজ দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় ১৯১২ সালে পানির নিচে বরফের পাহাড়ের ধাক্কায়। ঠিক একই বছরে জন্মগ্রহণ করেন সুইডিশ ডাগনি ভলবরি কার্লসন (Dagny Valborg Carlsson)। ১৯১২ সালের ১২ মে জন্ম নেয়া ডাগনি কার্লসনের বয়স এখন ১০৯ বছর। তিনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্কা ব্লগার।

ডাগনির বয়স যখন ৯৩ বছর তখন তার বোনের ছেলে আমেরিকা থেকে প্রথম কম্পিউটার কিনে সুইডেনে আনেন। ডাগনির নজর পড়েছিল ওই দিন সেই কম্পিউটারের ওপর। সেই থেকে এই বুড়ির নিজের চেষ্টায় কম্পিউটার শেখা শুরু এবং কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে থাকেন। কম্পিউটার শেখানোর একপর্যায়ে ডাগনি'র ইন্সট্রাক্টর যখন তাকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি কেন কম্পিউটার শিখতে চান। তখন ডাগনি উত্তর দেন- 'আমি ব্লগার হতে চাই।'

সুইডেনে বসবাসকারী এই ব্লগার ৯৯ বছর বয়সে কম্পিউটার চালানো শিখেন। ডাগনির জন্মের এক বছর পরে (১৯১৩ সাল) ইউরোপের বাইরে প্রথম যে ব্যক্তি নোবেল পুরস্কার পান তার নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছু ঘটনার সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছেন ডাগনি, ওই সময় তার বয়স সাত বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রেখেছেন, তখন তার বয়স ছিলো ২৯ বছর এবং ওই সময় বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিলো রেডিও যা তিনি বর্ণনা করেছেন। ১০০ বছর বয়সে তিনি প্রথম ব্লগ লেখা শুরু করেন। একটি স্থানীয় খবরের কাগজে ডাগনির প্রথম ইন্টারভিউ নেয় যেখানে বলা হয় তার এই বুড়ো বয়সে কম্পিউটারের ওপর দক্ষতার কথা। ১০৩ বছর বয়সে তার ব্লগ পড়তে শুরু করে অনেকে। খবর প্রচারিত হতে থাকে দেশে বিদেশে। ১০৪ বছর বয়সে ডাগনির ১.৫ মিলিয়ন ভক্ত যারা তাঁর সব ব্লগ ফলো করতে শুরু করে।

ডাগনির বয়স এখন ১০৯ বছর, গোটা বিশ্বজুড়ে রয়েছে তার প্রচুর ভক্ত। ডাগনি তার জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা শেয়ার করেন তার ব্লগে। তার এই অসাধারণ কর্মের জন্য বর্তমানে মিডিয়াতে তাকে দেখা যাচ্ছে।

ডাগনি আমার বেশ কাছের একজন প্রতিবেশী। তার নিজের কোনো ছেলে মেয়ে নেই। বিবাহিত জীবনের প্রথম স্বামী ঝরে পড়ে, কারণ সে ছিল মাদকাসক্ত। পরে তিনি বিয়ে করেন এবং বাকি জীবন সুন্দর ও সচ্ছলতার মধ্যে কাটে তার।

ডাগনিকে প্রশ্ন করা হয় দীর্ঘদিন সুন্দর ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পেছনে কী জাদু রয়েছে? তার উত্তর- কাজ, ভালোবাসা, আত্মবিশ্বাস এবং নিজের ওপর আস্থা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। হতাশা নাকি জীবনের আয়ু কমিয়ে দেয়। জীবন চলার পথে ঝড় ঝাপটা বহুবার এসেছে তার জীবনে কিন্তু তা তিনি গ্রহণ করেননি, শুধু মোকাবেলা করেছেন। হেরেছেন ক্ষণিকের তরে, তবে পরাজয় বরণ করেননি কখনো।

ডাগনি পৃথিবীর উন্নতির ধাপগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়েছেন তার হৃদয়ে। তার মতে পৃথিবীর মানবজাতি ধাপে ধাপে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

অতীতের যে সময়গুলো তিনি পার করেছেন এবং নারী জাতিকে যেভাবে অবহেলিত করা হয়েছে তা এখন বিলুপ্তির পথে। তবে পৃথিবীর অনেক দেশ রয়েছে এখনো যেখানে নারীদের প্রতি অবিচার চলছে। তার জীবনের শুরুতে তিনি যে সব বাধা-বিঘ্নের সম্মুখীন হয়েছেন তার কিছু প্রতিচ্ছবি তিনি এখনো দেখতে পাচ্ছেন বিশ্বের অনেক দেশে। তার সেই অসুন্দর অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি আজ অবধি অনেক দেশে ঘটনা প্রবাহ হয়ে বয়ে চলেছে।

বাংলাদেশের নারীদের বর্তমান পরিস্থিতিকে তার জীবনের কোন একসময়ের সাথে তুলনা করতে পেরেছেন। ডাগনির কথায় সে যুগে না হয় সভ্যতা, সচেতনতা, প্রযুক্তি এবং শিক্ষার অভাব ছিল। কিন্তু বর্তমান যুগে কিভাবে সমাজ এসব মেনে নিতে পারছে? যে দেশের শাসনকর্তা নারী তার দেশে নারী ধর্ষণ বা নারী নির্যাতন যা ভাবতেও কষ্ট হয়!

দিব্যি তিনি লেখালেখির সঙ্গে মানবজাতির এক বিস্ময়কর সাক্ষী, জলন্ত উদাহরণ হয়ে বেঁচে আছেন মানুষের মাঝে। ডাগনি ভালোবাসার এক অপূর্ব আইডল যা মানব জাতির এক অনুপ্রেরণা এবং তাকে সুইডেনের সমাজ খুব যত্ন করে ধরে রেখেছে।

ডাগনি তার জীবনের শেষ ব্লগ লিখেছেন এ বছর জানুয়ারির ২৮ তারিখে। বলেছেন – 'att jag har minst nio liv, som katten, men jag vet inte vad jag skall använda så mycket av liv till. Vidare skriver hon om sin kommande 110-årsdag: (Jag) ser fram emot att fira min 110-årsdag i maj, gärna med en liten fest. Skall det vara kalas så skall det vara livat på festen.' (নয়টি বিড়ালের সমমানের জীবন পেয়েছি, কী হবে আর বেঁচে থেকে? তবে যদি ১১০ বছর অবধি বাঁচি তবে মে মাসে ছোটখাটো একটি পার্টি করব যা হবে মনের মতো)।

সুইডিশরা তাদের জন্মদিনে যে গানটি গেয়ে আশীর্বাদ (wish) করে তাহলো 'Ja, må hon leva! ja, må hon leva! ja, må hon leva uti hundrade år!' (হ্যাঁ, সে অবশ্যই বাঁচবে! হ্যাঁ, সে অবশ্যই বাঁচবে! হ্যাঁ, সে এক শ বছরেরও বেশি বাঁচবে)। ডাগনির জীবনে তা সত্যি হয়েছে।

আমি লিখাটি শেষ করতেই গতকাল টেলিভিশনের পর্দায় জানতে পারলাম, ১০৯ বছর পেরিয়ে ১১০ বছরে পা ফেলার আগেই ডাগনি আমাদের ছেড়ে গতকাল বিদায় নিয়েছেন। ডাগনির জীবনের শেষ পার্টি করা হলো না তবে স্মৃতি হয়ে রয়ে গেলো কথাগুলো!

লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।
rahman.mridha@gmail.com

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us