২১০০ সাল কেন লিপ ইয়ার নয়?

অন্য দিগন্ত ডেস্ক | Feb 29, 2020 09:40 am
২১০০ সাল কেন লিপ ইয়ার নয়?

২১০০ সাল কেন লিপ ইয়ার নয়? - সংগৃহীত

 

২৯ ফেব্রুয়ারি। খুবই বিরল এই তারিখ। এ তারিখ সাধারণত চার বছরে একবার আসে। সাধারণভাবে, একেবারে নিখুঁত ভাবে নয় কিন্তু। কারণ এই চার বছর অন্তর এক দিনের যে উল্লম্ফন, তারও ব্যতিক্রম রয়েছে।

নিয়ম ও ব্যতিক্রম
লিপ ইয়ার সর্বদাই আসে চারের গুণিতকে – ২০১৬, ২০২০, ২০২৪ এরকম। কিন্তু চারের গুণিতকের সব বছরই সর্বদা লিপ ইয়ার নয়। এর ব্যতিক্রমী দুটো বছর যেমন ১৯০০ ও ২১০০। এ দুটি বছরই চারের গুণিতকে হলেও সর্বদা এগুলো লিপ ইয়ার নয়।

০০ দিয়ে যে সব বছর শেষ হচ্ছে, সেগুলো সবই চারের গুণিতক বটে, কিন্তু সাধারণভাবে সেগুলো লিপইয়ার নয়। এগুলিই ব্যতিক্রম। কিন্তু ব্যতিক্রমেরও ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন ২০০০ সাল ০০ দিয়ে শেষও বটে, আবার লিপইয়ারও বটে। তার অর্থ হলো, এখন যারা বেঁচে রয়েছেন, খুব অল্পবয়সী বাদ দিলে, তারা কেউই তাদের জীবৎকালে লিপ ইয়ার মিস করবেন না। আমাদের পূর্বপ্রজন্ম ১৯০০ সালে একটি লিপ ইয়ার মিস করেছেন, আমাদের উত্তর প্রজন্ম ২১০০ সালে একটি লিপইয়ার মিস করবেন।

লিপ ইয়ারের পিছনে নিয়ম কী, তার ব্যতিক্রমগুলো কী, সে ব্যতিক্রমের ব্যতিক্রমগুলোই বা কী, তা একবার দেখে নেয়া যাক।

লিপ ইয়ার কেন
আমাদের সৌর ক্যালেন্ডারে পৃথিবীর তার কক্ষফথে সূর্যকে একবার অতিক্রম করে আসার প্রতিফলিত হবার কথা। এর ফলে ঋতুচক্রের হিসেব রাখতে, শস্যচক্রের হিসেব রাখতে, স্কুলের অনুসূচি তৈরি করতে সুবিধা হয়।

সূর্যকে তার কক্ষপথে একবার অতিক্রম করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ও কয়েক ঘণ্টা। মোটামুটি ভাবে এই সময়টা হল ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা (নিখুঁত হিসেব নয়), যার অর্থ আমাদের ক্যালেন্ডারে সৌর বর্ষের থেকে ৬ ঘণ্টার মতো কম সময়ের হিসাব থাকে। সেই বছর পিছু ৬ ঘন্টার ঘাটতি পূরণ করতে আমাদের ক্যালেন্ডারে লিপ ইয়ার রয়েছে।

৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লিপ ইয়ারের হিসেব প্রথম এনেছিলেন জুলিয়াস সিজার নিযুক্ত পণ্ডিতরা, যা আরও নিখুঁত করা হয় ১২ খ্রিস্টাব্দ থেকে। যুক্তি ছিল এরকম- ক্যালেন্ডার বর্ষ যদি হয় ৩৬৫ দিনের, তাহলে তা থেকে ৬ ঘণ্টা বাদ চলে যাচ্ছে। এই ৬ ঘণ্টা বছরের পর বছর ধরে যুক্ত হয়েই চলেছে। কিন্তু প্রতি চার বছর শেষে একটি ক্যালেন্ডার বর্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টা বা একটি গোটা দিন বাদ যাচ্ছে। পণ্ডিতরা বললেন, তাহলে প্রতি চার বছর শেষে ক্যালেন্ডারে একটা দিন যোগ করে দিলেই তো হয়।

ফলে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি বছর হল ৩৬৫ দিনের, প্রতি চতুর্থ বছর হলো ৩৬৬ দিনের। মোটামুটি ঠিকই ছিল।শুধু, দীর্ঘ মেয়াদে এ হিসেব কাজ করত না।

তার কারণ, ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টার হিসেবটা মোটামুটি। এখানে সামান্য খুঁত রয়েছে, কিন্তু সে খুঁতগুলো একদিন যুক্ত হতোই।

ভুলগুলো জমে ওঠে
আগের চেয়ে আরেকটু নিখুঁত হওয়া যাক। সূর্যকে অতিক্রম করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন, ৫ ঘণ্টা, ৪৮ মিনিট, ৪৬ সেকেন্ড।

ফলে লিপইয়ারের হিসেব করার সময়ে যে ঘাটতি পূরণ করা হয়, প্রকৃত ঘাটতি তার চেয়ে কম। লিপইয়ারে চার বছর অন্তর যে একদিন যুক্ত করা হচ্ছে, তাতে গলতি থাকছে ১১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের।

প্রতি মিনিটে, প্রতি সেকেন্ডে এই ভুলগুলো জমা হতে থাকে, বছরের পর বছর ধরে, শতকের পর শতক ধরে। ষোড়শ শতকে হিসেব কষে দেখা গেল তত দিন পর্যন্ত ১০টি অতিরিক্ত দিন ক্যালেন্ডারে স্থান পেয়ে গেছে। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি নির্দেশ দিলেন ক্যালেন্ডার থেকে ১০ দিন বাদ দিতেই হবে। তার জেরে সে বছরের ক্যালেন্ডারে ৪ অক্টোবরের পর সরাসরি চলে এলো ১৫ অক্টোবর।

ভবিষ্যতে আরো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, যাতে মিনিট ও সেকেন্ড ফের অনেক জমা না পড়ে যায়। নিশ্চিত করণীয় ছিল লিপ ইয়ার কমানো, প্রতি শতাব্দীতে একটি করে লিপ ইয়ার কমানো। তার জন্য সবচেয়ে উপযোগী ছিল যে বছর ০০ দিয়ে শেষ হচ্ছে, সেই বছরগুলো। কিন্তু হিসেব কষে দেখা গেল, ০০ দিয়ে শেষ হওয়া প্রতিটি বছর যদি বাদ দেয়া হয়, তাহলে ফের ক্ষতিপূরণের আধিক্য ঘটে যাবে। ফলে, কিছু ০০ বছরকে লিপ ইয়ার হিসেবে রাখবার দরকারও পড়ল।

গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারে যে সংস্কার হলো, আমরা আজ সেটাই মেনে চলি। তার ফর্মুলা হলো

* ৪-এর গুণিতকে সব বছরই লিপ ইয়ার হবে, ব্যতিক্রম

* ০০ দিয়ে শেষ যে সব বছর তা লিপ ইয়ার হবে না, ব্যতিক্রম

* যেসব ০০ বছর ৪ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল ০০ দিয়ে শেষ হবে (যেমন ১৬০০, ২০০০, ২৪০০) সেগুলো লিপ ইয়ার থাকবে।

সে কারণেই ১৯০০ বা ২১০০ লিপ ইয়ার নয়, কিন্তু ২১০০ লিপ ইয়ার।

তাহলে এটাই চূড়ান্ত?
এ ব্যাপারটা এক্কেবারে নিখুঁত হতে পারে না। আমরা পৃথিবীর কক্ষপথ একদম শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত নিখুঁত ভাবে মাপি, তা সত্ত্বেও আমাদের ক্যালেন্ডারে হিসেব থাকে একটা পুরো দিনের। আজকের ক্যালেন্ডারে পৃথিবীর কক্ষপথের ২৬ সেকেন্ডের হিসেব থাকে না, যা ৩৩২০ বছরে একটা পূর্ণ দিনে পর্যবসিত হয়।

প্রতি ৪০০০ বছরে বা ৩২০০ বছরে একটা করে লিপ ইয়ার বাদ দিয়ে সংশোধন করার প্রস্তাব রয়েছে। ৩২০০ বা ৪০০০ বছর অনেক দূরের ব্যাপার। ২০২০ সালে সে নিয়ে খুব বেশি মানুষ ভাবিত নন।

সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us