চা যুদ্ধ : নেপালের কাছে হেরে যাচ্ছে ভারত!

প্রবীর প্রমানিক | Jul 15, 2020 05:14 pm
চা যুদ্ধ : নেপালের কাছে হেরে যাচ্ছে ভারত!

চা যুদ্ধ : নেপালের কাছে হেরে যাচ্ছে ভারত! - ছবি : সংগৃহীত

 

নেপাল থেকে ভারতের দার্জেলিং পাহাড়জুড়ে বিস্তৃত পূর্ব হিমালয়ের সঙ্ঘাত কেবল সীমান্তরেখা নিয়ে নয়, এটি চা উৎপাদনের যুদ্ধও। যুদ্ধটি দার্জেলিং চা বনাম নেপালি চা নিয়ে।

উভয়েই দাবি করে আসছে যে তারাই সেরা চা উৎপাদন করে। কিন্তু কিন্তু দার্জেলিং চা বাগান মালিক ও উৎপাদনকারীরা অভিযোগ করছেন যে করোনাভাইরাসের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নেপাল তাদের অপেক্ষাকৃত সস্তা চাকে দার্জেলিং চায়ের জনপ্রিয় প্রিমিয়ার চা হিসেবে প্রচার করছে। আর এর ফলে দার্জেলিং চায়ের উৎপাদন পড়ে গেছে।
অবশ্য নেপালিরা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলছে, যে মানের কথা বলা হচ্ছে, তা দার্জেলিং চা আবাদকারীরা উৎপাদন করতে পারছেন না। কিন্তু অন্যরা যখন তাদের ছাপিয়ে যাচ্ছে, তখন তারা হইচই করছেন।

দার্জেলিং চা শিল্প সূত্র জানাচ্ছে, লকডাউনের কারণে পাহাড়ের ৮৭টি বাগানের সবগুলোর চা গত তিন মাসে হয় শুকিয়ে গেছে কিংবা কারখানাগুলোতে স্তুপাকারে পড়ে আছে।
কিন্তু নেপালি চা উৎপাদনকারীরা এ ধরনের বিপর্যয়ে পড়েনি। তারা এখন ‘ভেজাল পাতার’ বন্যা বইয়ে দিচ্ছে ভারতের বাজারে। এগুলো আবার দার্জেলিং চা নামেই বিক্রি করা হচ্ছে বলে ভারতীয় আবাদকারীরা অভিযোগ করছেন।

নেপালি চায়ে ভারতের বাজার ভেসে যাওয়ায় ভারতের প্রথম জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনের (জিআই) ট্যাগযুক্ত কৃষি উৎপাদনটির সুনামও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
চা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলছেন যে নেপালি চা সস্তা হওয়ায় তা দার্জেলিং চায়ের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে।খুচরা বিক্রেতা, রফতানিকারক ও ব্লেন্ডাররা পর্যন্ত বলছেন যে কোনো ভোক্তার পক্ষে দুই ধরনের চায়ের মধ্যে পার্থক্য করা খুবই কঠিন।

তবে নেপাল ও ভারতের মধ্যে বৈরিতার প্রেক্ষাপটে দার্জেলিং চায়ের আবাদকারীরা নেপালের ‘সস্তা ও নিম্ন’ মানের চা বিক্রি নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছেন। তারা অভিযোগ করছেন, খাদ্য নিরাপত্তার বিধান না মেনেই এই চা আমদানি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে দার্জেলিং টি এসোসিয়েশন (ডিটিএ) ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথোরিটি ইন ইন্ডিয়া ও টি বোর্ড ইন্ডিয়ার কাছে নালিশও করেছে।

ব্রিটিশ সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন স্যামলারের অধীনে ১৮৪০-এর দশকে দার্জেলিংয়ে চা উৎপাদন শুরু হয়। অবশ্য দার্জেলিং পাহাড়ে ব্রিটিশ প্লান্টারদের বসতি স্থাপনের পর ১৮৫৬ সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিকে চা উৎপাদন শুরু হয়। তবে ভারতে প্রতি বছর যত চা উৎপাদিত হয়, তার মাত্র ০.২ ভাগ তথা ৮.৫ মিরিয়ন কেজি উৎপাদিক হয় দার্জেলিংয়ে। তবে দার্জেলিংয়ে উৎপাদিত চায়ের ৬৫ ভাগ রফতানি হয়।
সারা বিশ্বে ‘ফার্স্ট ফ্লাশ ও সেকেন্ড ফ্লাস’ চা হিসেবে দার্জেলিং পরিচিত। ফার্স্ট ফ্লাশ হলো মার্চ-এপ্রিলে তোলা চা। এটি খুবই মসৃণ ও হালকা সোনালি রঙের হয়। অন্যদিকে সেকেন্ড ফ্লাশ হয় মধ্য মে থেকে মধ্য জুলাইয়ে। এটি ডার্ক আম্বার রঙের।

দার্জেলিংয়েল উৎপাদনকারীরা বছরে চারবার ফসল তোলেন। ফার্স্ট ফ্লাশ হলো তাদের মোট উৎপাদনের ২০ ভাগ। সেকেন্ড ফ্লাশও ২০ ভাগ। মুনসুন ফ্লাশ ৩০ ভাগ, অটম ফ্লাশ বাকি ৩০ ভাগ।
নেপালিরা যা বলছেন
নেপালের চা উৎপাদনকারীরা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, দার্জেলিং পাহাড়ের কাছে তাদের চা ভারতের বাজারের শূন্যতা পূরণ করছে।
তাদের ভাষায় ভারতের মোট চায়ের মাত্র ৩০ ভাগ শীর্ষ মানের। এগুলো রফতানি হয়। আর অর্থোডক্স চা নামে পরিচিত নেপালি চা হয় একই পরিবেশ।

নেপালিরা বলছে, তাদের চায়ের মান, ঘ্রাণ ও স্বাদের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমাগত জনপ্রিয় হচ্ছে। আর দার্জেলিং চায়ের বিপরীতি নেপালি চায়ের একটি বড় সুবিধা হলো, এগুলো অনেক ছোট বাগানে হয়। বেশির ভাগ কারখানায় হাতে হাতে প্যাকেট করা হয়।
এক নেপালি প্লান্টার বলেন, চা শিল্প খুবই শ্রমঘন। মানসম্পন্ন শ্রমিক না পাওয়ায় দার্জেলিংয়ের উৎপাদনকারীরা মান ধরে রাখতে পারছেন না। ফলে তারা শ্রীলঙ্কার মতো দেশের উৎপাদনকারীদের কাছে বাজার হারাচ্ছেন।

শ্রমিক সঙ্কটে ভুগছে দার্জেলিংয়ের চা শিল্প। তরুণ প্রজন্ম চা বাগানে কাজ না করে বড় বড় নগরীতে পাড়ি দিচ্ছে উন্নত জীবনের সন্ধানে। ফলে শ্রমিক সঙ্কট এখানে মারাত্মক।
নেপালের ন্যাশনাল টি অ্যান্ড কফি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের তথ্যানুযায়ী,নেপালে বছরে ২৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ২০ মিলিয়ন কেজি ক্রাশ, টিয়ার ও কার্ল (সিটিসি) চা। আর ৫ মিলিয়ন কেজি অর্থোডক্স চা। সিটিসি চায়ের পুরোটাই আসে পূর্বাঞ্চলীয় তেরাই অঞ্চলের ঝাপায়। আর অর্থোডক্স চা হয় পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে।

নেপালে বছরে যে ৫.৫ মিলিয়ন টন অর্থোডক্স চা উৎপাদিত হয়, তার ৮০ ভাগ ভারতের বাজারে যায়। আর ১০ ভাগ যায় পাশ্চাত্যের বাজারে। ভারত প্রতি বছর নেপাল থেকে ১০-১২ মিলিয়ন টন সিটিসি এবং ৪ থেকে ৪.৫ মিলিয়ন টন অর্থোডক্স চা আমদানি করে।
এদিকে শ্রীলঙ্কার চা উৎপাদনকারীরা অবিশ্বাস্য কাজ করেছে সিলন টি ব্যান্ড নামে চা বিপণন করে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনাম থেকে চা আমদানি করে তৃতীয় দেশে রফতানিতে নিয়োজিত কলকাতাভিত্তিক এক চা ব্যবসায়ী বলেন, নেপালের চায়ের ব্র্যান্ড নাম থাকা দরকার। তিনি বলেন, দিলমা চা শ্রীলঙ্কার খুবই জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ড। এটি সারা দুনিয়ায় পরিচিত।

তিনি বলেন, ভারতে চায়ের দীর্ঘ ইতিহাস সত্ত্বেও দেশটি আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us