যে বনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দরকার বন্যার

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Jul 18, 2020 03:50 pm
যে বনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দরকার বন্যার

যে বনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দরকার বন্যার - ছবি : সংগৃহীত

 

বন্যায় বিধ্বস্ত ভারতের আসাম রাজ্য। বন্যায় বানভাসি আসামে প্রাণ কেড়েছে ৭৩ জনের। বন্যার জেরে রাজ্যজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ। কাজিরাঙা জাতীয় উদ্য়ান ও ব্যাঘ্র সংরক্ষণের ৮৫ শতাংশই পানির তলায় চলে গিয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ভারতের জাতীয় উদ্য়ানে বৃহস্পতিবার ঘুরে দেখেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল। এখন পর্যন্ত ১২৫টি জন্তুকে উদ্ধার করা হয়েছে। বন্যার জেরে মৃত্যু হয়েছে গণ্ডার, হরিণ ও বন্য শূকরসহ ৮৬টি জন্তুর।

তবে, ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বছরে বন্যা অপরিহার্য বলেই মনে করা হয়। কিন্তু কেন? কাজিরাঙা ইকোসিস্টেমের (বাস্তুতন্ত্র) নেপথ্যে বন্যার ভূমিকা কী? তারই বিশদে ব্যাখ্যা করা হলো এখানে…

কাজিরাঙা ইকোসিস্টেমে বন্যার ভূমিকা ঠিক কী?

আসাম এমনিতেই বন্যা প্রবণ এলাকা। এর ব্যতিক্রম নয়, ১ হাজার ৫৫ বর্গ কিমির কাজিরাঙা জাতীয় উদ্য়ান ও ব্যাঘ্র সংরক্ষণ। একদিকে ব্রহ্মপুত্র নদী, অন্যদিকে কার্বি অ্যাঙলং পাহাড়, এই দুইয়ের মধ্যিখানে যেন স্যান্ডইউচের মতো রয়েছে কাজিরাঙা উদ্য়ান। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাজিরাঙা বাস্তুতন্ত্রের ভালোর জন্যই বন্যা হওয়াটা জরুরি।

কাজিরাঙা জাতীয় উদ্য়ান ও ব্যাঘ্র সংরক্ষণের ডিরেক্টর পি শিবকুমার জানিয়েছেন, ”এটার অবস্থান নদী তীরবর্তী, শক্ত মাটির উপর এর অবস্থান নয়। ফলে, কাজিরাঙা বাস্তুতন্ত্র পানি ছাড়া টিকতে পারবে না”। বন্যার ফলে কাজিরাঙার জলাশয়গুলো যেমন ফের ভরাট হতে পারে, তেমনই তৃণভূমি, বনগুলো ভালোভাবে সতেজ থাকে।

বন্যার ফলে কাজিরাঙায় কি কোনো সমস্যা হতে পারে?

সেন্টার ফর ওয়াইল্ডলাইফ রিহ্য়াবিলেটেশন অ্যান্ড কনজার্ভেশনের প্রধান রথীন বর্মনের কথায়, ”আগে আগে ১০ বছরে একটা ভয়াল বন্যা হতো। এখন প্রতি বছর প্রায় হয়”। তার কথায়, জলাবদ্ধ অঞ্চলে ব্যাপক হারে বননিধন বা বাঁধ দিয়ে ব্যাপক হারে পানি ছাড়ার জেরে এটা হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও হতে পারে যে প্রতি বছর বন্যার হার বাড়ছে।

২০১৮ সাল বাদে, ২০১৬ ও ২০২০ সালের মধ্যে ব্যাপক বন্য়া হয়েছে, যার ফলে শয়ে শয়ে জীবজন্তুর মৃত্যু হয়েছে এবং শয়ে শয়ে জীবজন্তু জখম হয়েছে। বন্য়ার সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে খাপ খাইয়ে নেয় জীবজন্তুরা। কিন্তু জলস্তর একটা নির্দিষ্ট সীমায় পৌঁছোলে, জীবজন্তুরা কার্বি অ্যায়ঙলং পাহাড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যায়।

অতীতে, কাজিরাঙা ও কার্বি অ্যয়ালং একই অঞ্চলের মধ্যে ছিল। কিন্তু এখন সেখানে যেতে হলে উদ্য়ান সংলগ্ন ব্য়স্ততম জাতীয় সড়ক পেরোতে হয় জন্তুদের। কাজিরাঙা করবেট ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যান্ড ভেটেরিনারি অ্য়াডভাইসর নবীন পাণ্ডের কথায়, ”বছরের পর বছর ধরে হাইওয়ে পারাপারের জন্য দুঃসহ হয়ে পড়ছে। ৯টি বন্যপ্রাণী করিডরের কয়েকটা রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে”। হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকান ও আনুষাঙ্গিক কাঠামো যে হারে বেড়েছে, তার ফলে সমস্যা হয়েছে।

এরফলে, উদ্য়ানের বাইরে যখনই জীবজন্তুরা বেরোয়, হয় হাইওয়েতে গাড়ির ধাক্কায় তাদের মৃত্যু হয়, তা না হলে, চোরকারবারীদের হাতে পড়ে তারা। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে, কড়া নজরদারির জেরে এ ধরনের ঘটনা কম হচ্ছে। যারা পার্কের মধ্যেই থাকে, বন্য জন্তুরা হয় ডুবে মারা যায় কিংবা পানির তলায় ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে যায়।

সংলগ্ন গ্রামগুলোতে কী প্রভাব পড়ে?

পার্ক সংলগ্ন ৭৫টি গ্রামের মধ্যে ২৫টিতেই বন্যার প্রভাব পড়ে। কাজিরাঙা জাতীয় উদ্য়ানের ওয়াইল্ডলাইফ রিসার্চ অফিসার রবীন্দ্র শর্মা জানিয়েছেন, ”বন্যার সময় গণ্ডারের বাচ্চারা তাদের মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যায়। বাঘেরা সাঁতরে পার হয়ে বাড়ি মধ্যে ঢুকে পড়ে। হরিণরা গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ে”। এর জেরে, মানুষ বনাম জন্তু বিবাদ প্রকট হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হয়।

বন্যার আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে কী করা হয়?

বন্যার এক মাস আগে সবরকম প্রস্তুতি নেয়া হয়। উদ্য়ান কর্তৃপক্ষ সর্বক্ষণ সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের থেকে আপডেট নিতে থাকেন। পানিস্তরের সীমা সর্বদা নজরে রাখা হয়। ডা. পাণ্ডে জানালেন, বন্যার আগে বাড়ি বাড়ি ভ্যাকসিনেসন করা হয়। তাছাড়া, বন্যপ্রাণীদের কেউ যাতে আঘাত না করেন, সে ব্যাপারে জনমানসে সচেতন করা হয়। যখন বন্যা হয়, তখন ৩৭নং জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

কাজিরাঙায় কৃত্রিম পার্বত্য অঞ্চল কতটা উপযোগী?

বন্যার সময় জীবজন্তুরা যাতে সুরক্ষিত স্থানে থাকতে পারে, সেজন্য পার্কের মধ্য়ে কৃত্রিম পার্বত্য অঞ্চল (হাইল্যান্ডস) তৈরি করা হয়েছে। তবে অনেকের মতে, এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। যে ৩৩টি হাইল্যান্ডস বানানো হয়েছে, তা কাজিরাঙায় সব জীবজন্তুর থাকার জন্য যথেষ্ট নয়।

তাহলে সমাধান কী?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অ্যানিমেল করিডরের নিরাপত্তায় আরো জোর দেয়া দরকার। পাশাপাশি কার্বি পাহাড়ি এলাকায় যাওয়ার জায়গা আরো সুরক্ষিত করা দরকার। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ৩৭নং জাতীয় সড়কের উপর ৩৫ কিমি লম্বা উড়ালপুল বানানোর প্রস্তাব দিয়েছিল ভারতের কেন্দ্র সরকার। শিবকুমারের কথায়, ”৩৫ কিমি লম্বা উড়ালপুল বানানো সময়সাপেক্ষ। সুতরাং, এখন আমাদের দেখতে হবে, আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে এই নির্মাণকাজ করা যায়, যাতে জীবজন্তুদের কোনো সমস্যা না হয়”।

এদিকে, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে পার্কের দক্ষিণ সীমানা বরাবর এলাকায় সব ধরনের খননকাজে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us