মওলানা হসরত মোহানী ও ইনকিলাব জিন্দাবাদ

জয়নাল হোসেন | May 24, 2021 03:11 pm
মওলানা হসরত মোহানী

মওলানা হসরত মোহানী - ছবি সংগৃহীত

 

ইনকিলাব জিন্দাবাদ হচ্ছে ভারতবর্ষের একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক স্লোগান। ইনকিলাব শব্দটির মানে বিপ্লব বা আমূল পরিবর্তন। আর জিন্দাবাদ মানে দীর্ঘজীবী হউক। ইনকিলাব জিন্দাবাদ কথাটির অর্থ হলো বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। দুটিই ফারসি শব্দ। জিন্দাবাদ শব্দটি ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, উর্দু, হিন্দি ও বাংলা ভাষাতে শব্দের সাথে প্রত্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তি, আদর্শ বা রাষ্ট্রের দীর্ঘজীবীতা কামনার ক্ষেত্রে স্লোগানে এই শব্দ ব্যবহার হয়। ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানটির ব্যবহার মূলত রাজনৈতিক। কোনো নামের পরে জিন্দাবাদ ব্যবহার করে ওই নামের ব্যক্তি, আদর্শ বা রাষ্ট্রের দীর্ঘজীবন কামনা করা হয়। আর ‘চুপকে চুপকে রাত দিন’ হচ্ছে উর্দু ভাষায় রচিত একটি বিখ্যাত গজলের কলি যেটি গেয়েছেন গজল সম্রাট পাকিস্তানের গোলাম আলী। ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ এবং ‘চুপকে চুপকে রাত দিন’- এ দুটিই মওলানা হসরত মোহানীর অমর সৃষ্টি।

ইনকিলাব জিন্দাবাদের আদলে সৃষ্ট হিন্দুস্থান জিন্দাবাদ, ভারতের একটি দেশাত্ববোধক স্লোগান। অনুরূপভাবে পাকিস্তান জিন্দাবাদ, পাকিস্তানের একটি দেশাত্ববোধক স্লোগান এবং বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, বাংলাদেশের একটি দেশাত্ববোধক স্লোগান।ওদিকে ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগানের স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সৃষ্টি করেন ‘জয় হিন্দ’ আর কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে চালু করেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। ব্রিটিশ ভারতের স্বদেশী নেতা পূর্ণচন্দ্র দাস (১৮৯৯-১৯৫৬) ছিলেন বর্তমান মাদারীপুর জেলার রাজৈর এলাকার স্কুল শিক্ষক। বাঘা যতীনের (১৮৭৯-১৯১৫) সাথে কাজ করা পূর্ণচন্দ্র দাসের স্বদেশী আলোচনা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবনে (রোগাক্রান্ত অবস্থায় লেখাপড়া বন্ধ থাকাকালে) মাদারীপুরে যোগদান করেছেন। পূর্ণচন্দ্র দাসের জেলমুক্তি উপলক্ষে কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘পূর্ণচন্দ্র অভিনন্দন’ শিরোনামে একটি কবিতা রচনা করেছিলেন, যেটি কবির ভাঙ্গার গান কাব্যগ্রন্থে স্থান পায়। কাজী নজরুল ইসলামের ‘পূর্ণচন্দ্র অভিনন্দন’ কবিতার অংশ বিশেষ- ‘বাঙলা বাঙালির হোক,বাঙলার জয় হোক, জয় বাঙলা’ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘জয় বাংলা’ নিয়ে তাকে স্লোগান হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। ‘জয় বাংলা’ এবং ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে পূর্ব বাঙলার আপামর ছাত্র-জনতা তথা আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি দখলদারদের কবল থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে মুক্ত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পরবর্তীকালে জয় বাংলা স্লোগান বাদ রেখে জাতীয়ভাবে পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগানের আদলে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান চালু করা হয়েছিল।

ব্রিটিশ ভারতে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানের সৃষ্টি। উত্তর প্রদেশের কানপুর শহরে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর কনফারেন্স করে ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে আহবায়ক কমিটির প্রধান ছিলেন মওলানা হসরত মোহানী। তিনি ছিলেন তুখোড় রাজনৈতিক ও প্রখ্যাত কবি। মওলানা হসরত মোহানির প্রকৃত নাম সৈয়দ ফজল উল হাসান। তার জন্ম ১৮৭৫ সালের ১৪ অক্টোবর উত্তর প্রদেশের উন্নাও জেলার মোহান গ্রামে।তাদের আদি পুরুষ ছিলেন ইরানের নিশাপুর এলাকার অধিবাসী। সৈয়দ ফজল উল হাসান কবিতা লিখতেন ‘হসরত মোহানী’ ছদ্ম নামে ।তিনি আলিগড় মোহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজের ছাত্র ছিলেন। ১৯২০ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তার নামে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয়। তিনি ছাত্রজীবনেই লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলকের(১৮৫৬-১৯২০) নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ইংরেজ জামানায় নৈনিতাল ও এলাহাবাদ জেলেও কাটিয়েছিলেন তিনি দীর্ঘদিন। ছাত্র জীবনে বিয়ে হয় তার। তার স্ত্রীর নাম নিসাতুন নিসার।সরকারের নিকট আবেদন করে জেল থেকে সাময়িক মুক্তি নিতে চাননি। নিজের কন্যার অসুস্থতার সময় সরকার চেয়েছিলেন তিনি যেন সাময়িক মুক্তির জন্য একটি দরখাস্ত দেন। তিনি দরখাস্ত দেননি। কন্যা শিশুকে তিনি আর জীবিত দেখতে পাননি।

কবি হিসেবে তার লেখা অনেক জনপ্রিয় কবিতা ও গজলের মধ্যে একটি হচ্ছে ‘চুপকে চুপকে রাত দিন’।

সম্পূর্ণ গজলটি হলো

হুঁ হুঁ হুঁ আ আ হুম হুঁ হুঁ হুঁ
চুপকে চুপকে রাত দিন আঁসু বহানা ইয়াদ হ্যায়।।
হম কো অব তক আশিকী কা ও জমানা ইয়াদ হ্যায়।
চুপকে চুপকে রাতদিন আঁসু বহানা ইয়াদ হ্যায়।
খৈচ লেনা ও মেরা পরদে কা কোনা দফ্ফতন।।
ঔর দুপট্টে সে তেরা ও মুঁহ ছুপানা ইয়াদ হ্যায়
হম কো অব তক আশিকী কা ও জমানা ইয়াদ হ্যায়
চুপকে চুপকে রাতদিন আঁসু বহানা ইয়াদ হ্যায়।
দো পহর কী ধুপ মে মেরে বুলানে কে লিএ।।
ও তেরা কোঠে পে নঙ্গে পাও আনা ইয়াদ হ্যায়।
হম কো অব তক আশিকী কা ও জমানা ইয়াদ হ্যায়।
চুপকে চুপকে রাতদিন আঁসু বহানা ইয়াদ হ্যায়।
হুঁ হুঁ হুঁ আ আ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ

পাকিস্তানের গজল সম্রাট ওস্তাদ গোলাম আলী (জন্ম-১৯৪০ সালে পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে) এই গজলটি গাওয়ার পর এবং ভারতীয় চলচ্চিত্রকার বি আর চোপড়ার (১৯১৪-২০০৮) নিকাহ(১৯৮২) সিনেমায় ব্যবহারের পর রাতারাতি গজলটি খ্যাতির শিখরে পৌঁছে যায়।

ভারতের কানপুরে কমিউনিস্ট পার্টির কনফারেন্সের সভামঞ্চ থেকেই হসরত মোহানী মনে করলেন যে ভারতীয় বামপন্থীদের একটা আলাদা স্লোগান থাকা দরকার, যেটা হবে তাদের একান্তই নিজস্ব। কোনো পার্টির না, এই স্লোগান হবে একটি মতাদর্শের। মওলানা হসরত মোহানীই সেদিন (১৯২৫) প্রথম দাঁড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে সভায় শ্লোগান দিয়েছিলেন- ইনকিলাব জিন্দাবাদ- বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ‘গ্র্যান্ড ওল্ড ম্যান’ যদি গুজরাটের দাদাভাই নওরোজী (১৮২৫-১৯১৭) হয়ে থাকেন, তাহলে উত্তর প্রদেশের সৈয়দ ফজল উল হাসান তথা মওলানা হসরত মোহানীকে (১৮৭৫-১৯৫১) ভারতীয় রাজনীতির বামপন্থার ‘গ্র্যান্ড ওল্ড ম্যান’ বললে অত্যুক্তি হবে না। মওলানা হসরত মোহানী ইসলামী দর্শন ও ধর্মশাস্ত্রে সুপন্ডিত ছিলেন, আবার ছিলেন অতিমাত্রায় কৃষ্ণভক্ত। জন্মাষ্টমীর দিন প্রায় প্রতি বছরই মথুরাতে তার পদধূলি পড়ত। কৃষ্ণ-প্রেম নিয়ে উর্দু ও হিন্দি ভাষায় লেখা তার অনেক কবিতা ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। তার গুণমুগ্ধ্ ভক্তদের মধ্যে ছিলেন আসফাকুল্লাহ খান, প্রেম কৃষ্ণ খান্না, রামপ্রসাদ বিসমিলের মতো অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী।হসরত মোহানীর পড়াশোনাও ছিল প্রচুর। তিনি মার্কসীয় দর্শনে পণ্ডিত ছিলেন, সোভিয়েতের বহু পদক্ষেপের সমর্থক ছিলেন, কিন্তু সোভিয়েতের অনুকরণের পক্ষপাতি ছিলেন না। তিনি মনে করতেন- ভারতীয় কমিউনিজম বলশেভিজম নয়। তার সহকর্মী, যেমন বঙ্গের সন্দ্বীপের মুজাফফার আহমেদ বা মোম্বাইর এস.এ ডাঙ্গের কট্টর ধর্মবিরোধী অবস্থান তিনি সমর্থন করেননি। তার বক্তব্য ছিল- ভারতবর্ষ ধর্মের দেশ, ধর্মকে অস্বীকার করে এই দেশে সাম্যবাদী রাজনীতি শিকড় বিস্তার করতে পারবে না আর তাছাড়া ধর্ম মাত্রেই প্রগতিশীলতা বিরোধী এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।

কানপুর কনফারেন্সের পর থেকেই ভারতের সব ধরণের, সব দলের বামপন্থীদের মার্কা মারা স্লোগান হিসেবে চালু হয়ে যায় ইনকিলাব জিন্দাবাদ। তখন থেকে আজ অবধি বিপ্লবীদের মধ্যে এই স্লোগান চালু রয়েছে। তবে নয়া দিল্লির আইন সভায় ভগৎ সিং (১৯০৭-১৯৩১) এবং বটুকেশ্বর দত্ত(১৯১০-১৯৬৫) ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল বোমা নিক্ষেপ করে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান উচ্চারণের পর থেকে সমগ্র ভারতে এক ধাক্কায় ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানের প্রচার বহুগুণে বেড়ে যায়। সেদিক থেকে সারা ভারতে মওলানা হসরত মোহানীর স্লোগানটি ব্যাপক প্রচারের ক্ষেত্রে বিপ্লবী ভগৎ সিংয়ের অবদান স্বীকার‌ না করে উপায় নাই।

উল্লেখ, কংগ্রেস নেতারা ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চাননি, চেয়েছিলেন আংশিক সম্মানজনক ক্ষমতামাত্র। অনুনয় ভিক্ষার ভাষায় যেগুলোর নাম ছিল 'স্বরাজ ', 'স্বায়ত্তশাসন ', 'ডোমিনিয়ন স্টেটাস ' ও 'হোমরুল ' প্রভৃতি ছলনাময় শব্দ। কংগ্রেসের সর্বপ্রথম যিনি প্রকৃত বা পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি করেছিলেন তিনি ব্রিটিশ-বিরোধী, মুসলিম বংশজাত, খিলাফত কমিটির সদস্য হসরত মোহানী। হসরত মোহানীর উত্থাপিত দাবির সঙ্গে সঙ্গে গান্ধীজী তাকে তিরস্কার করে থামিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯২১ সালে কংগ্রেসের আমেদাবাদে মওলানা হসরত মোহানী পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উপস্হিত করেন। সে সময়ে মহাত্মা গান্ধী এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছিলেন- ‘পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি আমাকে বেদনা দিয়েছে, কারণ প্রস্তাবটি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচায়ক’ (শ্রী সত্যেন সেনের লেখা 'পনেরোই আগষ্ট' পুস্তক এবং ঐতিহাসিক গোলাম আহমাদ মোর্তজার লেখা 'বজ্রকলম 'পুস্তক দ্রষ্টব্য)।

নয়া দিল্লির আইনসভায় বোমা নিক্ষেপ করার উদ্দেশ্য কিন্তু মানুষ হত্যার জন্য নয়। এটি ছিল প্রধানত প্রচারের জন্য। সহযোদ্ধা বঙ্গের বর্ধমানের বটুকেশ্বর দত্তকে নিয়ে পাঞ্জাবী ভগৎ সিং নয়া দিল্লির কেন্দ্রীয় সংসদ ভবনে ১৯২৯ সালের ৮ইএপ্রিল বোমা ফাটালেন। পরিকল্পনা মোতাবেক তারা সেখানে দুটি বোমা ফেলেন, তবে এতে কারো কোনো ক্ষতি হয়নি। ভগৎ সিংহের বক্তব্য ছিল 'বধিরকে শোনাতে উচ্চকণ্ঠ প্রয়োজন’। বটুকেশ্বর দত্ত ও ভগৎ সিং সেখানে বিপ্লবের ইস্তাহার ছড়িয়ে দেন নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে, স্লোগান দেন এবং শান্তভাবে গ্রেপ্তার বরণ করেন। ভগৎ সিংয়ের এরূপ বিপ্লবী ঘটনার পর থেকে সারা ভারতে হসরত মোহানীর ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।

ভারতের প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা রাজপুত রাই(১৮৬৫-১৯২৮)যিনি পাঞ্জাব কেশরী নামেও পরিচিত ছিলেন; তিনি সাইমন কমিশনের প্রতিবাদে আয়োজিত মিছিলে নেতৃত্বে দেন।তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশী নির্যাতনের ফলে তিনি নিহত হন। তার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশে ১৯২৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর অজ্ঞাতপরিচয় বিপ্লবী যুবকদের গুলিতে খুন হন পুলিশের ডিএসপি জে পি সন্ডার্স(J P Saunders)। ওই দিনই বিকেলে লাহোরের আনারকলি থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়। সেই এফআইআর-এ ভগৎ সিংয়ের নাম ছিল না। ছিল না রাজগুরু এবং সুখদেবের নামও। 'অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারী' শব্দগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল। অথচ এই এফআইআর-এর ভিত্তিতে মামলা শুরু হয় এবং বেআইনীভাবে আদালত ফাঁসির রায় ঘোষণা করে। ১৯৩১ সালের ২৪ মার্চ রায় বলবৎ করার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে তার এক দিন আগেই গোপনে ১৯৩১ সালের ২৩ মার্চ ভগৎ সিং (১৯০৭-১৯৩১), সুখদেব (১৯০৭-১৯৩১) ও রাজগুরুকে (১৯০৮-১৯৩১) ফাঁসি দেয়া হয়। ধর্মীয় রীতি না মেনেই তাদেরকে নদী তীরে নিয়ে দাহ করা হয়।

বিপ্লবী ভগৎ সিংহকে বলা হয় শহিদ-ই-আজম। ভগৎ সিংয়ের জন্ম ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের লায়ালপুরে। সুখদেব থাপার-এর জন্ম ১৯০৭ সালের ১ই মে পাঞ্জাবের লুধিয়িানায় আর রাজগুরুর জন্ম ১৯০৮ সালের ২৪ আগস্ট বোম্বের খেদ এলাকায় এক মারাঠি ব্রাহ্মণ পরিবারে। খেদ এলাকাটি পরে রাজগুরুর নামে নামকরণ করা হয় রাজগুরুনগর।

আইন সভায় বোমা নিক্ষেপকারী ভগৎ সিংয়ের সহযোগী বটুকেশ্বর দত্ত জেল খেটে অবশেষে মুক্তি পান। তিনি ১৯৬৫ সালের জুলাই মাসে মৃত্যুবরণ করেন।

সৈয়দ ফজল উল হাসান ওরফে হসরত মোহানী ১৯০৪ সালে জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন।পরে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং ১৯১৯ সালে দলের সভাপতির পদ লাভ করেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবিতে বেশ অবদান রেখেছিলেন। তিনি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সমর্থক ছিলেন। পাকিস্তান আন্দোলনে তিনি প্রচুর কাজ করে পাকিস্তান অর্জনে অবদান রেখেছেন। ভারত ভাগের আগে হসরত মোহানী সোভিয়েত ইউনিয়নের মত ফেডারেল রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। তার প্রস্তাব ছিল ভারতে ৬টি স্টেট নিয়ে ফেডারেল রাষ্ট্র গঠিত হোক। তার প্রস্তাবিত রাষ্ট্রগুলো ছিল-

১. পূর্ব পাকিস্তান,
২. পশ্চিম পাকিস্তান,
৩. সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া,
৪. দক্ষিণ-পূর্ব ভারত,
৫. দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত,
৬. হায়দরাবাদ।

হসরত মোহানী ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের টিকেটে উত্তর প্রদেশে প্রাদেশিক পরিষদে এবং দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ভারত ভাগের পর ভারতেই থেকে যান, আর পাকিস্তানে যাননি। তিনি ভারতের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন। তিনি যখন দেখলেন যে সংবিধানের খসড়াতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের প্রতি ন্যায় বিচার করা হয়নি তখন খসড়া কপিতে তিনি তখন স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। তিনি সব সময় সাদাসিধে ভাবে চলাফেরা করতেন। তিনি সরকারি বাসায় থাকতেন না। সরকার থেকে তিনি কোনো সুযোগ সুবিধে নিতেন না। তিনি টোঙ্গায় চড়ে চলাচল করতেন। তিনি রেলে চলাচল করার সময় তৃতীয় শ্রেণিতে যাতায়াত করতেন। তৃতীয় শ্রেণিতে তিনি কেন চলাচল করছেন কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলতেন, চতুর্থ শ্রেণি নেই বলে তৃতীয় শ্রেণিতে চলাচল করি। তিনি হজ্ব করতে অনেকবার মক্কায় গমন করেছেন।

কবি হসরত মোহানী ১৯৫১ সালের ১৩ মে লখনৌ শহরে মৃত্যুবরণ করেন।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us