গোল্ডেন মনির নিয়ে নতুন তথ্য!

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Nov 22, 2020 08:13 pm
গোল্ডেন মনির

গোল্ডেন মনির - ছবি : সংগৃহীত

 

ঢাকার একটি বাড়িতে বড় ধরণের অভিযান চালিয়ে একজন ব্যবসায়ীকে আটকের পর র‍্যাব তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেছে- অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও বিদেশি মুদ্রা রাখার অভিযোগে।

মনির হোসেন নামে এই ব্যক্তিকে একদিন নিজেদের হেফাজতে রাখার পর আজ (রবিবার) পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে র‍্যাব। পুলিশ তাকে আদালতে পেশ করে রিমাণ্ড চাইলে আদালত এক সপ্তাহের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছে বলে জানা যাচ্ছে।

র‍্যাবের বরাতে 'গোল্ডেন মনির' নামে পরিচিত এই ব্যক্তিকে গতকাল (শনিবার) ধরার পর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে তুলকালাম হচ্ছে। তাকে নিয়ে করা সংবাদগুলো ভাইরাল হয়ে গেছে।

স্বর্ণ চোরাচালান, একাধিক অবৈধ বিলাসবহুল গাড়ি, জালিয়াতির মাধ্যমে নামে বেনামে শত শত প্লট ও ফ্লাটের মালিকানা অর্জন - এরকম নানাবিধ অপরাধের ফিরিস্তি পাওয়া যাচ্ছে মি. হোসেনের বিরুদ্ধে।

যদিও থানায় করা আনুষ্ঠানিক মামলায় তার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগের কোন উল্লেখ নেই। বাকী অভিযোগুলোর ব্যাপারে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলছে র‍্যাব।

রাজনীতিক অঙ্গণের ক্ষমতাধরদের সাথে ওঠাবসা ও পৃষ্ঠপোষকতা তিনি করতেন, এমন তথ্যও দিচ্ছে র‍্যাব।

অথচ শনিবারের আগে এই 'গোল্ডেন মনির'-এর নাম কখনোই শোনা যায়নি।


কে এই মনির হোসেন?
র‍্যাবের দেয়া তথ্য, উনিশশো নব্বইয়ের দশকে ঢাকার গাউসিয়া মার্কেটে সেলসম্যান ছিলেন মনির হোসেন।

সেখান থেকে তৈজসপত্র ব্যবসায় যান হোসেন এবং তারপর তিনি শুরু করেন লাগেজ ব্যবসা। বিদেশ থেকে সুটকেস বা লাগেজে করে কর ফাঁকি দিয়ে নানা পণ্য বাংলাদেশে এনে বিক্রি করতেন তিনি। ধীরে ধীরে স্বর্ণ চোরাচালানে হোসেন জড়িয়ে পড়েন এবং বিত্তশালী হয়ে ওঠেন, বলছে র‍্যাব।

এরই একপর্যায়ে ঘনিষ্ঠ মহলে 'গোল্ডেন মনির' নামে পরিচিত হতে শুরু করেন তিনি, বলছে র‍্যাব।

অবশ্য র‍্যাবের দেয়া তথ্যের বাইরে এখন পর্যন্ত মনির হোসেন সম্পর্কে আর তেমন কিছু জানা যাচ্ছে না।

হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগসমূহের মধ্যে স্বর্ণ ব্যবসা খুব জোরেসোরে আলোচিত হলেও বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি একটি বিবৃতি দিয়ে বলছে, হোসেন কখনো স্বর্ণের ব্যবসার সাথে জড়িতও ছিলেন না।

'সমিতির সাথে তার কখনোই কোনো যোগযোগ বা সম্পৃক্ততা ছিল না', বলা হচ্ছে বিবৃতিতে।

জুয়েলারি সমিতির সভাপতি এনামুল হক খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, 'গোল্ডেন মনির' নামটি তিনি কখনোই শোনেননি। অন্য স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কেউ তাকে চেনেন বা তার নাম কখনো শুনেছেন এমনটিও তার জানা নেই।

খান বলেন, গতকালের শোরগোলের পরই তিনি খোঁজখবর করে জানতে পেরেছেন যে, মনির হোসেন দেড় দশক আগে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে একটি দোকান কিনেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ৭/৮ মাস পরেই তা বেচে দেন।

র‍্যাবের অভিযোগ ও তিন মামলা :
র‍্যাব বলছে, স্বর্ণ চোরাচালান ছাড়াও রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশে দেশে অসংখ্য প্লটের মালিক হয়েছিলেন মনির।

অবশ্য এগুলো এখনো অভিযোগ পর্যায়েই আছে। র‍্যাব বলছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো অভিযোগ তদন্ত করার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

র‍্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বিবিসিকে বলছেন, একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব অভিযান চালিয়েছিল মনির হোসেনের বাড়িতে। তবে কী তথ্য এবং কোন গোয়েন্দা সংস্থা তা খোলাসা করে বলেননি তিনি।

মেরুল বাড্ডায় মি. হোসেনের মালিকানাধীন একটি বাড়িতে রাতভর অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, বিদেশি মুদ্রা, বহু স্বর্ণালংকার, কয়েকটি বৈধ কাগজপত্রহীন গাড়ি, বিদেশি মদ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র‍্যাব।

উদ্ধারকৃত মালামালের যে ছবি পাওয়া যাচ্ছে র‍্যাবের কাছ থেকে, তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি বিদেশি অটোমেটিক পিস্তল, একাধিক বিদেশি মদের বোতল বহু দেশি মুদ্রার বাণ্ডিল, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বহু অলংকার, কয়েকটি ল্যাপটপ এবং কিছু স্টাম্প-সিল।

র‍্যাব জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে র‍্যাবকে মনির হোসেন সম্পর্কে তথ্য দেয়া হলে তারা সেসব তথ্য যাচাই বাছাই করে তার বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

তবে গোয়েন্দা সংস্থাটি কত দিন আগে থেকে মনির হোসেন সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছিল, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি র‍্যাব।

র‍্যাব বলছে মনির হোসেনের ফৌজদারি অপরাধগুলোর ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় তিনটি মামলা করেছে তারা।

অন্য যেসব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, দুর্নীতি দমন কমিশন বা সংশ্লিষ্ট কোন সংস্থা অথবা ব্যক্তি এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ আনেনি মনির হোসেনের বিরুদ্ধে।

র‍্যাবের করা মামলাতেও সেসবের কোনো উল্লেখ নেই।

র‍্যাব বলছে, তারা একটি গোয়েন্দা সংস্থার মারফতে এসব অপরাধের ব্যাপারে জেনেছে।

এগুলো নিয়ে এখন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে তদন্তের অনুরোধ জানানো হবে।

আশিক বিল্লাহ বলছেন, "অবৈধ উপার্জনের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন, অবৈধভাবে গাড়ির ব্যবসা করা ও অবৈধ গাড়ি ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, অর্থ পাচারের অভিযোগের জন্য পিআইডি'র মানি লন্ডারিং ইউনিটের কাছে এবং কর ফাঁকির বিষয়ে রাজস্ব বিভাগকে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ জানাবো আমরা।"

সূত্র : বিবিসি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us