চাপে নয় নিজ থেকে শিখতে হবে

রহমান মৃধা | Sep 04, 2022 06:49 am
চাপে নয় নিজ থেকে শিখতে হবে

চাপে নয় নিজ থেকে শিখতে হবে - ছবি : সংগ্রহ

 

আমি ছোটবেলা থেকেই গান গাইতে পছন্দ করি, কিন্তু কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারি না। ছোটবেলায় খুবই শখ ছিল গান শেখার। কিন্তু তেমন কোনো অনুপ্রেরণা পরিবার থেকে পাইনি। যার ফলে গান গাইতে মানা ছিল না ঠিকই তবে, বাদ্যযন্ত্রসহ সঠিকভাবে গান শেখা এবং নিয়মিত চর্চা করার সুযোগ আসেনি। লেখাপড়া করতে হবে এটাই উদ্দেশ্য। অন্য সব চিন্তাভাবনা মাথায় ভুরভুর করে ঘুরলেও সেটা উপস্থাপন করার হিম্মত কখনো হয়নি। লেখাপড়ার বাইরেও যে জগত রয়েছে এবং সে জগতের মধ্যেও যে আনন্দফুর্তি বা ভালো সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এটা ভাবাও ছিল পরিবার তথা সমজের চোখে শুধু পাপ নয় যাকে বলে শতভাগ মহাপাপ।

কিন্তু আজকের যুগে আমার মনে হয় না বিষয়টি ততো জটিল, মানে সত্যি সত্যি যদি কেউ খেলাধুলা করতে বা গান বাজনা শিখতে চায় সেটা সম্ভব, তবে লেখাপড়া ছেড়ে এসব করা যাবে না। মানে লেখাপড়ার প্রাধান্য প্রথমে তারপর সময় থাকলে বাকি সব করা যাবে, এমনটি বর্তমান সমাজ তথা রাষ্ট্রের নিয়ম কানুন বললে ভুল হবেনা এবং এটা যে শুধু বাংলাদেশে তা নয়, এটা গোটা বিশ্বে এমনকি সুইডেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এখনো শিশু শিক্ষা থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত একই অবস্থা বিশেষ করে বাংলাদেশে। আমি কী হতে বা কী করতে চাই সেটা নয় বরং কী হওয়া বা করা উচিত সেটাই মুখ্য উদ্দেশ্য এবং তা নিয়ন্ত্রিত হয় পরিবারের মাধ্যমে। যার ফলে ফলাফল দাঁড়ায় গিয়ে অনেকটা লোহার মতো শক্ত পদার্থের মতো। লোহা যেমন চাপে এবং তাপে তার রূপ পরিবর্তন করে আমাদের জীবনেরও এমনটি পরিবর্তন হয়ে থাকে। এখন লোহা কথা বলতে পারে না, প্রতিবাদ করতে পারে না কিন্তু আমরা পারি সত্ত্বেও কিছু করার নেই, তবে ভাবনায় থেকে যায়, যার ফলে আমাদের ভাবনার ভাণ্ডারেও এসব চাপ প্রভাব ফেলে এবং আমরা নানা চিন্তার মাঝে হাবুডুবু খেতে খেতে বড় হই। জীবনে ধাক্কা খাই কখনো ধাক্কা কাটিয়ে উঠি কখনও উঠি না ইত্যাদি।

আমার চলার পথে অনেকবার ধাক্কা খেয়েছি। কারণ, জীবন চলার পথে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। আর বাধা যদি আসতেই থাকে আর আমি যদি হারতেই থাকি তাহলে ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত করে কিছুই করতে বা বলতে পারা কঠিন হয়ে পড়ে। আমি জানি, জীবনের এই গতিশীল সময় নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন আছে। সেদিক থেকে এটা আমার কাছে খুব যে অপ্রত্যাশিত মনে হচ্ছে, তা নয়।

জীবন আমার অথচ চাপ এবং তাপ অন্যের, এটাই সবচেয়ে বড় চালেঞ্জ। প্রশ্ন হতে পারে সে আবার কী এবং আমি কী বোঝাতে চাচ্ছি? একটি উদাহরণ দেই। যেমন ধরুন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেছে প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের সঙ্গে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এসময় দলের মধ্যে অনেক টেনশন কাজ করছে। ক্রিকেটাররা যখন নিজেদের মতো চিন্তা করতে পারে না, তখন এটা হয়। কোচিং বা লিডারশিপ অথবা সবার থেকে একটা চাপ আসে। গত ৮ থেকে ১০ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিজেদের মতো করে ভাবতে পারেনি। কারণ, বোর্ড তাদের কথা শোনায়, ডিরেক্টর অব ক্রিকেট কথা শোনায়, কোচ শোনায় এমনকি দর্শকও শোনায়।

যদি ক্রিকেটারদের প্রতি পদে পদে বলে দেয়া হয় কীভাবে কী করতে হবে, তাহলে ওরা শিখবে কিভাবে? ক্রিকেটাররা নিজেরা ভাবতে পারে না। কারণ, সব সময় তাদের বলে দেয়া হয় কী করতে হবে। এটাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ক্রিকেটাররা তাদের মতো কিছু ভাবতে পারে না, করতে পারে না। ঠিক এমনটি ঘটে চলছে দেশের সব সেক্টরে, তার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্যতম। সংসদের একই অবস্থা, প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন তাই, বাকি সব তেল মারা ছাড়া আর কিছুই করে না ইত্যাদি।

আমি এটাও বলছি না যে সবসময় সবকিছু একদমই তাদের মতো করে ছেড়ে দিতে হবে, তবে চিৎকার-চেঁচামেচি করে খুব একটা লাভ হয় না। যখন কেউ ভুল করে, তখন বাজেভাবে সমালোচনা করলে ক্রিকেটারদের যেমন সেরাটা পাওয়া যায় না ঠিক অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। আমি মনে করি ক্রিকেটাররা ভুল করবে, তাদের সেটা থেকে শিখতে হবে। সে জন্য নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে। কিন্তু তারা সেটা যদি করতে না পারে তখনই কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হয়। যদি তাদের সারাক্ষণ পরামর্শের ওপর রাখা হয়, ধমক দেয়া হয় তখন ফলাফল ভালো আসে না। এটা যে একদিক থেকে আসে, তা নয়। চারদিক থেকেই আসে। যে কারণে নিজেদের ক্রিকেটীয় জ্ঞান বাড়ে না। নিজেরা চিন্তা করতে পারে না। ক্রিকেটাররা এতে এতই অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে সবসময় এখন অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। যদি লক্ষ্য করি দেখা যাচ্ছে পুরো দেশের সর্বত্রই একই অবস্থা যেমন একটি জ্বলন্ত প্রমাণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনি সারাক্ষণ ভারত এবং চীনের কাছে দৌড়ের উপর আছেন। নিজ থেকে কিছু করা বা বলার দক্ষতা তৈরি করতে ব্যর্থ কারণ সারাক্ষণ অন্যের নেতৃত্ব মেনে চলতে চলতে এমনটি হয়েছে।

আবার ধরুন একজন সৃজনশীল কোচকে যদি সারাক্ষণ চাপ দেয়া হয়, সে কী করবে বা কী বলবে, তাহলে নামেমাত্র একজন কোচ রাখার কী দরকার থাকতে পারে? যেমন বলা হলো খেলোয়াড়দের সারাক্ষণ ধমকাতে হবে। তাদের উপর কঠোর হতে হবে। এভাবেই নাকি ক্রিকেটারদের সঙ্গে সব সময় আচরণ করা উচিত। আমি নিশ্চিত, আগেও অনেক কোচ একই কাজ করেছে। কিন্তু আগের কোচরাও টি-টোয়েন্টিতে কিছু করতে পারেনি। যাইহোক ক্রিকেটকে একটি উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরলাম যাতে করে বিষয়টি বুঝতে সহজ হয়। প্রাথমিকভাবে, এভাবেই তৈরি করা হয়েছে দেশের পরিকাঠামো।

দায়িত্ব নেয়া শিখতে হবে এবং জবাবদিহিতা থাকতে হবে। যার যা খুশি তাই করা যাবে না। একই সাথে পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে, সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে দরকারে। আমি সারাদিন লিখতে পারব একের পর এক উদাহরণসহ, কিন্তু লাভ হবে না যদি সেটা বোধগম্য না হয়, তবে যদি একটি উদাহরণ সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায় তাহলেই অনেক কিছু বুঝতে সহজ হয়। মূলত ক্রিকেটের বর্তমান পরিস্থিতিই বলতে গেলে দেশের সর্বাঙ্গীন প্রতিচ্ছবি যার ফলে ক্রিকেটের সমস্যাটি তুলে ধরলাম যাতে করে অন্যান্য সমস্যার পেছনে যে মূল কারণগুলো রয়েছে তা চিহ্নিত করতে সহজ হয়।
আমি নিজে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, যেমন প্রত্যেকেই যদি তার নিজ নিজ জায়গা থেকে চেষ্টা করে এবং পরিবর্তিত হয় তবে চাপ সৃষ্টি করার দরকার নেই। পৃথিবীর সর্বত্রেই সমস্যা আছে, সমস্যা থাকবে আমাদের কাজ হবে সমাধান করা এবং নতুন নতুন চালেঞ্জের মোকাবেলা করার মন মানসিকতা তৈরি করা। কারণ আমরা যেমন আছি তেমন থাকতে চাইনা। আমরা ভালো থেকে আরো ভালো হতে চাই। You can only understand my devotion if you share my passion.

লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন
rahman.mridha@gmail.com

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us