বায়বীয় পিএইচডি ডিগ্রির কথকতা

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন | Nov 09, 2022 03:50 pm
বায়বীয় পিএইচডি ডিগ্রির কথকতা

বায়বীয় পিএইচডি ডিগ্রির কথকতা - ছবি : সংগ্রহ

 

পিএইচডি (Doctor of Philosophy) স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি। শিক্ষক, গবেষক ও স্কলারদের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। বহু শ্রম, সাধনা, তিতিক্ষা ও অধ্যবসায়ের ফলে এই ডিগ্রি অর্জিত হয়। এ ডিগ্রির জন্য গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ও বহিঃপরীক্ষক নিয়োগ, অ্যালিজেবিলিটি টেস্ট, কোর্স ওয়ার্ক, অ্যাকাডেমিক সেমিনার ও মানসম্মত অভিসন্দর্ভ রচনা অপরিহার্য। পুরো প্রক্রিয়াটি বোর্ড অব অ্যাডভান্স স্টাডিজ, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের অনুমোদনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। যেন তেন অভিসন্দর্ভ লিখলে হয় না। যে ভাষায় থিসিস রচিত হবে তার ভাষাশৈলী ও বাক্যবিন্যাস আন্তর্জাতিক মানের হওয়া বাধ্যতামূলক। থিসিসে নতুন তথ্য, ফ্যাক্ট উদ্ভাবন করতে হয় এবং ফলাফল তুলে ধরতে হয় অথবা উদ্ভাবিত তথ্য উপাত্তকে ক্রিটিক্যালি এক্সামিন করতে হয় এবং মতামত দিতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে সুপারভাইজার বিদেশী বিশেষজ্ঞ পরীক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন গবেষক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে থাকেন। ডক্টরাল ডিগ্রি অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার। গবেষক তার নামের শুরুতে ড. বা ডক্টর লিখে থাকেন। এটা স্বীকৃত রেওয়াজ। শিক্ষিত মানুষও মনে করে ডক্টরাল ডিগ্রিধারী সংশ্লিষ্ট ফিল্ড ও ডিসিপ্লিনে বিশেষজ্ঞ। অনেক ডিগ্রিধারী নামের আগে ডক্টর লেখাকে প্রয়োজনীয় মনে করেন না। ভাবেন পৈতৃক নামই যথেষ্ট। এ কথা মনে রাখা দরকার পিএইচডি ডিগ্রি থাকলেই যে, তিনি বিদ্যাসাগর হয়ে যাবেন এমন নয়। বহু মেধাবী ও ধীমান ব্যক্তির পিএইচডি ডিগ্রি নেই। তিনি হয়তো এ ডিগ্রি সময়মতো না নেয়ার আর সুযোগ হয়নি অথবা নেয়ার সুযোগও অবারিত ছিল না।

সরকারি কলেজের শিক্ষকদের জন্যও পিএইচডি ডিগ্রি বেশ কাজে আসে। পদোন্নতি ও ভালো জায়গায় পদায়নের জন্য এটা নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। সরকারি কলেজের কোনো শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলে ডিগ্রি অ্যাওয়ার্ড সংক্রান্ত কাগজপত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরে জমা দিতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যাচাই ও নিরীক্ষা শেষে শুদ্ধ পেলে চিঠি ইস্যু করে নামের আগে ডক্টর লেখার অনুমতি প্রদান করেন। ডিগ্রি অনুমোদিত হলেও এই প্রক্রিয়ার আগে সরকারি কলেজের শিক্ষকদের ডক্টর লেখার সুযোগ নেই। এমপিওভুক্ত কলেজের শিক্ষকদের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি কিছুটা কাজে আসে। কলেজ থেকে ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নিয়ম অনুযায়ী সহযোগী অধ্যাপকের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি বাধ্যতামূলক। সহযোগী অধ্যাপক পদে পদায়িত হলেও আর্থিকভাবে তারা লাভবান হন না। কারণ সরকার এমপিওভুক্ত কলেজে সহযোগী অধ্যাপক পদের জন্য কোনো স্কেল রাখেনি। কলেজ গভর্নিং বডি ইচ্ছে করলে কলেজ তহবিল থেকে বেতন বৃদ্ধি করতে পারে। এমপিওভুক্ত স্নাতক বা স্নাতকোত্তর কলেজে প্রফেসরের কোনো পদই রাখা হয়নি। এটা এক লজ্জাজনক বৈষম্য। শিক্ষক সমিতিগুলো বারবার দাবি জানালেও ৫০ বছরে কোনো সরকার দাবি পূরণ করেনি। পুরো দেশের উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষাকার্যক্রম এমপিওভুক্ত বা বেসরকারি কলেজের অধীনে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি পদোন্নতির পূর্বশর্ত। আগে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে নির্ধারিত সময় শিক্ষকতা করলে বা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি নিলে প্রফেসর হওয়া যেত। এখন নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রফেসর হওয়ার জন্য এই ডিগ্রি বাধ্যতামূলক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকরা বাড়তি আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। পিএইচডি ডিগ্রিধারী কেউ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলে তিনি তিনটি অগ্রিম বেতন বৃদ্ধির সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া চাকরিরত কোনো শিক্ষকের যদি পিএইচডি ডিগ্রি থাকে, তিনিও তার গ্রেড অনুযায়ী একই সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন।

অন্য লেখকের ভাষা ও বক্তব্য পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা রেফারেন্স ছাড়াই নিজের নামে চালিয়ে দেয়ার একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা বেশ লক্ষণীয়। এটা প্লেজিয়ারিজম নামে খ্যাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। রেফারেন্স দিলেও অন্যের ভাষা ও বক্তব্য কী পরিমাণ নেয়া যাবে তারও একটি পরিসীমা আছে। আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী একজন গবেষক তার অভিসন্দর্ভে ২০-২৫ ভাগ সিমিলারিটি রাখলে তা গ্রহণযোগ্য। এর চেয়ে বেশি হলে চৌর্যবৃত্তি হিসেবে ধরা হয়। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সফটওয়্যার ব্যবহার করে বুদ্ধিবৃত্তিক চৌর্যবৃত্তির পরিমাণ নির্ধারণ করে থাকে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ জাতীয় সফটওয়্যারের সাহায্য নিতে পারে। এটা কোন কঠিন কাজ নয়।

ভুয়া পিএইচডি নিয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো: আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা আছে। সেগুলো ধরা পড়লে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা থিসিস জমা দেয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমতি নিতে হয়। এখন প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে, সেখান থেকেও সহজে ভুয়া বা জাল পিএইচডি অনায়াসে ধরা পড়ে যায়। আমরা এসব বিষয়ে এখন খুব সচেতন। ভুয়া পিএইচডির বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি। সফটওয়ার ব্যবহার করছি।

ডক্টরেট ডিগ্রি মর্যাদার প্রতীক হওয়ায় এক শ্রেণীর আমলা, সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করার উৎসাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমলা ও আর্মি জেনারেলদের নিজস্ব পদের মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও তারা ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। এতে এই ডিগ্রির মাহাত্ম্য অনুধাবন করা যায়। পেশার ক্ষেত্রে এই ডিগ্রি সহায়ক। তারা দেশী বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। জি টু জি যেসব স্কলারশিপ আসে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন। ফলে বাংলাদেশে সেনাপ্রধান, পুলিশপ্রধান ও সচিবরা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে সমর্থ হচ্ছেন। এটা ইতিবাচক অগ্রগতি। সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যেমন সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে আর্মি অফিসাররা নিয়োগ পেয়ে থাকেন তেমনি পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের নিয়োগের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

ডক্টরেট ডিগ্রির মর্যাদা উপলব্ধি করে একশ্রেণির ধান্ধাবাজ লোকজন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ভুয়া সনদ কিনে নামের আগে ডক্টর লেখা শুরু করেন। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে ভুয়া সনদ বেচাকেনার সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা ভুয়া বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বিক্রি করে চড়া দামে। এই পণ্যের মধ্যে আছে এলএলএম, এমবিএ, এমবিবিএস ও পিএইচডি সনদ। এখানে কোনো পড়া লেখা, গবেষণা ও থিসিস রচনা কিছু করতে হয় না। সুপারভাইজারের প্রয়োজন পড়ে না। সব অনলাইনে সম্পন্ন হয়। গোটা সিস্টেমটাই বায়বীয়। অনলাইনে অর্জিত পিএইচডি ডিগ্রির কোনো বৈধতা নেই। মালিক তার গাধার জন্য পিএইচডি কেনার কৌতুক তো সমাজে প্রচলিত আছেই। লজ্জা ও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে সনদ কেনার দৌড়ে সচিব, কলেজ অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা, আইনজীবী ও করপোরেট ব্যবসায়ীরা এগিয়ে রয়েছেন। সরকার ইতোমধ্যে কিছু ভুয়া ডিগ্রিধারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুয়া ও মানহীন পিএইচডি দেয়ায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে ইউজিসি। তারপরও ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখনো কিনছেন পিএইচডি। আমেরিকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি ইউএসএ (বাংলাদেশ স্টাডি সেন্টার) বাংলাদেশে অন্যতম ছিল যদিও পাঁচ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি নেয়া ব্যক্তিরা এখনো তাদের ডিগ্রি ব্যবহার করছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, শুধুমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে পাঁচ হাজারের বেশি ব্যক্তি পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুদক শুরুতে কাজ করলেও এখন তেমন একটা অগ্রগতি নেই।

আমেরিকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি ইউএসএসহ অন্তত ৫৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে দেড় লাখ থেকে তিন লাখ টাকায় পিএইচডি ডিগ্রি বিক্রি করা হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বেশির ভাগই মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়াকেন্দ্রিক বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যালানিয়া, ইউনিভার্সিটি অব সালায়গন, ওপেন ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়া, দার্জি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন, নর্থ আম্ব্রিয়া ইউকে, হিলিয়েট ওয়ার্ক ইউনিভার্সিটি, গ্রিন ইয়ুথ, রয়েল রুথ অব কানাডা। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে বাংলাদেশে শাখা খুলে সনদ বাণিজ্য করে বিভিন্ন চক্র। ইউজিসি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা নামধারী অবৈধ প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ নেই। যদিও ইউজিসির মতামত ছাড়াই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সরকারি আমলা ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা এসব সনদ কিনছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখন যত্রতত্র এসব ডিগ্রি মিলে। ফলে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়া ব্যক্তিদের আগের মতো সম্মান নেই। শুধু তাই নয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শুধু বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত মুনাফার উদ্দেশ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পিএইচডির তত্ত্বাবধায়ক হচ্ছেন। পরবর্তীতে তারা এদের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন- এমন অভিযোগ আছে যা খুব দুঃখজনক। আমরা চাই, তদারকি করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ভুয়া পিএইচডি বা জালিয়াতির ব্যাপারে আরো সচেতন হবে এবং ব্যবস্থা নেবে (মানবজমিন, ঢাকা, ৬ অক্টোবর, ২০২০)।

প্রাইমএশিয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ ভুয়া পিএইচডিধারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, ভুয়া ডিগ্রি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কোনো সুযোগ নেই। এটি একদিকে যেমন অপরাধমূলক, অন্যদিকে গুণগত উচ্চশিক্ষারও অন্তরায়। কয়েকজন শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষস্থানীয়দের নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়। অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভায় গতকাল তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খুব দ্রুতই সেটি বাস্তবায়ন হবে (বণিকবার্তা, ২ অক্টোবর, ২০২২)।

বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে অবৈধভাবে পিএইচডি ডিগ্রি জালিয়াতির মাধ্যমে অর্জন করা হচ্ছে, এটি বন্ধ করা উচিত। এক রিটের শুনানিতে এ কথা বলেন হাইকোর্ট। পিএইচডি ও সমমানের ডিগ্রি কিভাবে অনুমোদন হয়, সেগুলো যথাযথ আইন মেনে হয় কি না তা জানতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি করেছেন হাইকোর্ট গত আগস্ট মাসে। আগামী তিন মাসের মধ্যে কমিটিকে নীতিমালা করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। ইউজিসির প্রতিবেদন মতে, দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব আইন, বিধিবিধান ও ব্যবস্থাপনায় পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। এ ধরনের ডিগ্রি প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কোনো ভূমিকা পালন করে না বা পালন করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে দেশে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তার মধ্যে ৯৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কমিশন থেকে দেশের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি বা সমমানের কোনো ডিগ্রির প্রোগ্রাম, কোর্স, সিলেবাস বা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়নি (জাগোনিউজ২৪ডট কম, ১৪ আগস্ট, ২০২৩)। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এমফিল ও পিএইচডি দেয়ার অনুমতি দিলে ডিগ্রির মান আরো অবনতি ঘটবে। এটা শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।

ভুয়া ডিগ্রি হাসিলের দৌরাত্ম্য বন্ধে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। ১. ভুয়া পিএইচডি সনদ বাতিল ২. সনদ ক্রেতা ও বিক্রেতাকে আইনের আওতায় আনয়ন ৩. এ সনদের বলে যেসব আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন, এগুলো ফেরত প্রদান ৪. ইউজিসি বা মাউশির অনুমোদন ছাড়া নামের আগে ডক্টর লেখা নিষিদ্ধকরণ ৫. বিশ্ববিদ্যালয়ে থিসিসের চৌর্যবৃত্তি বন্ধে অ্যান্টি প্লেজিয়ারিজম সফটওয়্যার প্রয়োগ ৬. গোয়েন্দা সংস্থা ও দুদকের মাধ্যমে ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রিধারী শনাক্তকরণ।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us