রাশিয়ায় ইসলামের আগমন ও বিস্তার

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন | Jan 31, 2021 04:31 pm
রাশিয়ায় ইসলামের আগমন

রাশিয়ায় ইসলামের আগমন - ছবি সংগৃহীত

 

সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনের পর রাশিয়ায় ইসলাম ক্রমশ বিস্তার লাভ করছে। ২১টি রিপাবলিক নিয়ে রুশ ফেডারেশন বা রাশিয়া গঠিত। ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের পর রাশিয়ায় সব ধর্ম ও ধর্র্মীয় কর্ম নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। মসজিদ, ধর্মীয় উপাসনালয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো হয়তো ভেঙে ফেলা হয় নয়তো অফিস বা গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নাস্তিক কমিউনিস্টদের নিবর্তনমূলক শাসনের ফলে রাশিয়ায় ইসলাম ধর্ম ৭০ বছর যাবত প্রকাশ্যে বিকশিত হতে পারেনি। ইসলামের শিক্ষা, প্রচার-প্রসার, দাওয়াত ও তাবলিগ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে। রুশ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুশাসন ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি পালন স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৯১ সালে ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন পাস হলে ইসলাম তার অন্তর্নিহিত সব শক্তি নিয়ে আবার জেগে ওঠে। বর্তমানে ১৪ কোটি ৬০ লাখ রুশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। কেবল মস্কোতেই ১০ লাখ। ইসলাম রাশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। প্রথম হলো অর্থোডক্স খ্রিষ্টান। ৯০ শতাংশ মুসলমান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী।

সপ্তম শতাব্দীতে ককেশাসের মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় ইসলামের আগমন ঘটে। ১৯১৭ সালের আগে রাশিয়ায় ১৫ হাজার মসজিদ ছিল। বিগত ২০ বছরে আট হাজার মসজিদ নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানী মস্কোতে আছে চারটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। পুরনো মসজিদ ভেঙে মস্কোয় গড়ে তোলা হয় ছয় তলাবিশিষ্ট স্থাপত্যশৈলীতে সুদৃশ্য এক মসজিদ কমপ্লেক্স। এর নাম মস্কো ক্যাথিড্রাল মসজিদ। এতে ১০ হাজার মানুষ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। আশপাশের সড়ক বন্ধ করে দিয়ে আড়াই লাখ মুসলমান ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। ১৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত মসজিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে নামাজের সুপরিসর স্থান, বিভিন্ন বড় ছোট হল ও মিলনায়তন, গ্রন্থাগার, মিউজিয়াম ও প্রদর্শনীর গ্যালারি। ২০১৫ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ও ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে সাথে নিয়ে রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এ মসজিদ কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন।

ইউক্রেন সীমান্তে কিছুদিন পরপর উত্তেজনা দেখা দিলেও রুশ ফেডারেশন নিরাপদ দেশ। অবশ্য পরিবর্তিত পরিস্থিতি মুসলমানদের অনুকূলে হলেও বেশ কিছু সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। বর্তমানে শত শত মুসলিম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও ধর্মীয় বিদ্যালয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিবন্ধিত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণে নতুন মসজিদ নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে কাজান ক্রেমলিনে নির্মিত কুল শরিফ মসজিদ অন্যতম। এটা রাশিয়ার বুকে মুসলিম রেনেসাঁর বড় প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। একই স্থানে একটি পুরনো মসজিদ ছিল যা ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী জার, আইভানের সেনাবাহিনীর হাতে বিধ্বস্ত হয় অতীতে। মস্কোর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত Poklonaja Gora নামক স্থানে একটি স্মরণীয় মসজিদ নির্মিত হয়। এতে প্রতিদিন রেকর্ডসংখ্যক মুসলমানের সমাগম ঘটে। স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রের রাজধানীগুলোতে যেখানে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ, বহু সংখ্যক নতুন মসজিদ গড়ে ওঠে। বিশেষ করে Bashkaristan-এর রাজধানী Ufa, Udmurtia-এর রাজধানী Izhevsk, Adygia-এর রাজধানী Maikop-এ গড়ে ওঠা মসজিদগুলো যেকোনো মানুষের নজর কাড়ে।

ইসলামী শিক্ষা ও বিজ্ঞানের ঐতিহ্য যদিও হারিয়ে গেছে তারপরও রাশিয়ার মুসলমানরা ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য প্রাণপণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। সৌদি অর্থ সহায়তায় ইতোমধ্যে কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। জার ও বলশেভিক শাসনামলে সরকার নিয়োজিত একজন মুফতি মুসলিম বিষয়াবলি দেখাশোনা করতেন। তিনি মূলত একজন সরকারি কর্মকর্তা। গর্বাচেভের ধর্মীয় স্বাধীনতা নীতির ফলে তাতারিস্তান, উত্তর ককেশাস ও মস্কোতে নতুন স্বাধীন মুফতির আবির্ভাব ঘটে। পরবর্তীতে শায়খ রাভিল জায়নুদ্দীনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় মুফতিদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল গঠিত হয়। কাউন্সিল সরকারি প্রতিষ্ঠান, কেন্দ্রীয় গণমাধ্যম, দেশ-বিদেশের ইসলামী সংগঠন ও সংস্থার সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বজায় রেখে চলে। সম্প্রতি ‘The Social Doctrine of Russian Muslims’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্য দলিল বেরিয়েছে। বর্তমানে তাতার, বাশকির, চেচেন ছাড়াও রাশিয়ার স্থানীয় অধিবাসীরা ব্যাপকভাবে পবিত্র কুরআনচর্চায় এগিয়ে এসেছেন। এটা রুশ সমাজে ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা রাখছে। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক রুশ মুসলিম হজ ও উমরাহ পালন করতে যান। ২০০৬ সালে ১৮ হাজার মুসলমান রুশ ফেডারেশন থেকে হজব্রত পালন করেন।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ, ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, সুদমুক্ত অর্থনীতির বিকাশ, হালাল ব্যবসার প্রচলন, ইসলামী সংবাদপত্র প্রকাশ, রেডিও-টিভি চ্যানেলের ব্যবহার এবং ইসলামী শিক্ষার প্রবর্তনের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক টিভি সংবাদ সম্মেলনে বলেন : ‘Islam is a great world religion rooted in the history of Russia. Islam and Christianity are very close, and our Government should support the Muslims organizations.’ অর্থাৎ ‘ইসলাম রাশিয়ার ইতিহাসের গভীরে প্রোথিত একটি বিরাট বিশ্বধর্ম। ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্ম অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আমাদের সরকার মুসলিম সংগঠনগুলোকে সহায়তা দিয়ে যাওয়া উচিত।’

শিক্ষা ব্যবস্থা
রাশিয়ায় ইসলামী শিক্ষার ইতিহাস বড়ই করুণ ও মর্মবিদারী। সমাজতান্ত্রিক সরকার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো দখল করে ফেললে বিদগ্ধ মুসলিম পণ্ডিতদের হয়তো হত্যা নয়তো কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। অধিকাংশ ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে কিছু কিছু ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। বলশেভিকরা এমন একটি নাস্তিক্যবাদী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন যা আধুনিক ইতিহাসে প্রথম। কেবল ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয় বরং সব ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকার বন্ধ করে দেয়। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় নাস্তিক্যবাদী রাজত্বের অবসান ঘটলে ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনরুজ্জীবিত হয়। বর্তমানে রাশিয়ার মুসলমানরা নানা অসুবিধা সত্ত্বেও ইসলামী শিক্ষা পুনঃপ্রবর্তনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষ শিক্ষকের অভাব আজো অত্যন্ত প্রকট। রাশিয়ার মুসলিম ছাত্রদের সুশিক্ষিত করার জন্য বিদেশী বিশেষায়িত পণ্ডিত ও উচ্চশিক্ষিত শিক্ষক দরকার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিদেশী শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি স্থানীয় মুসলমানদের নেই। অপর দিকে সাইবেরীয় অঞ্চলের তীব্র শৈত্যপ্রবাহসহ রূঢ় আবহাওয়ার কারণে বিদেশী শিক্ষকরা রাশিয়ায় আসতে আগ্রহী নন।

বর্তমানে রাশিয়ায় গড়ে উঠা গুরুত্বপূর্ণ ধমীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে রয়েছে মস্কো মুসলিম কলেজ, রাশিয়ান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কাজান মুহাম্মদিয়া মাদরাসা ও বুগুরুসলান মাদরাসা। এছাড়া দাগেস্তান ও ইঙ্গুশেতিয়ায় ছোট ছোট অনেক মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থায়িত্ব ও সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য মুসলিম উম্মাহর সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

জনসংখ্যার ক্রমাবনতি
রাশিয়ার জনসংখ্যা বহুবিধ কারণে ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে প্রতি বছর। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী নতুন শিশু জন্মের তুলনায় জনগণের মৃত্যুহার বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ। বর্তমানে রাশিয়ায় জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৬০ লাখে। ইদানীং ব্যাপক যুদ্ধ বা মহামারীর প্রকোপ না থাকা সত্ত্বেও কেন জনসংখ্যার ক্রমানবতি ঘটছে? এ প্রশ্ন একান্ত সঙ্গত। রাশিয়ার বেশির ভাগ জনগণ প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত নাস্তিক্যবাদী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীক্ষিত হওয়ার কারণে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস নেই এবং পরকালীন জীবনের ওপর তাদের আস্থা নেই। ফলে তাদের জীবন অনিয়ন্ত্রিত ও লাগামহীন। মাত্রাতিরিক্ত যৌন অসংযম, বিলাসিতা, মাদকাসক্তি ও ধূমপান তাদের জীবনীশক্তিকে নিঃশেষিত করে দিয়েছে। স্লাভ জনগোষ্ঠী অর্থাৎ রাশিয়ান, ইউক্রেনিয়ান, এবং বেলোরাশিয়ানদের মধ্যে চারিত্রিক অধঃপতনের মাত্রা অত্যধিক।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বেশির ভাগ জনগণ নিদারুণ অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত হয়। তাদের জীবনধারা সমস্যাসঙ্কুল হয়ে পড়ে। অনেকে আর্থিক টানাপড়েন সহ্য করতে না পেরে পাশ্চাত্যে পাড়ি জমায়। ১৫ লাখ ইহুদি উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় রাশিয়া ত্যাগ করে ইসরাইলে বসতি গড়ে তোলে। এসব বাস্তুত্যাগী ইহুদি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি নির্মম অমানবিকতা ও নির্দয় পৈশাচিকতার নজিরবিহীন তাণ্ডব চালায়। এর কারণ হচ্ছে এসব ইহুদি রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা এবং খোদাদ্রোহী সমাজে বেড়ে উঠার কারণে তাদের মাঝে মহৎ ও মানবিক গুণাবলির উন্মেষ ঘটেনি।

অপর দিকে রাশিয়ায় মুসলিম জনসংখ্যার হার ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে চলেছে। বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক মুসলিম গোষ্ঠী বিশেষতঃ তাতার, উত্তর ককেশাস ও দাগেস্তান বংশোদ্ভূত স্থানীয় জনগণের মাঝে জন্মহার বেশি। ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক মূল্যবোধ মেনে চলার ফলে রাশিয়ার মুসলমানদের জীবনধারা সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত। নৃতাত্ত্বিক অনেক স্লাভগোষ্ঠী সুস্থ জীবনধারার সন্ধানে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছেন।

নেতিবাচক প্রচারণা
ইঙ্গ-মার্কিন ইহুদিচক্র দুনিয়াব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে নেতিবাচক প্রচারণা ও মিডিয়া আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়ার মুসলমানরাও একই বৈরিতার শিকার। ১১ সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ‘টুইন টাওয়ার’ ধ্বংসের ঘটনায় রাশিয়ার সংবাদপত্র, রেডিও এবং টিভি চ্যানেলগুলো আমেরিকা ও ইহুদি প্রপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিষোদগার করতে থাকে। প্রচারণায় তাঁরা ‘ক্রুসেড’ ‘সভ্যতার দ্বন্দ্ব’ ‘ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’ ইত্যাকার শব্দসম্ভার বারবার ব্যবহার করতে থাকেন। মস্কোর জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘প্রাভদা’র (Komsomolskaya Pravda) প্রথম পাতায় প্রকাশিত একটি শিরোনাম ছিল- ‘Beat the Real Islam, Save the World’ অর্থাৎ ‘সত্যিকার ইসলামকে আঘাত করো, বিশ্বকে বাঁচাও’।

কতিপয় অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তা রাশিয়ার মুসলিম সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি করে অনুসন্ধান চালান এবং কাগজপত্র, দলিল-দস্তাবেজ পরীক্ষা করে দেখেন। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বহু মুসলিম সংগঠনের কার্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়। এহেন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার জুমা মসজিদের ইমাম ও খতিবরা সম্মিলিতভাবে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে সাক্ষাত করে ইসলামের শান্তিপূর্ণ চেতনা সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন। ২০০২ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইসলাম’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে তাকে দাওয়াত দেয়া হয়। রাজনৈতিক নেতারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ সমার্থক নয়, বরং পুরোপুরি উল্টো।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাধারণ মানুষ ইহুদি লবি ও মার্র্কিনপন্থী গণমাধ্যম দ্বারা এখনো প্রভাবিত। মুসলমানগণ সরকারি কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমের ইসলামবিরোধী প্রচারণার জবাবে সতর্ক এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইসলামের খিদমত ও সেবাব্রতকে সামনে রেখে পেশাদার সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যে মুসলিম সাংবাদিক ইউনিয়ন গঠিত হয়েছে। স্মর্তব্য, ১১ সেপ্টেম্বরের দুর্ঘটনা রাশিয়ার বহু মানুষের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। দাওয়াতি কর্মীরা এ সুযোগকে কাজে লাগাতে ভুল করেননি।

ভয়েস অব ইসলাম
মস্কোর অর্থোডক্স খ্রিষ্টান গির্জার প্রধান রাষ্ট্রপরিচালিত মস্কো রেডিওতে একটি ইসলামিক প্রোগ্রাম পরিচালনার ইচ্ছে পোষণ করেন যাতে বিপুল সংখ্যক রুশ মুসলমান তাদের নিজেদের ধর্ম সম্পর্কে সম্যক জানতে পারেন এবং রাশিয়ায় বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রুপের মধ্যে যাতে পারস্পরিক সম্পর্ক নিবিড় হয়। জান্নাত সার্জে মার্কোস নামক এক নও মুসলিমের তত্ত্বাবধানে ‘ভয়েস অব ইসলাম’ নামে মস্কো রেডিওতে একটি সাপ্তাহিক প্রোগ্রাম চালু করা হয়। ওই রেডিওর মাধ্যমে পবিত্র কুরআনের তাফসির, হাদিসের ব্যাখ্যা, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ইসলামের অবদান, ইসলামে সন্ত্রাসের স্থান না থাকা এবং বিভিন্ন জাতি, ভাষা ও ধর্মীয় গ্রুপের মাঝে সৌহার্দ্য সৃষ্টিতে ইসলামের ভূমিকা বিষয়ক প্রোগ্রাম নিয়মিত প্রচার করা হয়। এসব প্রোগ্রামে রাজনীতি বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পারদর্শী ইসলামী পণ্ডিতরা অংশগ্রহণ করে ইসলাম সম্পর্কে প্রচলিত ও প্রচারিত ভুল ধারণা অপনোদন এবং ইসলামের শাশ্বত সৌন্দর্য শ্রোতাদের মাঝে তুলে ধরেন।

ভয়েস অব ইসলামে অংশগ্রহণকারী পণ্ডিতরা মস্কো রেডিওর ছয় কোটি শ্রোতাকে এ কথা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, ইসলাম অধঃপতিত, সৃজনীশক্তিহীন ও সন্ত্রাসী কোনো ধর্ম নয়; বরং জীবন্ত, কার্যকর ও শান্তির ধর্ম। আইরিশ প্রোটেস্ট্যান্টরা যখন উত্তর আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে, বাস্করা যখন স্পেনে স্বাধিকার আদায়ে লড়াই করে অথবা তামিল টাইগাররা যখন শ্রীলঙ্কায় নিজেদের স্বাধীন ভূমির জন্য যুদ্ধ করে তখন কেউ তাদেরকে খ্রিষ্টান, ক্যাথলিক কিংবা হিন্দু সন্ত্রাসবাদী বলে না। পক্ষান্তরে মুসলমানরা যদি কোথাও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে তাদের ‘মুসলিম সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ইচ্ছাকৃত এ মিথ্যা প্রপাগান্ডার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ২০০ কোটি মুসলমানের মধ্যে ভীতি ও বিদ্বেষ ছড়ানো এবং মুসলিম দেশগুলোর সম্পদ লুণ্ঠনের ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখা।

অধিকন্তু ‘Islam Minber’, ‘All About Islam’ I ‘Svremenja Misl’ নামক সংবাদপত্র ও সংবাদ সাময়িকীর মাধ্যমে ইসলামী জীবনাচার, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রুশ জনগণের মাঝে তুলে ধরা হয়। সাম্প্রতিককালে রাশিয়ার মুফতি কাউন্সিল একটি ওয়েব সাইট খুলেছেন, যার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিপুল তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ করতে পারেন। ইমাম ভ্যালেরিয়া প্রখোভা নামক একজন রুশ মহিলা কর্তৃক অনুদিত পবিত্র কুরআন ও তার ধারাভাষ্য রাশিয়ার জনগণের মাঝে আল্লাহ তালার মহান বাণী অধ্যয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এটা রুশ ভাষায় লিখিত পবিত্র কুরআনের প্রথম নির্ভরযোগ্য তরজমা ও তাফসির। এ রুশ মহিলা একজন আরবকে বিয়ে করে দীর্ঘদিন দামেস্কে ছিলেন। সিরিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি পবিত্র কুরআনের অনুবাদ ও ভাষ্য রচনায় তাকে প্রভূত সহায়তা দান করেছেন। এটা সন্দেহাতীতভাবে ইসলামের ক্রমবিকাশ ধারায় বিরাট অগ্রগতি। সমাজতত্ত্ববিদরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, জনসংখ্যা বিষয়ক এ প্রবণতা যদি আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৫০ সালে রাশিয়ায় মুসলিম জনসংখ্যার হার ১৫ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫১ শতাংশে উন্নীত হবে। বর্তমানে রাশিয়ান ফেডারেশনে মুসলমানদের সংখ্যা দুই কোটি। রাশিয়ার সমাজজীবনের গভীরে ইসলামের শেকড় প্রোথিত (মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ জার্নাল, মক্কা)

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক

drkhalid09@gmail.com

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us