উত্তরাখন্ড ট্র্যাজেডি : ভারতের মারণ ফাঁদ

জি. মুনীর | Feb 14, 2021 05:03 pm
উত্তরাখন্ড ট্র্যাজেডি : ভারতের মারণ ফাঁদ

উত্তরাখন্ড ট্র্যাজেডি : ভারতের মারণ ফাঁদ - ছবি সংগৃহীত

 

গত সপ্তাহের লেখায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মেরুবরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠ উপরে ওঠে বাংলাদেশের ওপর, প্রধানত উপকূলীয় অঞ্চলে এর ভয়াবহ প্রভাবের ওপর আলোকপাত ছিল। এই লেখাটি প্রকাশের দিনেই জানা গেল, পরিবর্র্তিত জলবায়ু ও এলোপাতাড়ি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিরূপ প্রভাবে ভারতের উত্তরাখন্ডে সৃষ্টি করেছে এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি। জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি হিমবাহে ফাটল সৃষ্টি হয়ে উত্তরাখন্ডের ধউলিগঙ্গা ও অলকানন্দা নদী বন্যার ব্যাপক পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এই পানির প্রবল স্রোতে নির্মীয়মান ঋষিগঙ্গা বিদ্যুৎ প্রকল্প ও আশপাশের বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খবরে প্রকাশ, এই বিয়োগান্তক আকস্মিক ঘটনায় কমপক্ষে ২০৩ জন নিখোঁজ রয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের বিরতিহীন উদ্ধারকাজ অব্যাহত রেখেছে। ওরা এ পর্যন্ত ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেচামোলির তপোবনের কাছাকাছি এলাকার প্রথম টানেল থেকে ১৫ জনকে উদ্ধার করত সক্ষম হয়েছে। দ্বিতীয় টানেলে উদ্ধারকাজ তখনো চলছিল। বলা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হিমবাহের বরফ গলে তুষার লেকের পানি আকস্মিকভাবে বেড়ে গিয়ে এই ট্র্যাজেডির জন্ম দিয়েছে।

এ ধরনের ট্র্যাজেডি এরই মধ্যে ব্যাপক আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গ্লাসিওলজিস্টরা এ ধরনে ঘটনাকে GLOF, অর্থাৎ glacial lake outburst flood নামে অভিহিত করছেন। এ ধরনের গ্ল্যাসিয়েল লেক থেকে সৃষ্ট বন্যা ভাটি অঞ্চল বা দেশে অসময়ের বন্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই ট্র্রাজেডি প্রমাণ করে- জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হিমালয় অঞ্চলের বরফ গলে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। এবার উত্তরাখন্ডের এই বন্যার ট্র্যাজেডি ঘটলো শীত মওসুমের শেষ দিকে। এই মওসুমে বন্যা আরো ব্যাপক আকার ধারণ করে তা আরো সম্প্রসারিত হলে বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। এমনিতেই প্রায়ই বর্ষাকালে ভারতের অতিবৃষ্টির পানি বাংলাদেশের ব্যাপক অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি করে। এর ওপর যদি এই হিমালয়ান গ্ল্যাসিয়েল লেক দ্বারা সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশে পড়তে শুরু করে, তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে তা এখনো আমাদের আন্দাজ অনুমানের বাইরে। তাই বললে ভুল হবে না, উত্তরাখন্ডের সা¤ম্প্রতিক এই ট্র্যাজেডি জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে বালাদেশের উদ্বেগকে আরো শতগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। হিমালয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব বাংলাদেশে কী ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে, সে বিষয়ে পরে বলছি।

এই ‘জিএলওএফ’ বন্যার ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। হিমালয়ের হিমবাহের বরফ গলে পাহাড়চূড়ায় সৃষ্টি হয়েছে বেশ কয়েকটি তুষার লেক। এগুলোকে বলা হয় প্রগল্যাসিয়ান লেক। এ ধরনের লেকে চার পাশে গড়ে ওঠে তলানি আর বোল্ডারের দেয়াল। হিমবাহ থেকে সৃষ্ট এসব দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি হতে পারে নানা কারণে। আর তখন এই ফাটল দিয়ে লেকের পানি দ্রুত বেগে নিচের দিকে নামে কাছের ঝরণা ও নদী দিয়ে। এর ফলে নিচের দিকে বন্যার সৃৃষ্টি হয়। জানা যায, উত্তরাখন্ডের ট্র্যাজেডির ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার দুদিন আগে এ অঞ্চলে বড় ধরনের তুষারধস ঘটেছে। যদি জিএলওএফ এই দুর্ঘটনার কারণ হয়, তবে ধরে নিতে হবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট এটি বড় ধরনের একটি ট্র্র্যাজেডি এবং তা হিমালয় অঞ্চলে ও বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশের মানুষের জন্য ভয়াবহ দুর্ভোগ বয়ে আনবে।

উত্তরাখন্ডের এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডি ঘটার পর আবারো প্রশ্ন উঠেছে, হিমালয় অঞ্চলে অনেক ড্যাম ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নিরাপত্তা নিয়ে। সেই সাথে এগুলোর থাকা উচিত-অনুচিত কিনা, সে প্রশ্ন উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়, তা আরো জটিল আকার ধারণ করছে এসব ড্যাম ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং এগুলোর টানেলের কারণে। এসব প্রকল্পে কর্মরত লোকজন ও শ্রমিকেরাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকারে পরিণত হচ্ছে। উত্তরাখন্ডে এই দুর্ঘটনার সময়ে এদের অনেকেই বিপজ্জনক অবস্থায় পড়ে। এমনটি এই প্রথম ঘটেছে তা নয়। হিমালয় অঞ্চলে ড্যাম নির্মাণে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা ও ঝুঁকির বিষয়টি অনেক বিশেষজ্ঞপর্যায়ে আলোচিত হয়ে আসছে। সেই সাথে স্থানীয় লোকজন ক্রমবর্ধমান হারে এ ব্যাপারে তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরছে। অনেকেই এ ধরনের ড্যাম, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পসহ ও অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের উপকার ও ঝুঁকি নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।

ভারতের সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াই কে মূর্তি তার এক লেখায় উল্লেখ করেছেন : ‘মানুষের তৈরি করা লেক সৃষ্টির কর্মসূচি পুরো হিমালয় অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করবে, যা পরিবেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।’ এসব প্রকল্পের মধ্যে বিশেষত উত্তরাখন্ডের গাড়ওয়াল অঞ্চলে নির্মিত তেহরি ড্যাম নিয়ে বিপদাশঙ্কা সবচেয়ে প্রবল। মূর্তি এই ড্যাম নির্মাণ শেষ হওয়ার আগে থেকেই এ নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন। তখন তিনি তার এক লেখায় এটাও উল্লেখ করেছিলেন : তেহরি ড্যাম এ ধরনের কাঠামোর মধ্যে বিশ্বের মধ্যে শুধু সর্বোচ্চ কাঠামোই হবে না, সেই সাথে এর প্রয়োজন হবে অভূতপূর্ব বড় ধরনের জটিল কারিগরি সমস্যা মোকাবেলার।

আরেক বিখ্যাত জিওলজিস্ট কেএস ভালডিয়ার মতে- ‘হাইয়ার হিমালয় ও লোয়ার হিমালয়ের জাংশন জোনে প্রায়ই বিয়োগান্তক প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে থাকে। বর্ষা মওসুমে পাহাড়ের ব্যাপক ভূমিধস ঘটে। এ অঞ্চলটা এমনিতেই ভূমিকম্প প্রবণ। এ অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গঠনের কারণেও এমনটি ঘটছে। তাই এই দুর্বল অঞ্চলে ড্যাম, রিজার্ভার; এমনকি প্রশস্ত সড়ক নির্মাণের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিতে হবে। এ অঞ্চলে উঁচু ড্যাম ও রিজার্ভার নির্মাণ রীতিমতো বিপজ্জনক। এমনকি এই অঞ্চলে ডিনামাইট ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত।’

জলবায়ুসংক্রান্ত প্যারিসচুক্তির লক্ষ্য ছিল এই শতাব্দীর মধ্যে পৃথিবীর উষ্ণায়ন দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখা। কিন্তু বিভিন্ন দেশের প্রবণতাদৃষ্টে সে লক্ষ্য অর্জনে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদি বৈশ্বিকভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকানোর উদ্যোগ ব্যর্থ হয়, তবে এই শতাব্দী শেষে পৃথিবীর তাপমাত্রা আরো পাঁচ ডিগ্রি বেড়ে যাবে। তখন হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের দুই-তৃতীয়াংশ তুষার গলে হারিয়ে যাবে। এর ফলে হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের তুষারধস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বড় বড় নদীকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। তখন এ অঞ্চলের ১০০ কোটি মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এই তুষারধসের ফলে সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদী অববাহিকায় প্রবল পানিপ্রবাহ ঘটবে, প্রবল বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি হবে। এসব কথা বলা হয়েছে ‘হিন্দুকুশ হিমালয় অ্যাসেসমেন্ট’ শীর্ষক ব্যাপকভিত্তিক সমীক্ষা প্রতিবেদনে। এটি এই পাহাড়ি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনসম্পর্কিত এ ধরনের ব্যাপকভিত্তিক প্রথম সমীক্ষা। পাঁচ বছর ধরে পর্যবেক্ষণের পর এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে অংশ নেন ২২টি দেশের ১৮৫টি সংগঠনের সাড়ে ৩০০ গবেষক। উল্লেখ্য, এই হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চল বিস্তৃত রয়েছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, চীন, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানজুড়ে। অতএব হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন এসব দেশে নিশ্চিতভাবেই বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

এই প্রতিবেদন তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট’-এর (আইসিআইএমডি) ফিলিপাস ওয়েস্টার। তিনি হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের জলবায়ু পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেছেন- ‘এটি এমন একটি জলবায়ু সঙ্কট, যার কথা এর আগে আমরা কেউই শুনিনি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে এখন শীতল তুষারে ঢাকা হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের আটটি দেশের পাহাড়চূড়া এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে তুষারশূন্য হওয়ার পথে।’ অপর দিকে, পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, তুষারধসের বরফ গলে যাওয়ার ফলে বর্ষার আগে নদীগুলোতে পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে। এল ফলে পরিবর্তন আসছে শহুরে পানিব্যবস্থা এবং খাদ্য ও জ্বালানি উৎপাদনে। যদিও পাহাড়ি অঞ্চলগুলো গঠিত সাত কোটি বছর আগে, তবু এর তুষার আচ্ছাদন জলবায়ু পরিবর্তনে সহজেই সাড়া দেয়। ১৯৭০-এর দশক থেকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে পাহাড়ি বরফস্তর ক্রমেই পাতলা হয়ে চলেছে। এখন পাহাড়ের বরফাচ্ছাদিত এলাকা কমছে। এই পরিবর্তনের প্রভাব অনুভূত হচ্ছে গোটা হিন্দুকুশ অঞ্চলে। ইন্দো-গঙ্গা সমতল ভূমিতে গ্রিন হাউস গ্যাস ব্যাপকভাবে বায়ুদূষণ সৃষ্টি করছে। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান বায়ুদূষণ অঞ্চল। ফলে কালো কার্বন জমা হয় গ্ল্যাসিয়ারের ওপর। এর ফলে এগুলো দ্রুত গলে যায়, যা এশিয়াজুড়ে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনে।
আইসিআইএমডির উপ-মহাপরিচালক ই শর্মা বলেছেন- ‘এই অঞ্চলে মানুষের জন্য সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন সময়। আগামী ২০৮০ সালের মধ্যে পরিবেশিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি আরো ব্যাপক কঠিন হয়ে উঠবে। অনেক আকস্মিক দুর্যোগ ও জলবায়ুর পরিবর্তন এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ভয়াবহ দুর্ভোগের পাশাপাশি সঙ্ঘাতের সৃষ্টি করবে। এ অবস্থা চরম আকার ধারণ করার আগেই পরিবর্তন ঘটাতে এসব দেশকে জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে একযোগে কাজ করতে হবে। সে জন্য হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলকে ‘ক্লাইমেট হটস্পট’ হিসেবে বিবেচনা করে এ সমস্যা সমাধানে জরুরি বিনিয়োগে নামতে হবে। সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনরা বলেছেন, হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলকে ঘোষণা করা উচিত ‘ইকোলজিক্যালি সেফ জোন হিসেবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর যে পরিবর্তন ঘটছে, এর প্রভাব বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোতে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। ২০১৬ সালে নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত একটি আঞ্চলিক সম্মেলনে বাংলাদেশের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব নুরুল করিম এ কথাটিই উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন- ‘বন্যা, ভূমিধস ও ক্রমবর্ধমান নদীভাঙনসহ পাহাড়ি অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এরই মধ্যে বাংলাদেশে পরিলক্ষিত হচ্ছে।’ হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকার জলবায়ুর প্রভাবের সাথে ভাটির দেশ বাংলাদেশের সরাসরি প্রভাবের সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি আরো বলেছিলেন, উজানের ও ভাটির দেশগুলোর মধ্যে টেকসই পাহাড় উন্নয়নে একটি জোরালো অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা দরকার।’ সে সময়েই জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ সম্পর্কিত এই আঞ্চলিক সম্মেলনের সাইডলাইনে মন্ত্রী পর্যায়ের এক প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল ‘দ্য হিন্দুকুশ হিমালয়ান পার্টনারশিপ ফর সাসটেইনেবল মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট।’ এই সংস্থা গঠনে সহযোগিতা ছিল জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইএফ)। আইসিআইএমডির মহপরিচালক ড্যাভিড মল্ডেন তখন বলেছিলেন, হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চল হচ্ছে একটি ‘শেয়ায়ার্ড রিসোর্স’ এবং এর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলের দেশগুলো একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ অঞ্চলের সমতল কিংবা উপকূলীয় সমস্যার সমাধানের অর্র্থ এই নয়, শুধু পাহাড়ি অঞ্চল নিয়েই কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে সহায়তা ও প্রতিশ্রুতি আদায়ের দায়িত্ব অর্পিত হয় হিন্দুকুশ হিমালয় পার্টনারশিপ সংস্থাটির ওপর। বাংলাদেশ, ভুটান, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান সরকারের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি এবং জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ পরিষদ (ইউএনইএ) ও আইসিআইএমডি প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এ দায়িত্ব অর্পিত হয়। তখন তাদের ঘোষণা ছিল : ‘Healthy Mountains, Healthy Planet : The Hindu Kush Himalayan Partnership for Sustainable Mountain Development’।

এই ঘোষণার মাধ্যমে কার্যত তখনই স্বীকার করে নেয়া হয়- হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চল এমন একটি বৈশ্বিক সম্পদ, যা বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ মানুষের কল্যাণ ও সেবা জোগানোর সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই এ ব্যাপারে হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের দেশগুলোর একযোগে কাজ করার তাগিদটা আসে। ভারতকে এই সত্য গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে, বিশেষ করে উত্তরাখন্ডের সাম্প্রতিক ট্র্যাজেডি এই তাগিদকে আরো বড় করে তুলেছে। ভারতের পরিবেশ বিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদী ব্যক্তি ও সংস্থা সে তাগিদ উচ্চারণ করে আসছেন। জলবায়ু ও পরিবেশ বিনাশী বিভিন্ন সরকারি পদক্ষেপ, ড্যাম, জলবিদ্যুৎ ও এলাপাতাড়ি উন্নয়ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় জনগণ জোরালো প্রতিবাদ বিক্ষোভ করতেও দেখা গেছে, কিন্তু ভারতের কোনো সরকার তাতে কান দেয়নি। জানি না, উত্তরাখন্ডের ঘটনা তাদের কোনো বোধোদয় ঘটাবে কি না। ভারতের অনেক অনৈতিক ও অযৌক্তিক প্রকল্প সম্পর্কে বাংলাদেশ বরাবর প্রতিবাদ জানিয়ে এলেও, তা আমলে নেয়নি দিল্লি সরকার। তার বড় প্রমাণ ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্প। এই বাঁধ শুধু বাংলাদেশেরই পরিবেশ বিনাশ করেনি, সেই সাথে ভারতের জন্যও সৃষ্টি কেেছ নানামাত্রিক পরিবেশ বিপর্যয়; কাজ করেছে জলবায়ু পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে। তাই এই বাঁধ ভেঙে ফেলার দাবি এখনো অহরহ উচ্চারিত হচ্ছে ভারতীয় পরিবেশ বিজ্ঞানী, পরিবেশবাদী ব্যক্তিবর্গ ও ক্ষতির শিকার জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে। ভারতের জনগণসহ এ অঞ্চলের মানুষ চায় ভারত সরকার যেন হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর সাথে একযোগে কাজ করে- ভারতের নিজের স্বার্থে তো বটেই, সেই সাথে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের, বিশেষ করে ভাটির দেশগুলোর স্বার্থে; যাতে উত্তরাখন্ডের ট্যাজেডির মতো দ্বিতীয়টি এ অঞ্চলে কোনো দেশে আর না ঘটে।

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us