কোভিড পাস এখন মাইক্রো চিপস হয়ে মানবদেহে ঢুকেছে

রহমান মৃধা | Dec 29, 2021 05:18 pm
কোভিড পাস এখন মাইক্রো চিপস হয়ে মানবদেহে ঢুকেছে

কোভিড পাস এখন মাইক্রো চিপস হয়ে মানবদেহে ঢুকেছে - ছবি : সংগ্রহ

 

প্রযুক্তির যুগে আমরা জানি না আমাদের চাহিদা কী। কারণ চাহিদা নিজেই বলে দিচ্ছে আমাদের কী দরকার। কে বা কারা চাহিদার পেছনে কাজ করছে জানেন কি? আমাদের মধ্যে কেউ এই চাহিদা নিয়ে হাজির হচ্ছে প্রতিদিন। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে চাহিদা সৃষ্টি করা এবং সেই চাহিদাকে ধ্বংস করে সমস্যা সৃষ্টি করার এক নতুন নাম অ্যাডভান্স টেকনোলোজি।

জীবনে আমরা বহু অ্যাটাকের কথা শুনেছি। যেমন বাঘের অ্যাটাক, হার্ট অ্যাটাক, শত্রুর অ্যাটাক, করোনার অ্যাটাক ইত্যাদি। এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগে শুরু হয়েছে নতুন ধরনের অ্যাটাক। এর নাম সাইবার অ্যাটাক। আইটি অ্যাটাক বা সাইবার অ্যাটাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি অবগত। বাংলাদেশে অনেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়, তাদের ফেসবুক হ্যাক হয়েছে। এক দেশ যেমন আরেক দেশকে অ্যাটাক করে ঠিক তেমনি কেউ বা কারা একটি বড় কোম্পানির সিস্টেমে অ্যাটাক করে, যাতে কোম্পানি ঠিকভাবে সবকিছু ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হয়।

প্রতিযোগিতার যুগে জিততে হলে যেকোনো মূল্যে প্রতিযোগীকে হারাতে হবে। সেটা হতে পারে সেই প্রতিযোগীর সিস্টেমে অ্যাটাক করা, যা করেছে গত কয়েক দিন আগে সুইডেনের একটি মুদি চেইন প্রতিষ্ঠানে। এই মুদি চেইনে রয়েছে আট শ' মুদি দোকান, ফার্মাসি এবং সুইডিশ রেলের টিকিট অফিস। সাইবার অ্যাটাকের কারণে কয়েক দিন ধরে পুরো সিস্টেম অচল হয়ে পড়েছে বলে কেনাকাটা সব বন্ধ। প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা লোকসান, সেই সাথে অনেকের অনিশ্চিত জীবন।

সবার ধারণা, বিশ্বের স্যাটেলাইট থেকে শুরু করে সব প্রযুক্তি সিস্টেম শতভাগ নিরাপদ এবং তা অত্যন্ত শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার নয়। এমনটি ধারণা আমারও ছিল এত দিন। কিন্তু সদ্য ঘটে যাওয়া ঘটনার পর সে ধারণা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল তাসের ঘরের মতো। এখন আমি বলতে পারি, ডিজিটাল যুগের সময় শেষ। কারণ এ যুগ গড়ে উঠেছে তাসের ঘরের মতো। যেন সেই রসুলপুরের আসমানির 'ভেন্না পাতার ছানি' দিয়ে তৈরি ঘর। একটু নাড়া দিলেই সবকিছু তছনছ হয়ে যেতে পারে। ছোটবেলায় দেখেছি, রাতে চোর এসে অনেকের সম্পদ চুরি করত। এসব চোর পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ করত। তা ছাড়া তারা ছিল নিরক্ষর। বর্তমানে যারা দিন-দুপুরে চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি করছে- এরা কারা?

এরা বিশ্বের নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষিত মানুষ। এখন প্রশ্ন উঠবে, আমি হঠাৎ শিক্ষিত মানুষের বদনাম কেন করছি? এটা বদনাম নয়, অপ্রিয় সত্য কথা। জাপানের হিরোশিমা বোম্বিং করে কারা ধ্বংস করেছিল? শিক্ষিত মানুষ। আমরা বহু বছর ধরে শুধু খুন করছি ইহুদি, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান। কখনো কাউকে বলতে শুনিনি, আমরা মানুষ হয়ে মানুষ খুন করছি। তাহলে যারা এ পর্যন্ত মারা গেল এবং যারা মারল, তারা কারা? নিশ্চিত- মানুষ নামের দানব। যাই হোক না কেন, ঘটনা এখন কিছুটা ভিন্ন ধরনের।

সে আবার কী? জানা যাক কিছু তথ্য। বিশ্ব-জনতার ঢেউ এখন সিস্টেমের ওপর। ডিজিটাল সিস্টেম গোটা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে। যার ফলে যদি কেউ ডিজিটাল সিস্টেমকে অ্যাটাক করে তবে অতি সহজ উপায়ে গোটা বিশ্বকে অচল করে দেওয়া সম্ভব। এখন এই ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে দরকার ব্যাকআপ ও সঠিক পরিকল্পনা এবং সেটা হতে হবে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রকেন্দ্রিক।

যদি বলি, সাইবার অ্যাটাক মাদক বা নার্কোটিকের চেয়ে বড় এবং বিশ্বে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট, তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং অন্যান্য ক্ষমতাধর দেশের আর অস্ত্র তৈরির প্রয়োজন নেই। সাইবার অ্যাটাকই যথেষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, কোনো বিদেশি শক্তি হঠাৎ যদি আমাদের অ্যাটাক করে তাহলে সশস্ত্র বাহিনীর হস্তক্ষেপ আশা করা উচিত; ঠিক কিনা। ইতোমধ্যে দেশে অপরাধীদের অ্যাটাক চলছে, বিশেষ করে যারা মাদক বিক্রি করছে এবং বাংলার মাটিতে গুলি চালাচ্ছে।

যেহেতু এটা বাংলার মাটিতে ঘটছে এবং বাংলার সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই এর দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু যদি বাংলাদেশ পুলিশ বা সেনাবাহিনীর জ্ঞান ও বিধিবিধান থাকা সত্ত্বেও নার্কোটিক নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সেখানে কীভাবে তারা সাইবার অ্যাটাক মোকাবিলা করবে? আমরা যখন এ ধরনের আরো বেশি সংখ্যক অ্যাটাকের মুখোমুখি হবো, তখন কী ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে বাংলাদেশ এবং কী ধরনের প্রশিক্ষণ তাদের নেওয়া দরকার? আমরা বিশ্বের ইন্টারনেট ও ডিজিটালাইজেশন নিয়ে কতটা ভাবছি? ভবিষ্যতে আমাদের কী হবে এবং কে আমাদের সুরক্ষা দেবে? ভবিষ্যতে আমাদের কোন ধরনের প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার; সময় এসেছে এসব বিষয় নিয়ে ভাবার।

সুইডেনের দোকান, সীমান্ত, রাজনীতি এমনকি সিনেমা হলের টিকিট কাউন্টারে সাইবার অ্যাটাকের কারণে হঠাৎ সিস্টেম কাজ করছে না। সাথে সাথে বিশাল লাইন ও অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে।

সুইডেনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের হার হতাশাজনক। দেশে সাইবার সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সাইবার লিটারেসিও বাড়ানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও সারাদেশ সাইবার অ্যাটাক, নার্কোটিক, অগ্নিকাণ্ড ও খুন-খারাবি চলছে সর্বত্র। ইদানীং প্রতিদিনের খবর- কেউ না কেউ খুন হচ্ছে। এখন আর ডিনামাইট তৈরি করলেই দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কারণ মানুষ নিজেই এখন স্বাবলম্বী বোমা।

করোনাকালে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে সমান্তরাল হারে বেড়েছে সাইবার ক্রাইম। দেশে ফেসবুক, ইউটিউব, লাইকি, টিকটক, বিগো লাইভের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নানা ধরনের ক্রাইম চলেছে। যৌন হয়রানিমূলক একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে হয়রানি করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনাও বেড়েছে। এ ছাড়া ই-কমার্সে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার ঘটনাও বেড়ে চলেছে। বিশ্বে সাইবার ক্রাইম আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সামাজিক মাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং বা তথ্য চুরি সব সময় চলছে। কীভাবে আমরা এর বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে পারব, সেটাই এখন ভাবার বিষয়।

সবাই শুধু বলছি, শিক্ষা-প্রশিক্ষণে রদবদল করতে হবে, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। কখনো কি ভাবছি, কী অবস্থা বাংলাদেশ প্রতিরক্ষার? দেশে যদি সাইবার অ্যাটক হয়, প্রতিরক্ষা বাহিনী কি তা মোকাবিলা করতে পারবে? হঠাৎ যদি দেশের সব ব্যাংক বা হাসপাতালের সিস্টেমে বহিঃশত্রুর মাধ্যমে সাইবার অ্যাটাক আসে; আমরা কি প্রস্তুত তার মোকাবিলা করতে? প্রযুক্তির যুগ শেষের পথে; শুরু হয়েছে এর পতনের পালা। আমরা জানি, সৃষ্টি যখন হয়েছে, ধ্বংস অনিবার্য। কখন, কবে, কোথায়- সেটাই জানতে বাকি।

এবার আসা যাক নতুন এক টেকনোলজির আবির্ভাব হয়েছে সেটা নিয়ে। বেশি দিন নয় ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সিদ্ধান্তে উপনীত হয় সমস্ত ইইউ নাগরিকদের সঙ্গে কোভিড পাস বাধ্যতামূলক। কোথাও যেতে পাসপোর্টের পাশাপাশি কোভিড পাসও শো করতে হবে। ভ্যাকসিন ফুল ডোজ না নেয়া থাকলে পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ ফলাফল দেখাতে হবে। দুটি ভ্যাকসিন নিলেই হবে না তিনটি নিতে হবে এবং প্রতি ছয় বা নয় মাস পর পর ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং ভ্যালিড কোভিড ভ্যাকসিন পাস সাথে থাকা লাগবে।

আমিসহ অনেকেরই ইতিমধ্যে কোভিড পাস টেলিফোনে অন্যান্য অ্যাপসের মতো ডাউনলোড করা হয়েছে। এরই মধ্যে নতুন টেকনোলজি মার্কেটে এসে হাজির হয়েছে। সে আবার কী? মাইক্রো চিপস শরীরের মধ্যে ঢোকানো হয়েছে। এর মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে কোভিড পাস, শরীরের টেম্পারেচারসহ গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার। অতি সহজেই এই মাইক্রো চিপসের মাধ্যমে কোভিড পাস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। সুইডেনের সাত থেকে আট হাজার নাগরিকের শরীরে এখন কোভিড মাইক্রো চিপস বিরাজমান। দ্রুত এই মাইক্রো চিপসের মধ্যে ডাউনলোড হবে আরো কতকিছু, যার ফলে জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে শুরু করে নতুন কত কিনা বাজারদরে কেনাবেচা থেকে শুরু করে ছড়াছড়ির বন্যা যে বয়ে যাবে না, কে সেই গ্যারান্টি দিবে আগামীকাল। আমরা হয়ত সেদিন মারা যাবো কিন্তু ট্যুমরো নেভার ডাইস। জাগো বিশ্ব জাগো, নতুন করে ভাবো।

লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন rahman.mridha@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us