আসন্ন বাজেট : প্রস্তাবনা ও প্রত্যাশা

অন্য এক দিগন্ত | Jun 09, 2022 02:39 pm
আসন্ন বাজেট : প্রস্তাবনা ও প্রত্যাশা

আসন্ন বাজেট : প্রস্তাবনা ও প্রত্যাশা - নয়া দিগন্ত

 

মানুষকে যন্ত্রমানব নয়, বরং কল্যাণমুখী করতে শেখায়- এমন অর্থনীতি আমাদের গড়তে হবে। এবং তা পারে একমাত্র ইসলামী অর্থনীতি। আইএফএ কনসালটেন্সির 'আসন্ন ২০২২-২৩ বাজেট : প্রস্তাবনা ও প্রত্যাশা শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এমন অভিমতই ব্যক্ত করেছেন। গত ৭ জুন মুফতি মঞ্জুরুল হাসান চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের তরুণ ইসলামী অর্থনীতিবিদ মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন তরুণ ইসলামি অর্থনীতিবিদ মুফতি ইউসুফ সুলতান ও সহ-আলোচক ছিলেন আইএফএ কনসালটেন্সির গবেষক মুফতি ফাহিম ফয়সাল আল মাসউদ।

মূল প্রবন্ধে মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম বিভিন্ন পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, এ কথা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে জনগণ পুঁজিবাদের ভয়াল থাবায় জর্জরিত। আজ তাদের মধ্যে এক চাপা আর্তনাদ বিরাজমান। চলমান অর্থব্যবস্থায় যে আমাদের অর্থনৈতিক সমাধান নেই- তা নানা তথ্য-উপাত্ত থেকে প্রমাণ করা হয়। বিশেষত কোভিড-১৯-এর পর বিশ্বে এ সত্য এখন পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি স্পষ্ট। এ মুহূর্তে আমাদেরকে এমন একটি অর্থনীতির দিকে ফিরে যেতে হবে যা হবে টেকসই, যা মানুষকে যন্ত্রমানব নয়, কল্যাণমুখী করতে শেখায়। এমন অর্থনীতি একমাত্র ইসলামী অর্থনীতি।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বে এখন একমাত্র এডভান্সিং ইকনোমি হিসেবে খ্যাত-ইসলামী অর্থনীতি। তাই আমাদেরকে ইসলামী অর্থনীতির দিকে ফিরে যেতে হবে।

বিশেষত বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের দিকে এগুচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য এ মহূর্তটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির টেস্টিং পিরিয়ড অতিক্রম করছে প্রিয় মাতৃভূমি। এ সময় এডভান্সিং ইকনোমি গ্রহণ একান্ত জরুরি।

তিনি বলেন, এর শুরুটা হতে পারে বাজেট প্রণয়ণের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে আমাদের প্রথম প্রস্তাব হলো- বাজেট তৈরির প্রক্রিয়াকে গণমুখী করা। জেলা, উপজেলা ভিত্তিক জনগণের মতামত নিয়ে বাজেট প্রস্তাবনার প্রয়োজন রয়েছে। এককথায় ‘অংশগ্রহণমূলক বাজেট ধারণা’ বাস্তবায়ন করতে হবে।

বর্তমানে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে। এখনি এর লাগাম টেনে ধরতে হবে। অন্যথায় এটি দেশের জন্য অশনি সঙ্কেত হবে বলে তিনি ব্যক্ত করেন। এর জন্য আমাদেরকে কর ও ভ্যাট নির্ভর বাজেট চিন্তা থেকে বের হয়ে আয়ের আরও নানা সোর্স বের করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা ইসলামের রাষ্ট্রীয় আয়-উৎসগুলো বর্তমান সময়ের সাথে সমন্বয় করে প্রয়োগ করতে পারি।

দেশের এ পরিস্থিতিতে ইসলামি অর্থনীতির আলোকে রাষ্ট্রীয় বাজেট রূপরেখা তৈরীর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এ ইসলামি অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, বিগত ১৩০০ বছর ইসলামি অর্থব্যবস্থার উপর দাঁড়িয়ে ছিল সুবিশাল ইসলামি সাম্রাজ্য। রাষ্ট্রের উচিত ইসলামি বাজেট রূপরেখা অনুসরন করা। তিনি আরো বলেন, আইএফএ কনসালটেন্সির গবেষণা বিভাগের 'রাষ্ট্রীয় বাজেটের ইসলামি রূপরেখা' বিষয়ক ২৫০ পৃষ্ঠার সমৃদ্ধ গবেষণা রয়েছে। এবং এ সংক্রান্ত যেকোনো সহযোগিতার জন্য ‘আইএফএ কনসালটেন্সি’ টিম সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।

আলোচনাসভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে মুফতি ইউসুফ সুলতান বলেন, বিশ্বে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মতবাদের উদ্ভাবন হলেও জনগণ কখনোই অত্যাচার থেকে মুক্তি পায়নি। প্রত্যেকটি সমাধানই কিছুদিন পর মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর পেছেনের বড় কারণ হলো আমরা সৃষ্টি। আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পক্ষান্তরে ইসলামি অর্থব্যবস্থা ও ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থায় রয়েছে এর টেকসই সমাধান। কেননা এটি কোনো সৃষ্টির তৈরী না। আজ বিশ্বব্যাপি শারিয়াহ আইন বলতেই মনে করা হয় নারী অধিকার হনন, অন্যায়ভাবে হাত কর্তন, শিরোচ্ছেদ। অথচ ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা নিরাপত্তা ও ইনসাফভিত্তিক একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা।

তিনি আরো বলেন, আজ আমরা বিশ্বব্যাপী উপার্জন বৈষম্য দেখতে পাচ্ছি। অর্থনীতিকে ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন করা এর অন্যতম কারণ।

মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম তার কি-নোট স্পিচে বলেছেন, বিশ্বের দরিদ্রতম ৪৬০ কোটি মানুষের সম্পত্তি থেকেও বেশি সম্পত্তি রয়েছে ২,১৫৩ ব্যক্তির কাছে। এটি শারিয়াহ দৃষ্টিকোণ থেকে একটি অপছন্দনীয় বিষয়। ইসলামে যাকাত, নফল সাদাকাহ, ওয়াকফ বিভিন্নভাবে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য দূর করা হয়।

তিনি বলেন, সম্পদ শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্য বিনিয়োগ না করে আখেরাতের জন্যও কিছু বিনিয়োগ করা ইসলামি অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

সহযোগিতামূলক বাজেটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ নৈতিক অর্থনীতি, সামাজিক অর্থায়ন, ইমপ্যাক্ট ফান্ডিং, সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। যেখানে মূল বক্তব্যটাই থাকে যে শুধুমাত্র নিজের জন্য বিনিয়োগ না করে বা টাকায় মুনাফা অর্জন না করে সমাজের জন্য বিনিয়োগ করা হবে, পরিবেশগত উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন করা হবে। আমরা মনে করি, এর থেকেও বেশি প্রভাব ফেলে আখেরাতের উদ্দেশ্যে কিছু বিনিয়োগ করা।

তিনি বর্তমান বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে আন্ডাওয়ার্ল্ডের কবলে গোটা অর্থব্যবস্থা। পর্নোগ্রাফি, জুয়া, মাদক, ক্যাসিনো ইত্যাদি চারদিকে দাবানলের ন্যায় ছড়িয়ে পড়েছে। এর থেকে উত্তোলনের জন্যও ধর্মীয় মুল্যবোধের প্রয়োজন রয়েছে। প্রাক্কলিত বাজেটের কথা উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আমরা বিভিন্ন ডাটা থেকে দেখতে পাচ্ছি, রাষ্ট্রের আয় কমছে, ব্যয় বাড়ছে। এখনি এর যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এটি ২০০৭/০৮-এর বৈশ্বিক মন্দা থেকেও গভীর অর্থমন্দায় ফেলতে পারে।

সহ-আলোচকের বক্তব্যে মুফতি ফাহিম ফয়সাল আল মাসউদ বলেন, প্রতিনিয়ত সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে জন জীবন আজ সঙ্কটাপন্ন। এমন পরিস্থিতিতে একটি বাজেট যেন জনবান্ধব হয় এটি সকলের প্রত্যাশা। বাজেট যেন জনগণের ভোগান্তির কারণ না হয়। বাজেটকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক মহলে যে অঘোষিত সিন্ডিকেট করা হয় এ থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থাও সরকারের নেয়া উচিত।

তিনি আরো বলেন, রেমিটেন্সের চাকা ধীরগতি হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই রেমিটেন্স। এর যথাযথ কারণ বের করে সমাধান করা উচিত। সহযোগিতামূলক বাজেটের আলোচনা করে তিনি বলেন, বাজেটের উর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে সুকুক ও ওয়াকফের প্রচলন এখনই জরুরি। তবে এর জন্য অবশ্যই বিভাগীয় স্বচ্ছতা প্রয়োজন।

সমাপনী বক্তব্যে মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম বলেন, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি ও বাজেট সংক্রান্ত যেকোনো সহযোগিতায় আইএফএ কনসালটেন্সি অবদান রাখতে সর্বদা প্রস্তুত। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা সমৃদ্ধ হই। দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য আমরা কাজ করতে সর্বদা প্রস্তুত। ইতিবাচক পন্থায় আমরা আলোচনা করতে প্রস্তুত। যেভাবে চলছে- এভাবেই চলতে হবে এমন কোনো কথা নেই। দেশের স্বার্থে আমরা নানা চিন্তা ও ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত করতে পারি।আমাদের বক্তব্য ও উপস্থাপন থেকে কেউ ভুল বুঝবেন না।

উক্ত ওয়েবিনারে প্রদত্ত কি-নোট স্পিচ কপিটি নিম্নে সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হলো -গবেষণা বিভাগ : গবেষক, আইএফএ কনসালটেন্সি।


https://drive.google.com/file/d/1gY2nfwGseqCivgMp7OoO60SG4so1NJs6/view?usp=sharing

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us