ভয়ঙ্কর কীট মশা

আমীর হামযা চৌধুরী | Sep 17, 2019 01:22 pm
ভয়ঙ্কর কীট মশা

ভয়ঙ্কর কীট মশা - ছবি : সংগ্রহ

 

মশা। ছোট মাছি প্রজাতির পতঙ্গ। নেমাটোসেরা মাছিবর্গের অন্তর্ভুক্ত। মূলত ক্রেন মাছি পরিবারভুক্ত। আকারে ক্ষুদ্র হলেও ভূপৃষ্ঠে যত প্রাণী আছে; তার মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কীট। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু- সবই বহন করে এটি। শুধু বহন করেই ক্ষান্ত হয় না, সামান্য এক কামড়ে এসব ছড়িয়ে দিতে পারে একজন থেকে আরেকজনের শরীরে। এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে তিন হাজার ৫০০-এর বেশি প্রজাতির মশার সন্ধান মিলেছে। বেশির ভাগ প্রজাতির স্ত্রী মশা স্তন্যপায়ী প্রাণীর রক্ত পান করে। এগুলো সবচেয়ে পরিচিত। যদিও মশা যেসব প্রাণীর শরীর থেকে রক্ত শুষে নেয়, তা খুব অল্প।

কিছু প্রজাতির মশা রক্ত শোষণ করে না; আবার যেসব প্রজাতির মশা রক্ত শুষে এগুলোর মধ্যে অনেক প্রজাতি রক্তে ‘উচ্চ থেকে নিম্নচাপ’ সৃষ্টি করে তা শোষণ করে। কোনো রকম রোগ বিস্তার করে না। শুধু নারী মশাই রক্ত শোষণ করে। যেসব মশা নিয়মিত মানুষকে কামড়ায় সেসব প্রজাতি প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক মানুষের শরীরে রোগজীবাণু সংক্রমণের চালক হিসেবে কাজ করে। অন্য যেসব প্রজাতি নিয়মিত মানুষকে কামড়ায় না, কিন্তু অন্যান্য প্রাণীর শরীরে রোগ সংক্রমণের চালক, সেগুলো মূলত বিভিন্ন কারণে, যেমন হঠাৎ বন ধ্বংস, বাসস্থান থেকে উৎখাত হলে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।

মশা ১৫টি ভয়ঙ্কর রোগ ছড়িয়ে থাকে। সবচেয়ে ভয়াবহ ম্যালেরিয়া। এক সময় পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ ছিল না, যা ম্যালেরিয়ার মতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। একটি বিষয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরস্কার পেতে যেখানে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়, সেখানে ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণার জন্য পাঁচ-পাঁচবার নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে। মশাবাহিত এ রোগ দুনিয়ায় এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছিল; ভয়ঙ্কর হওয়ায় কীটটি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ১৯৩০ সাল থেকে প্রতি বছর ২০ আগস্ট পালিত হয় মশা দিবস। ১৮৯৭ সালের এ দিনে ম্যালেরিয়া রোগের কারণ আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ চিকিৎসক রোনাল্ড রস। এ জন্য তিনি পরে চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান। তার সম্মানে যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন দিবসটি পালন শুরু করে।

আন্তর্জাতিক এক পরিসংখ্যান বলছে, বছরে ৭০ কোটি মানুষ মশাবহিত রোগে আক্রান্ত হয়। মারা যায় ১০ লক্ষাধিক। বাংলাদেশেও প্রতি বছর বহু মানুষের মৃত্যু হয়। মশা মানব ইতিহাসের মারাত্মক সব ক্ষতিকারক রোগ শুধু বহনই করে না; একই সাথে ক্যারিয়ার বা ভেক্টর হিসেবে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বব্যাপী। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণী মশা। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকার মতো মশাবাহিত রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৩০ বছরে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার ৩০ গুণ বেড়েছে; তা শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মাত্র তিন প্রজাতির মশা রোগ ছড়ায়। এনোফিলিস মশা একমাত্র প্রজাতি, যা ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে। কিউলেক্স-জাতীয় মশা ওয়েস্টনাইল ভাইরাস, জাপানিজ এনসেফালিটিস ভাইরাস, সেন্ট লুই এনসেফালিটিস ভাইরাস এবং কিছু ক্ষেত্রে ফাইলেরিয়াসিস ও এভিয়ান ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে। তৃতীয় প্রজাতির মশা, ‘এডিস’ বা ‘টাইগার মসকিউটো’ নামে পরিচিত; ইয়েলো ফিভার, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জাপানিজ এনসেফালাইটিস ভাইরাস বহন করে।

ইতিহাসের অধ্যাপক টিমোথি সি. ওয়াইনগার্ড ‘দ্য মাসকুইটো : অ্যা হিউম্যান হিস্ট্রি অব আওয়ার ডেডলিয়েস্ট প্রিডেটর’ বইয়ে লিখেছেন, মানব ইতিহাসে অন্য যে কোনো ঘটনার চেয়ে মশা কিভাবে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, এখন পর্যন্ত বিশ্বে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে; তার অর্ধেকই হয়েছে মশার কামড়ে। পতঙ্গটি নিয়ে ফিকশনও কম হয়নি। সাহিত্যিকেরা বেশির ভাগ সময়ই মশা নিয়ে রসিকতা করেছেন।

মশার জীবনচক্র

সব মাছির মতো মশার জীবনচক্র চারটি পর্যায়ে বিভক্ত। ডিম, শূক, মুককীট আর পূর্ণাঙ্গ মশা। বেশির ভাগ প্রজাতির পূর্ণাঙ্গ নারী মশা বদ্ধপানি বা জলাশয়ে ডিম পাড়ে; কিছু পানির কাছাকাছি, বাকিরা জলজ উদ্ভিদে ডিম পাড়ে। প্রত্যেক প্রজাতি ডিম ছাড়ার বিষয়টি পানিতে বা পানির কাছাকাছি অবস্থান নির্বাচন করে। এ ছাড়া পারিপার্শ্বিকতার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। কিছু প্রজাতির মশা হ্রদ, ডোবা কিংবা জলাভূমি, আবার কিছু লবণাক্ত জলাভূমিতে ডিম ছাড়ে। লবণাক্ত পানিতে ডিম পাড়া মশার মধ্যে সমানসংখ্যক প্রজাতি বাড়িতে পরিষ্কার পানিতে ও লবণাক্ত পানিতে ডিম পাড়ে। যার এক-তৃতীয়াংশ সমুদ্রের পানিতে এবং বাকিরা লবণাক্ততার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। প্রজাতি অনুযায়ী মশার ডিম পাড়ার ধরনে পার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো নারী মশা ওড়াউড়ি করে পানিতে ডিম ছাড়ে। এটি মূলত এনোফিলিস প্রজাতি বেশি করে। এনোফিলিস প্রজাতির মশার ডিম অনেকটা চুরুট আকৃতির। দুই পাশে পানিতে ভেসে থাকার উপাদান রয়েছে। কিছু প্রজাতির পূর্ণাঙ্গ নারী মশা জীবনচক্রে ১০০-২০০টি ডিম দেয়। মশার শূকে খাবার উপযোগী মুখসহ সুগঠিত মাথা, পা-হীন বক্ষস্থল ও বিভক্ত পেট থাকে। লার্ভা চারটি স্তরে বেড়ে মুককীটে পরিণত হয়। মুককীট দেখতে কমা আকৃতির। মাথা ও বক্ষস্থল পেটের সাথে বাঁকা হয়ে একত্রিত হয়। মুককীট পেটের সাহায্যে সাঁতার কাটতে পারে। বেশির ভাগ প্রজাতির মুককীটকে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে প্রায়ই পানির ওপরে আসতে হয়। প্রজাতি অনুযায়ী ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হওয়ার সময়ের পার্থক্য দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রার ব্যাপক প্রভাব থাকে। কিছু প্রজাতির ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হতে সময় লাগে পাঁচ দিনের মতো। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ মশা হতে সময় লাগে ৪০ দিন। আর কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে আরো বেশি। পূর্ণাঙ্গ মশার শারীরিক আকৃতি শূকের ঘনত্ব ও পানিতে খাদ্যের সরবরাহের ওপর নির্ভর করে।

মশা নিয়ে উপমা ও উপকথা

মশার কখা কুরআনে উল্লেখ রয়েছে। আল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ মশা বা এর চেয়েও ক্ষুদ্র কোনো কিছুর উদাহরণ দিতে কার্পণ্য করেন না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ২৬)। মশা নিয়ে একটি উপকথা প্রচলিত আছে। নবী ইবরাহিম আ:কে অগ্নিকুণ্ডে ফেলেছিল যে অত্যাচারী বাদশাহ, সে ছিল মানবতার শত্রু আর আল্লাহর দুশমন। নাম তার নমরুদ। সেই স্বৈরাচারীর কী হয়েছিল তা বলা হয়েছে কাহিনীতে। গল্পটি এমনÑ একদিন সভাসদ নিয়ে গল্পে মশগুল স্বৈরশাসক নমরুদ। এমন সময় একটি মশা ভোঁ করে তার নাকে ঢুকে কামড়াতে থাকে। এতে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে নমরুদ। রাজার এমন দশা দেখে পারিষদরা সাম্রাজ্যের সব বদ্যি-কবিরাজ জড়ো করে; কিন্তু কিছুতেই মশা বের করে আনা সম্ভব হয় না। তখন নমরুদ উপস্থিত সভাসদদের কাছে অনুনয় করে বলে, তার মাথায় যেন জুতা দিয়ে পেটানো হয়। মানে, জুতাপেটা করা। অসহায় রাজার ব্যথা উপশমে পারিষদবর্গ তাই করে। মৃদু আঘাতে কাজ না হলে চলে জোর জুতাপেটা। মশার কামড়েই মারা যায় নমরুদ।
অন্য দিকে, মশা মারতে কামান দাগানো শুধু কথার কথা নয়। ডেঙ্গুর মতো ইয়েলো ফিভারও একটি মশাবাহিত রোগ। ১৮ শতকে যুক্তরাষ্ট্রে যখন ইয়েলো ফিভার মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন গবেষকেরা সূত্র খুঁজতে খুঁজতে একটা হোটেল আবিষ্কার করেন, যেই হোটেলের আশপাশে প্রথম ইয়েলো ফিভার ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই হোটেলটি ছিল যুদ্ধফেরত সৈনিকদের থাকার জায়গা। পরবর্তী সময়ে যাতে আর ইয়েলো ফিভার ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেই কারণে হোটেলটি কামানের গোলা দেগে উড়িয়ে দেয়া হয়। সম্ভবত সেই থেকে মশা মারতে কামান দাগার প্রবচনের শুরু।

মশাবাহিত ভয়ঙ্কর ১৫টি রোগ

মশার কামড়ে ১৫টি ভয়ঙ্কর রোগ ছড়ায়। আমেরিকান মাসকিউটো কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, শুধু মানুষই নয়, মশার কামড়ে কুকুর, ঘোড়া আক্রান্ত হয়ে প্যারালাইজডসহ মৃত্যুবরণও করে থাকে। নিচে ভয়ঙ্কর সেই ১৫টি রোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো :

ম্যালেরিয়া
এমন এক সময় ছিল, যখন এ রোগ বিশ্বব্যাপী মানবসভ্যতায় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল। তবে এখন আর সে অবস্থা নেই। বাংলাদেশে রোগটি একটি সর্বকালীন জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এখনো দেশের উত্তর এবং পূর্বাংশে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন জনপদে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর দেখা মেলে। ওইসব অঞ্চল এবং বদ্বীপীয় প্লাবন ভূমির কিছু বিচ্ছিন্ন এলাকা থেকে প্রায়ই ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়। ১৯৮৮ সালে ৩৩ হাজার ৮২৪টি সংক্রমণের ঘটনা, ১৯৯৮ সালে ৬০ হাজার ২৩টিতে পৌঁছায়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই ভধষপরঢ়ধৎঁস সংক্রমণ। সংক্রমণের ৯০ শতাংশ ঘটে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলে। যারা ম্যালেরিয়া অধ্যুষিত নয়, এমন স্থান থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকায় বসতি স্থাপন করেছেন; ম্যালেরিয়ায় তাদেরই মৃত্যুহার বেশি। ঢাকা শহর থেকেও এ রোগের খবর পাওয়া যায়।

ফাইলেরিয়া
এ রোগ মানুষের অঙ্গবিকৃতি ঘটায়। একে গোদরোগও বলা হয়। যাতে শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশালাকারে ফুলে ওঠে। প্রাদুর্ভূত এলাকায় জনগোষ্ঠীর ৩০ ভাগ গোদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। বাংলাদেশে গোদরোগের প্রাদুর্ভাব বিদ্যমান। উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর ও নীলফামারীতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এজন্য দায়ী বাহক কিউলেক্স মশা এবং পরজীবী এক নিমাটোড। বস্তুত বাংলাদেশে ফাইলেরিয়ার বাহকগুলো নিয়ন্ত্রণে দেশে কোনো কার্যক্রম নেই। মশা নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় ফাইলেরিয়ার বাহক হিসেবে পরিচিত ঈঁষবী য়ঁরহয়ঁবভধংপরধঃঁং মশা মারা সম্ভব।

কালাজ্বর
প্রটোজোয়া খবরংযসধহরধ ফড়হড়াধহর ঘটিত উষ্ণমণ্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় গ্রামাঞ্চলের একটি সাধারণ সংক্রামক রোগ এটি। রোগটিকে আন্ত্রিক লিশাম্যানিয়াসিসও (ারংপবৎধষ ষবরংযসধহরধংরং) বলা হয়। রোগটির বৈশিষ্ট্য হলো বিশেষভাবে যকৃৎ ও প্লীহার জালীয়-অন্তর্ঝিল্লিতন্ত্রের (ৎবঃরপঁষড়-বহফড়ঃযবষরধষ ংুংঃবস) বিকৃতি এবং এতে প্রায়ই মৃত্যু হতে পারে। শিশুরাই এ রোগের বেশি শিকার। সংক্রমিত স্ত্রী বালিমাছি (যা এক প্রকার মশা) বা স্যান্ডফ্লাইয়ের (চযষবনড়ঃড়সঁং ধৎমবহঃরঢ়বং) কামড়ে কালাজ্বরের সংক্রমণ ঘটে। রোগের সুপ্তিকাল দুই থেকে ছয় মাস। বাংলাদেশে রোগটি ১৯৪০ সাল থেকে জনস্বাস্থ্যের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ডিডিটি ছড়ানোর পরোক্ষ ফল হিসেবে রোগবাহক বালিমাছিও মারা যাওয়ায় কালাজ্বরের প্রকোপ অনেকাংশে লোপ পায়। কিন্তু ১৯৭০ সালের শেষ দিকে রোগটি ফের দেখা দেয়। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী ও কুমিল্লায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।

মহামারী রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালিত সমীক্ষা অনুসারে, রোগটি আতঙ্কজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। ১০ বছর আগে এটি উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে সীমিত ছিল, এখন ৩০টির বেশি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে কালাজ্বরবাহী মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কার্যক্রম নেই। কোনো অঞ্চলে বেশি পরিমাণে এ রোগের সংক্রমণ ঘটলে, সেখানে অনেক সময় ডিডিটি ছড়ানো হয়। কেননা বাহক স্যান্ডফ্লাই এখনো ডিডিটিতে মারা পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কীটনাশক মাখানো মশারির সাহায্যে কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় কিছুটা সাফল্য এসেছে। মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসই কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায়।

ডেঙ্গু
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। জন্ম আফ্রিকায়। চার শ’ বছর আগে। এরপর পৃথিবীর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ মশার পরিচিত ‘এশীয় টাইগার’ হিসেবে। প্রধানত এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে সহজদৃষ্ট একটি ভাইরাসঘটিত সংক্রামক রোগ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর ডেঙ্গু একটি বৈশ্বিক আপদে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের ১১০টির বেশি দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়। প্রতি বছর পাঁচ থেকে ১০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হয়। তাদের মধ্যে দশ থেকে বিশ হাজার মারা যায়। ১৭৭৯ সালে ডেঙ্গুর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বিংশ শতকের প্রথম ভাগে ডেঙ্গুর ভাইরাস উৎস ও সংক্রমণ বিশদভাবে জানা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশটি অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগের একটি হিসেবে ডেঙ্গুকে চিহ্নিত করেছে। মহামারীর আকারে রোগটির সংক্রমণ ঘটেছিল ক্যারিবীয় অঞ্চল (১৯৭৭-১৯৮১), দক্ষিণ আমেরিকা (১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে), প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল (১৯৭৯) এবং সেই সাথে আফ্রিকাতেও। রক্তক্ষরা ডেঙ্গুর (উবহমঁব যধবসড়ৎৎযধমরপ ভবাবৎ/উঐঋ) এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (উবহমঁব ংযড়পশ ংুহফৎড়সব/উঝঝ) প্রথম দেখা যায় ১৯৫৩-১৯৫৪ সালে ম্যানিলায়। ১৯৭৫ সাল নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে নিয়মিত বিরতিতে প্রাদুর্ভূত হতে থাকে। এটি প্রধানত শহরাঞ্চলের রোগ। ডেঙ্গুর চারটি অ্যান্টিজেনিক ভ্যারাইটি শনাক্ত করা গেছে। সবগুলোই দিনে দংশনকারী অবফবং ধবমুঢ়ঃর মশা ছড়ায়। এডিস মশার কামড়ে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গগুলোর মাঝে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি। দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নিতে পারে; যাকে ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) বলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়। রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায়। রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে। কিছু ক্ষেত্রে কখনো বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়। ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়।

পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। ২০০০ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। চলতি বছর তা খানিকটা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক প্রজাতির এডিস মশকী (স্ত্রী মশা) ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক। যেগুলোর মধ্যে এডিস ইজিপ্টি মশকী প্রধানতম। ভাইরাসটির পাঁচটি সেরোটাইপ পাওয়া যায়। একটি সেরোটাইপ সংক্রমণ করলে সেটির বিরুদ্ধে রোগী আজীবন প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে, কিন্তু ভিন্ন সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সাময়িক প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে। পরে ভিন্ন সেরোটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হলে রোগীর গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে। কয়েক ধরনের পরীক্ষায় ভাইরাসটি বা এর আরএনএ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখেও ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয় করা যায়। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধী টিকা কয়েকটি দেশে অনুমোদিত হয়েছে। তবে এ টিকা শুধু একবার সংক্রমিত হয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কার্যকর।

মূলত এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। তাই মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী বিভিন্ন আধারে, যেমন, কাপ, টব, টায়ার, ডাবের খোলস, গর্ত, ছাদ ইত্যাদিতে আটকে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর হলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। বেশি করে তরল খাবার গ্রহণ করা এবং জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল দেয়া হয়। প্রায়ই রোগীর শিরায় স্যালাইন দিতে হতে পারে। মারাত্মক হলে রোগীকে রক্ত দিতে হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর হলে কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও ননস্টেরয়েডাল প্রদাহপ্রশমী ওষুধ সেবন করা যাবে না। তাতে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ডেঙ্গু নামকরণ ও প্রাদুর্ভাব
‘ডেঙ্গু’ নামটি কোথা থেকে এসেছে, তা পরিষ্কার নয়। ধারণা করা হয়, আফ্রিকার সোয়াহিলি ভাষার প্রবাদ ‘কা-ডিঙ্গা পেপো’ থেকে ডেঙ্গু নামটি এসেছে। শব্দটির অর্থ ‘শয়তানের শক্তির কাছে আটকে যাওয়ার মতো ব্যথা’। নেদারল্যান্ডসের ডেঙ্গু গবেষক ডি এ বেইজিসের মতে, সোয়াহিলি ভাষার ‘ডিঙ্গা’ শব্দটি স্প্যানিশ শব্দ ডেঙ্গু থেকে আসতে পারে, যার অর্থ ‘সতর্ক থাকা’। একজন ব্যক্তির হাড়ে ব্যথা থেকে সতর্ক থাকা ব্যাখ্যা করতে বোঝানো হয়, যা ডেঙ্গু জ্বরের সময় হয়ে থাকে। আরেকটি ধারণা চালু আছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে যে দাসরা এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাঁকা হয়ে হাঁটত, তাদের ডাকা হতো ‘ডান্ডি ফিভার’, সেখান থেকে ‘ডেঙ্গু’ নামটি এসেছে। ডেঙ্গু একটি প্রাচীন রোগ। এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় চীনের চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্রে। চীনে রোগটি ৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে শনাক্ত করা হয়েছিল। অনেক গবেষকের দাবি, চীনে জিন রাজতন্ত্রের সময়কার (২৬৫-৪২০ খ্রিষ্টপূর্ব) নথিপত্রে এ রোগের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন বলছে, আঠারো এবং উনিশ শতকের দিকে বিশ্বব্যাপী জাহাজ শিল্পের বিকাশকালে, বন্দরনগরীগুলো গড়ে উঠতে শুরু করে, তখন ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী ভেক্টর এবং এডিস ইজিপ্টির আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়। এ জ্বরকে শনাক্ত এবং ডেঙ্গু বলে নামকরণ করা হয় ১৭৭৯ সালে। এর পরের বছর প্রায় একই সময়ে এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকায় ব্যাপকভাবে দেখা যায়। শরীরে ব্যথার কারণে তখন একে ‘হাড়ভাঙা জ্বর’ বলেও ডাকা হতো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মহামারী আকারে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১৯৫০ সালের দিকে ফিলিপিন্স এবং থাইল্যান্ডে। ১৯৭০ সালের আগে মাত্র ৯টি দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল। বর্তমানে শতাধিক দেশে ডেঙ্গু জ্বর হতে দেখা যায়। বিশ শতকের শেষ ২৫ বছরে রোগটির ব্যাপকভাবে বিস্তার ঘটে। ডেঙ্গু আক্রান্ত বাহক অন্য জায়গায় ভ্রমণের মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তি যখন অন্যত্র ভ্রমণ করেন, সেখানে তাকে এডিস মশা কামড়ালে সেটির ভেতরেও ডেঙ্গুর জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। সেসব মশা যাদের কামড়াবে, তাদের শরীরেও ডেঙ্গু জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। ১২৮টি দেশের ৩৯০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাংলাদেশে ডেঙ্গু একটি পুনরাবির্ভূত রোগ। প্রথম ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। তখন জ্বরটি ঢাকায় একসাথে অনেকের হয়েছিল বলে নাম হয় ‘ঢাকা ফিভার’। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডেঙ্গু জ্বর বলে শনাক্ত করেন। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডা: মাহমুদুর রহমান বলেন, সে সময় রোগটি ঢাকাবাসীর মধ্যেই দেখা যেত। মাত্র কয়েক মাস রোগটি থাকত। ২০১৯ সালের মতো এত ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েনি বলে আলোচনা ততটা হতো না। পরে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে রোগটির বিস্তার ঘটে। প্রথম দিকে সাধারণ জ্বরের মতো করে এর চিকিৎসা করা হতো, যেহেতু চিকিৎসকেরা বুঝতে পারছিলেন না এটি ডেঙ্গু রোগ। রোগটি শনাক্তের পর চিকিৎসা পদ্ধতিও নির্ণয় করা হয়। কিন্তু এবার যত ব্যাপকভাবে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে, এর আগে আর তেমনটি দেখা যায়নি।

চিকুনগুনিয়া
এটি চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে সৃষ্ট একটি সংক্রমণ। তানজানিয়াতে ১৯৫২ সালে প্রথম রোগটি ধরা পরে। নামকরণ করা হয় তানজানিয়ার মাকুন্দি জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত কিমাকুন্দি ভাষা থেকে। যার অর্থ ‘কুঁচিত হওয়া’ বা বাঁকা হয়ে যাওয়া। এ ভাইরাস শরীরে প্রবেশের দু-চার দিনের মধ্যে আকস্মিক জ্বর শুরু হয়। অস্থিসন্ধিতে ব্যথা থাকে, যা কয়েক সপ্তাহ, এমনকি মাস বা বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এ রোগে মৃত্যুঝুঁকি প্রতি দশ হাজারে একজন বা এর চেয়েও কম। বয়স্কদের জটিলতা বেশি হয়। এটি মশার কামড়ে মানব শরীরে প্রবেশ করে। এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস এ ভাইরাসের বাহক হিসেবে পরিচিত। এগুলো মূলত দিনে কামড়ায়। মানুষ ছাড়াও বানর, পাখি, তীক্ষè দাতওয়ালা প্রাণী, যেমন ইঁদুরে এ ভাইরাসের জীবনচক্র বিদ্যমান। রোগ সাধারণত রক্ত পরীক্ষা করে ভাইরাসের আরএনএ বা ভাইরাসের অ্যান্টিবডির মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। এ রোগের উপসর্গকে অনেক সময় ডেঙ্গু এবং জিকার সাথে ভুল করে তুলনা করা হয়। একক সংক্রমণের পর এটি বিশ্বাস করা হয়, বেশির ভাগ মানুষই অনাক্রম্য হয়ে পড়ে। এখানেই ডেঙ্গু ভাইরাসের সাথে এর পার্থক্য। কারণ, ডেঙ্গু ভাইরাস শুধু স্তন্যপায়ীদের আক্রান্ত করে। এ রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায় মশা নিয়ন্ত্রণ। পানি আছে এমন স্থানে মশা কমানো এবং পোকামাকড় প্রতিরোধক ব্যবস্থা ও মশারি ব্যবহারে এর প্রাদুর্ভাব কমানো যেতে পারে। এখনো এ রোগের প্রতিষেধক বা চিকিৎসা উদ্ভাবন হয়নি।

সাধারণত, জ্বর এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা কমাতে বিশ্রাম, তরল খাবার গ্রহণ এবং সাধারণ জ্বরের ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়। যদিও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব সাধারণত এশিয়া ও আফ্রিকায় বেশি। তবে ২০০০-এর দশকে এটি ইউরোপ ও আমেরিকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৪ সালে দশ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় দেখ গেছে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম রোগটির ভাইরাস ধরা পড়ে। ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে দেখা দেয়। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে সারা দেশে ভাইরাসটি উল্লেযোগ্য হারে লক্ষ করা গেছে। এ ভাইরাসের সুপ্তিকাল এক থেকে বারো দিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত থাকে। অনেক সময় এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। ৭২-৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দেয়। রোগটি আকস্মিক উচ্চমাত্রার জ্বর, জোড়ায় ব্যথা ও ফুসকুড়ি নিয়ে শুরু হয়। ফুসকুড়ি রোগের শুরুতেই দেখা দিতে পারে। অনেক সময় রোগ শুরু হওয়ার দুই থেকে তিন দিন পর জ্বর কমতে শুরু করলে ফুসকুড়ির আবির্ভাব হয়। এ ছাড়া অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, পেটব্যথা, ফটোফোবিয়া বা আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা, কনজাংটিভাইটিস। বড়দের আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টে প্রদাহ হতে পারে।

চিকুনগুনিয়ার ফলে ক্রনিক পর্যায়ে ছাড়া তীব্র অসুস্থতাও হতে পারে। তীব্র অসুস্থতার পর্যায়কে দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে : পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে এর প্রথম পর্যায়ে ভাইরাস রক্তে প্রবেশ করে। পরে শেষ ধাপে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারকারী পর্যায়ে পৌঁছায় যে সময়টি দশ দিন স্থায়ী হয়। এ পর্যায়ে ভাইরাস রক্তে শনাক্ত করা যায় না। সাধারণত রোগটি শুরু হয় হঠাৎ করে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে; যা ৭-১০ দিন পর্যন্তও স্থায়ী হয়। রক্তে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সাথে জ্বর আসে। রক্তে ভাইরাসটির মাত্রা যতই তীব্র পর্যায়ে পৌঁছায়, লক্ষণগুলোর তীব্রতাও বাড়তে থাকে। ভাইরাসটির রক্তে প্রবেশের পর যখন আইজিএম নামে একটি অ্যান্টিবডি রক্তস্রোতের মধ্যে বাইরের থেকে প্রবিষ্ট রোগজীবাণু-প্রতিরোধক পদার্থ সৃষ্টি করে, তখন এর প্রভাব কমতে শুরু করে। মাথাব্যথা, অনিদ্রা এবং তীব্র অবসাদ পাঁচ থেকে সাত দিন থাকে।

জাপানি এনসেফালাইটিস
ভাইরাসঘটিত রোগ। প্রধান লক্ষণ মাথাব্যথা, পেশির জড়তা, স্বরভঙ্গ ও ঊর্ধ্বশ্বাসতন্ত্রের গোলমাল। এটি বাংলাদেশের স্থানীয় রোগ নয়, মাঝে মধ্যে দেখা দেয়। ১৯৭৭ সালের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশে জাপানি এনসেফালাইটিস রোগের তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই বছর মধুপুর জঙ্গলে বসবাসকারী গারোদের মধ্যে একটি অজানা রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। পরে রোগটি জাপানি এনসেফালাইটিস বলে শনাক্ত করা হয়। এর পর থেকে এটির কথা শোনা যায়নি। ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, জলবসন্ত, গুটিবসন্ত ও অন্যান্য রোগের কারণে এটি হতে পারে। এর বাহক মশা সাধারণত জলা জায়গা, বিশেষত ধানক্ষেতে প্রচুর পরিমাণে থাকে। এ জন্য ধানচাষের সেচ ব্যবস্থাপনা ও কীটনাশকের ব্যবহার বাহক মশার বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে।

ওয়েস্টার্ন ইকুইন এনসেফালাইটিস
কিউলেক্স মশার কামড়ে রোগটি হয়। জ্বর, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি রোগের উপসর্গ। বয়স্ক লোকেরা বেশি আক্রান্ত হন। যুক্তরাষ্ট্রে রোগটি বেশি দেখা যায়। ফ্লোরিডা, জর্জিয়া ও নিউজার্সিতে প্রাদুর্ভাব বেশি। তবে সংখ্যার বিচারে তা নগণ্য। ১৯৬৪ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০০ জন। আক্রান্ত এক-তৃতীয়াংশ রোগী মারা যায়। যারা আক্রান্ত হওয়ার পর বেঁচে যায়, তাদের মস্তিষ্কে সমস্যা দেখা দেয়। এ রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই।

জিকা
সাম্প্রতিক সময়ে মশাবাহিত ভয়ঙ্কর রোগগুলোর মধ্যে জিকা অন্যতম। উপসর্গগুলো হলো জ্বর, মাথাব্যথা, অবসাদগ্রস্ততা, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, শরীরে লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি ইত্যাদি। এর কারণে জটিলতা দেখা দেয় গর্ভস্থ শিশুর, ছোট আকৃতির মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে কম।

সেন্ট লুইস এনসেফালাইটিস
কিউলেক্স মশাবাহিত ভয়ঙ্কর রোগ। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। উপসর্গ হিসেবে জ্বর, মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব ইত্যাদি হয়ে থাকে। তীব্রতা বাড়লে আক্রান্ত ব্যক্তি কয়েক দিনের জন্য সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে যেতে পারে। বয়স্করা এ রোগের ঝুঁকিতে থাকে বেশি। কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি।

লা ক্রস এনসেফালাইটিস
গাছের কোটরে জন্ম নেয়া মশা থেকে এ রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। বয়স্করা এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও ১৬ বছরের নিচের শিশুদের জন্য এটি ভয়ঙ্কর। আটলান্টিক মহাসগরের দক্ষিণ পাড়ের দেশগুলোতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। উপসর্গ হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর ও বমি বমি ভাব হয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে এ রোগে ভুগলে শারীরিক বিকলাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস
রোগটিতে আক্রান্ত ব্যক্তি স্নায়বিকভাবে দুর্বল হয়ে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। এটির ভীতিকর দিক হলো, কোনো উপসর্গ ছাড়াই দেখা দেয়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতেই পারেন না তিনি ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসে আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে বেশি দেখা যায়।

লিম্ফেটিক ফাইলেরিয়াসিস
মশাবাহিত রোগের মধ্যে লিম্ফেটিক ফাইলেরিয়াসিস কম পরিচিত হলেও এটি খুব ভয়ঙ্কর। রোগটি ফাইলেরিয়া ধরনের একটি মারাত্মক ইনফেকশন, যার প্রভাবে মানুষের পা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক গুণ ফুলে ভারী হয়ে ওঠে। আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম তীরবর্তী অঞ্চলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।

ভেনিজুয়েলা ইকুইন এনসেফালাইটিস
উপসর্গ এবং ফলাফলের দিক দিয়ে এটি ইস্টার্ন ইকুইন এনসেফালাইটিস গোত্রের রোগ। গর্ভবতীদের জন্য বেশি ক্ষতিকর। অকালে গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে। দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকায় এর প্রাদুর্ভাব বেশি।

ইয়েলো ফিভার
এর লক্ষণগুলো জন্ডিসের মতো। এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীর হলুদ রঙের হয়ে যায়। তীব্র জ্বর ও বমি বমি ভাব থাকে। আফ্রিকান দেশগুলোতে রোগটি বেশি হয়ে থাকে।

লিম্ফেটিক ফাইলেরিয়াসিস
কম পরিচিত হলেও এটি খুব ভয়ঙ্কর। রোগটি ফাইলেরিয়া ধরনের একটি মারাত্মক ইনফেকশন, যার প্রভাবে মানুষের পা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক গুণ ফুলে ভারী হয়ে ওঠে।

মশার উপদ্রপ কমানোর উপায়

উবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া এবং জেনেটিক্যালি মডিফায়েড মশা। এ দুটো পদ্ধতিই চীনে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে দুই বছর সময় ধরে। তাতে দেখা গেছে, সেখানে মশার বংশবিস্তার ৯০ শতাংশের মতো কমে গেছে।

উবাকিয়া পদ্ধতি
উবাকিয়া একটি ব্যাকটেরিয়া যা প্রকৃতিতেই থাকে। বিভিন্ন কীটপতঙ্গের দেহকোষে এ ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। ডিমের মাধ্যমে এটি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। ৬০ শতাংশ কীটপতঙ্গের দেহে উবাকিয়া থাকলেও এডিস মশার শরীরে ব্যাকটেরিয়া নেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এডিস মশার কোষে ব্যাকটেরিয়াটি ঢুকিয়ে দেখা গেছে, এর মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, জিকা ও ইয়েলো ফিভারের মতো চারটি ভাইরাসজনিত রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। ২০১১ সালে চীনে উবাকিয়া আছে এ রকম মশা ছেড়ে দিয়ে দেখেছেন, স্থানীয় মশার সাথে মিলিত হয়ে সেগুলো এমন মশার প্রজনন ঘটিয়েছে, যেগুলোর দেহেও উবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া আছে। ফ্রুট ফ্লাই বা ফলমূলে বসে যেসব মাছি; সেগুলোর কোষ থেকে সূক্ষ্ম একটি সুই দিয়ে চীনা বিজ্ঞানীরা প্রথমে উবাকিয়া সংগ্রহ করেছেন। তারপর সেই ব্যাকটেরিয়া ইনজেক্ট করে ঢুকিয়ে দেয়া হয় এডিস মশার ডিমে। এটি যে খুব সহজেই করা সম্ভব হয়েছে, তা নয়। হাজারো বার চেষ্টার পর বিজ্ঞানীরা শেষ পর্যন্ত এটি করেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূক্ষ্ম এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সময় লেগেছে ১৫ বছর। উবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া ঢুকিয়ে দেয়া ডিম থেকে জন্ম নেয়া মশার শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রবেশ করানোর পর বিস্ময়কর একটি ঘটনা ঘটে। বিজ্ঞানীরা দেখেন, ভাইরাসটি ওই মশার ভেতরে ঠিক মতো বেড়ে উঠতে পারছে না। অস্ট্রেলিয়ায় দশ সপ্তাহ ধরে পরিবেশে এসব মশা ছাড়া হয়েছে। ছাড়া হয়েছে প্রতি সপ্তাহে একবার করে। কিন্তু কয়েক মাস পরে দেখা গেছে, সেখানকার ১০০ ভাগ মশাতেই উবাকিয়া আছে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত। অস্ট্রেলিয়ার পরে এ পদ্ধতি বিশ্বের ১২টি দেশে পরীক্ষা করে সাফল্য পাওয়া গেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, কলম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম ও মেক্সিকো।

কিভাবে কাজ করে

কোনো মশা যখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীকে কামড়ায়; তখন ওই রোগীর রক্ত থেকে মশার পেটের ভেতরে চলে যায় ডেঙ্গু ভাইরাস। সেখানে তখন এমন একটি প্রক্রিয়া চলে; যাতে ওই ভাইরাসটি মশার পেটের ভেতরে খুব দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে। তারপর ওই মশাটি যখন একজন সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তখন মশার পেটের ভেতর থেকে ডেঙ্গুর ভাইরাসটি চলে যায় ওই সুস্থ মানুষের রক্তে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, মশার দেহে যদি উবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া থাকে তাহলে সে রকম ঘটতে পারে না।
বাংলাদেশে রোগ নিয়ন্ত্রণ, রোগতত্ত্ব ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, একজন রোগীর কাছ থেকে ভাইরাসটি যখন উবাকিয়া আছে এ রকম মশার পেটের ভেতরে যাবে, তখন আর ডেঙ্গুর ভাইরাসটি বেড়ে উঠতে পারে না। ফলে মশাটি যখন আরেকজনকে কামড়ায় তখন তার দেহে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটে না। ওয়ার্ল্ড মাসকুইটো প্রোগ্রামের বিজ্ঞানীরা বলছেন, উবাকিয়া আছে এরকম কোনো পুরুষ মশা যদি উবাকিয়া নেই এমন নারী মশার সাথে মিলিত হয়, তাহলে সেগুলোর ডিম থেকে বাচ্চা হবে না। কিন্তু নারী মশার দেহে কিংবা নারী ও পুরুষ উভয় মশার শরীরে উবাকিয়া থাকলে, ডিম থেকে বাচ্চার জন্ম হবে। এসব নতুন মশাতেও উবাকিয়া থাকবে। এক সময় দেখা যাবে; একটি এলাকাতে শুধু সেসব মশাই আছে যেগুলোর শরীরে উবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া আছে।

জেনেটিক্যালি মডিফায়েড বা বন্ধু মশা

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মূলত উবাকিয়া পদ্ধতি নিয়ে কথাবার্তা শুরু হলেও বাংলাদেশে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড বা জিএম মশা ছেড়ে দেয়ার বিষয়েও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। জিএম মশা দিয়ে রোগ প্রতিরোধের কথা শুনতে অনেকটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো হলেও গত কয়েক বছরে এ পদ্ধতিতে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এই মশাকে বলা হচ্ছে ‘বন্ধু মশা’। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতে ১৬ বছর ধরে গবেষণার পর এ ধরনের মশা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশে ব্যবহার করা হয়েছে ম্যালেরিয়া ও জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে। এ পদ্ধতিতে জিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে মশার কোষে জিন প্রবেশ করিয়ে এমন কিছু জেনেটিক পরিবর্তন ঘটানো হয়, যার ফলে এর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেঁচে থাকতে পারে না। ব্রিটেনে অক্সিটেক নামে একটি বায়োটেক কোম্পানির বিজ্ঞানীরা ২০০২ থেকে এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তাদের লক্ষ্য ছিল জিনগত পরিবর্তন ঘটানোর মধ্য দিয়ে পরিবেশে এডিস মশার সংখ্যা কমিয়ে ফেলা। অক্সিটেকের বিজ্ঞানীরা বলছেন, ল্যাবরেটরিতে জন্ম দেয়া এসব ‘বন্ধু মশা’ যখন প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হয় তখন পরিবেশে থাকা নারী এডিস মশার সাথে মিলিত হলে যেসব মশার জন্ম হয় সেগুলো বেঁচে থাকতে পারে না। ফলে ধীরে ধীরে এডিস মশার সংখ্যা কমতে থাকে। অক্সিটেকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ব্রাজিল, পানামা ও কেম্যান আইল্যান্ডের কোনো কোনো অঞ্চলে এ পদ্ধতিতে এডিস মশার সংখ্যা ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশে কোন পদ্ধতি

বাংলাদেশে ডেঙ্গু মোকাবেলায় এখন এ দুটো পদ্ধতির তুলনা করা হচ্ছে। উবাকিয়া পদ্ধতির ব্যাপারে ওয়ার্ল্ড মাসকুইটো প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাবও করা হয়েছে। বাংলাদেশে মশক নিধন কর্মসূচির পরেও এক আতঙ্কের নাম এডিস মশা। তবে ড. মাহমুদুর রহমান উবাকিয়া পদ্ধতির পক্ষে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক উপায় হওয়ায় এতে খরচ কম। এর ফলে মশার ইকোলজিতেও কোনো পরিবর্তন ঘটে না। এর ভালো দিক হচ্ছে- এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। শুধু একবার হস্তক্ষেপ করতে হবে। যেসব দেশে এ পদ্ধতি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও চোখে পড়েনি। সব কিছুই আগের মতো থাকবে, মশাও থাকবে, সেই মশা কামড়াবেও, কিন্তু উবাকিয়ার কারণে ভাইরাসজনিত সেসব রোগের আর সংক্রমণ ঘটবে না। অন্যদিকে, জেনেটিক্যালি মডিফায়েড মশা দিয়ে ডেঙ্গু মোকাবেলা হবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ল্যাবরেটরিতে ‘বন্ধু মশা’ জন্মাতে হবে। এ ছাড়াও প্রকৃতিতে সব সময় এ মশা ছাড়া অব্যাহত রাখতে হবে। তবে এসব পদ্ধতি অন্যান্য দেশে সফল হলেও বাংলাদেশে সেসব কতটা কার্যকরী হবে তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। প্রথম বছরে হয়তো পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যেই থাকতে হবে। তারপর ধীরে এ ধরনের মশার সংখ্যা বাড়িয়ে পুরনো এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা যেতে পারে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us