ইন্দো-প্যাসিফিক জটিলতা যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-অস্ট্রেলিয়া

লিঙ শেঙ্গলি | Sep 25, 2019 09:07 am
ইন্দো-প্যাসিফিক জটিলতা যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-অস্ট্রেলিয়া

ইন্দো-প্যাসিফিক জটিলতা যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-অস্ট্রেলিয়া - ছবি : সংগৃহীত

 

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বৈঠকগুলোতে ওয়াশিংটনের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বিকশিত করার জন্য ওই দুই দেশের সহযোগিতা কামনা করার জন্য মার্কিন আগ্রহ ফুটে ওঠেছে।

তবে ক্যানবেরা ও নয়া দিল্লি পুরোপুরি ওয়াশিংটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বর্ধিত কৌশলগত প্রতিযোগিতার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত উভয়েই বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির সাথে তাদের সম্পর্ক সামাল দিচ্ছে সতর্কতার সাথে।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার প্রশাসন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি প্রচার করছে। তাদের লক্ষ্য মার্কিন শক্তি হ্রাস রুখে দেয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে তার কৌশলগত সম্পদ সম্প্রসারিত করা। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন চায় এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে তার নেতৃত্ব সুসংহত করতে ও দৃঢ় করতে। তবে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির প্রভাব ব্যাপকভাবে নির্ভর করছে ওই চার মূল দেশের মধ্যকার বহুপক্ষীয় সহযোগিতার ওপর। তাছাড়া এই চার দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও নির্ধারণ করবে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি কিভাবে কাজ করবে।
আগ্রহ বা সামর্থ্য যেটার অভাবেই হোক না কেন, দুই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া কৌশলের কার্যকারিতা অনেকটাই দুর্বল করে ফেলবে। ফলে ওয়াশিংটন এই কৌশলকে এগিয়ে নিতে চাইলে তাকে ক্যানবেরা ও নয়া দিল্লিকে তার শিবিরে প্রলুব্ধ করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ভারতের ভৌগোলিক অবস্থান ও কৌশলগত ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত কেন এই পরিকল্পনার অংশ তার তিনটি কারণ এখানে দেয়া হলো।
প্রথমত, ভারত আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুগুলোতে আরো প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করতে চায়। আগেকার এশিয়া-প্যাসিফিক সহযোগিতার মূল বিষয় ছিল অর্থনীতি। এতে ভারতের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত।
দ্বিতীয়ত, ভারত চায় দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব হ্রাস করতে। চীনা উত্থান ও চীন-প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে হুমকি মনে করে ভারত।
তৃতীয়ত, মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফি স্ট্র্যাটেজিতে অংশগ্রহণের ফলে ভারতের পক্ষে এশিয়া-প্যাসিফিকে আরো ভালোভাবে একীভূত হতে সহায়ক হবে। আঞ্চলিক ভূমিকা বিশ্ব কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় নয়া দিল্লি দর্শক হয়ে থাকতে চায় না। তার মতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুযোগ। ফলে এই অঞ্চলে একীভূত হওয়া নয়া দিল্লির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ইস্যু।

অবশ্য নয়া দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে মতপার্থক্যও আছে। জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো মার্কিন মিত্র নয় ভারত। এ কারণে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি থেকে নিজেকে কিছুটা দূরে রেখেছে ভারত।
নয়া দিল্লি চায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তমূলক রাখতে। সে চীনের সাথে সঙ্ঘাতে যেতে চায় না। সে কেবল চীনকে টার্গেট না করে নিরাপত্তা ও অর্থনীতি উভয়ের ওপরই গুরুত্ব দিতে চায়।
ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাটিকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে অস্ট্রেলিয়া। মধ্য শক্তি হিসেবে অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তা বিষয়াদিতে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে আছে। তবে কূটনীতি ও রাজনীতির দিক থেকে সে ওয়াশিংটনের পুতুল হতে চায় না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিকে যোগদান নিয়ে ক্যানবেরা দোটানাতেও আছে। নিরাপত্তা ও রাজনীতির ব্যাপারে চীন সম্পর্কে বেশ সতর্ক সে। কিন্তু বেইজিংয়ের সাথে বাণিজ্য সম্পর্কও নষ্ট করতে চায় না সে। এ কারণেই অস্ট্রেলিয়ার জন্য সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।

ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে জোরালোভাবে অংশ নিলে চীনের সাথে সম্পর্ক সহজ করতে পারবে না অস্ট্রেলিয়া।
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশের সাথে সমীকরণ ক্রমবর্ধমান হারে জটিল হয়ে পড়তে থাকায় চীনকে সংযত রাখার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে নিজের মতে আনতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বের বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যকার বর্ধিত প্রতিযোগিতায় কোনো একটি দেশকে বেছে নিতে চায় না, বরং চায় গতিশীল ভারসাম্য বজায় রখতে। এটাই যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ককে স্বার্থ ও কৌশলগত বিকল্পের দিকে নিয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র যদি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সর্বোচ্চ মুনাফা দিতে না পারে, তবে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিকে সমর্থন করার চেষ্টা করবে না। অবশ্য ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য কাজটি কঠিন। দেশটি ‘আমেরিকান ফার্স্ট’ নীতিমুখী হওয়ায় অন্যান্য দেশকে আকৃষ্ট করার জন্য যে ফাঁকা বুলি আউড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না।
গ্লোবাল টাইমস

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us