সেই শহর এখন মৃত্যুপুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক | Apr 06, 2020 04:28 pm
সেই শহর এখন মৃত্যুপুরী

সেই শহর এখন মৃত্যুপুরী - সংগৃহীত

 

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণবন্ত নগরীগুলোর একটি নিউ ইয়র্ক সদা চঞ্চল বিশ্বনগরী। কিন্তু করোনার গ্রাসে ওই নগরী এখন খা খা করছে। যেন সাক্ষাত মৃত্যুপুরী। অবশ্য নিউ ইয়র্কে যেভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে, তাতে করে এর নাম মৃত্যুপুরীই হতে পারে।
এই নগরী থেকে শিক্ষিকা আদৃতা মুখোপাধ্যায় সেখানকার বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন। সেখানে যে কত কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে, এই লেখাতেই তা ফুটে উঠেছে। এখানে তার জবানিতেই লেখাটি তুলে ধরা হলো।

আমি গত ১১ বছর ধরে দেশের বাইরে। পড়াশোনার সূত্রে প্রথমে লন্ডন আর এখন নিউইয়র্ক। কিন্তু এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন এই প্রথম। নিউইয়র্ককে বলা হয় বিনিদ্র রাতের শহর। হ্যাঁ, স্বীকার করতে বাধা নেই, প্রথম যখন টাইমস্ স্কোয়্যারে এসে দাঁড়াই, মনে হয়েছিল দুর্গা পুজোর ভিড়কেও বোধ করি হার মানিয়ে দেবে। পশ্চিমের যত দেশে গিয়েছি, এমন লক্ষাধিক মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত জনসমাগমের সাক্ষী সেই প্রথম বার হই। সেই প্রেমে পড়ে যাওয়া টাইমস্ স্কোয়্যার আজ জনমানবহীন। খাঁ খাঁ করছে পুরো শহরটাই। এ যেন এক মৃত্যুপুরী।

গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। যার সিংহভাগ এই নিউইয়র্কের। এই শহর আসলে ক্যাপিটালিস্ট মোড়কে মোড়া সোশ্যালিস্ট শহর। তাই এই অতিমারি পরিস্থিতিতে সারা শহর জুড়ে মোট ৪২৫টি আউটলেট খোলা হয়েছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়, যাতে মানুষ তিনবেলা খাবার সংগ্রহ করতে পারেন। বয়স্ক এবং বাচ্চা নিয়ে কোনও পরিবার যাতে অভুক্ত না থাকে। বিনা পারিশ্রমিকে ডাক্তার এবং নার্সদের বাচ্চাদের জন্য এগিয়ে এসেছেন অনেকে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সদের জন্য রাস্তায় পার্কিং বিনামূল্যে করে দিয়েছেন মেয়র। কলম্বিয়া ফ্রন্টলাইনের স্বাস্থ্যকর্মীদের ১২০০ মার্কিন ডলার করে দেওয়া হচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এবং গভর্নর শহরে থাকা সমস্ত ভেন্টিলেটর পুরো দামে কিনে নিতে চলেছেন, যাতে বিনা চিকিৎসায় একটা প্রাণও না যায়। লক্ষাধিক আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ৩ হাজার মৃত, তবু এই শহরে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে। তাই ভয় পাচ্ছি না।

আমার স্বামীও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিজ্ঞানী। আমাদের ছোট বাচ্চা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরোধে ও আপাতত বাড়ি থেকেই কাজ করছে। কিন্ত পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হলে আক্রান্ত মানুষের সেবায় ওকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনে গিয়ে থাকতে হতে পারে। আমিও বাড়িতে বসে অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছি। আমরা অনলাইনে বাচ্চার খাবার, ডায়পার, মুদিখানা এবং বাকি প্রয়োজনীয় জিনিস এখনও কিনতে পারছি।

এই ঘরবন্দি জীবনে বাবা-মা ,বৃদ্ধ ঠাকুমা—দিদা, শাশুড়ি আর আমার একান্নবর্তী পরিবারের জেঠু, জেঠিমা, কাকা, কাকিমা, মাসি, পিসি, ভাইবোন— সবার জন্য ভীষণ উদ্বেগে রয়েছি। সেইসব মানুষগুলো, যাঁরা আমাদের চেয়ে অনেক খারাপ আছেন, কষ্টে আছেন, জীবন এবং জীবিকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি যত তাড়াতাড়ি কেটে যায়, ততই ভাল। আমি চাই, নিদ্রিত শহর আবার বিনিদ্র হয়ে উঠুক। আমার পরিবার, আমার শহর, আমার দেশ ভাল থাকুক। সকলে সুস্থ থাকুন।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us