করোনা প্রতিরোধ : ফিলিপাইনের আশ্চর্য ব্যবস্থা

বিনাইফার নওরোজি | Apr 22, 2020 06:40 pm
করোনা প্রতিরোধ : ফিলিপাইনের আশ্চর্য ব্যবস্থা

করোনা প্রতিরোধ : ফিলিপাইনের আশ্চর্য ব্যবস্থা - সংগৃহীত

 

আইন বিভাগ সরকারকে বিপুল ক্ষমতা দিচ্ছে। সাংবাদিকদের তাদের প্রতিবেদনের জন্য কারাদণ্ড দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। কারফিউ লঙ্ঘনকারীদেরকে কুকুরের খাঁচায় আটকে রাখা হচ্ছে। গোপন তথ্য ফাঁসকারী মেডিক্যাল স্টাফ ‘গায়েব’ হয়ে যাচ্ছেন। এশিয়ায় কোভিড-১৯ মহামারির প্রতি আঞ্চরিক প্রতিক্রিয়ার একটি হলো একটি অন্ধকার দিক।

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে কর্তৃপক্ষ তাদের ক্ষমতা বাড়ানো, সমালোচকদের দমন করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে কিংবা ভাইরাসটির বিস্তার নিয়ে সত্য তথ্য প্রকাশ করছে না, ফলে হাজার হাজার লোকের জীবন ঝুঁকিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।

মহামারিটি চীনে উদ্ভব হলেও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে তুলনামূলক কমই ছড়িয়েছে। চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশে ৫ হাজারের বেশি ছড়ায়নি। সংক্রমণ দমনে বেশ কয়েকটি দেশের উদ্যোগ প্রশংসা পেয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভাইরাসটি প্রতিরোধের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
কিন্তু এশিয়ার কয়েকটি দেশে ভাইরাসটির বিস্তার নিয়ে তথ্য প্রচার পরিকল্পিতভাবে গোপন করেছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো চীন। সেখানে সংক্রমণের বিস্তার নিয়ে এখনো বিধিনিষেধ রয়েছে।


যে চিকিৎসক প্রথমে ভাইরাসটি শনাক্ত করেছিলেন, তাকে পুলিশ নীরব করে দিয়েছিল। আইনের অধ্যাপক জু ঝানগ্রুন এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলে চীনা সরকার এর নিন্দা করে জানায় যে এতে কাল্পনিক তথ্য দেয়া রয়েছে। তার অনলাইন অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করা হয়, তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। এর পর থেকে সরকার নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রকাশ করে নিজের দায় অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।

জাপানে ২০২০ সালের অলিম্পক গেমস স্থগিত করার পরই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার খবর পাওয়া যেতে থাকে। এর ফলে সন্দেহের সৃষ্টি হয় যে সরকার হয়তো আগে পরিকল্পিতভাবে তথ্য গোপন করছিল যাতে চলতি বছরই গেমসটি আয়োজন করা যায়। জাপান জানিয়েছে, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থার ওপর চাপ এড়াতে তারা ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষার নীতি গ্রহণ করেনি। তবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে সরকার পরীক্ষা করা, শনাক্ত করা ও চিকিৎসা করার তিন ব্যবস্থাই জোরদার করেছে।

সবচেয়ে চরম উদারহণ হলো উত্তর কোরিয়া। এতে অবশ্য বিস্ময়ের কিছু নেই। দেশটির কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের একটি রোগীও পাওয়ার কথা জানায়নি। দেশটি জানুয়ারি মাসেই চীনের সাথে তার সীমান্ত বন্ধ করে দিলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশটিতে ভাইরাস প্রবেশ করেছে। তারা বলছেন, সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

আরো কয়েকটি দেশের বিভ্রান্তজনক পদক্ষেপের ফলে গরিব ও সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর লোকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। মিয়ানমার ২৪ মার্চ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে দেশের কারো আক্রান্ত হওয়ার কথা গোপন রেখেছিল। সরকারের একজন মুখপাত্র দাবি করেছিলেন যে মিয়ানমারের লোকজনের অপেক্ষাকৃত ভালো জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাসের কারণেই তারা ভালো আছে।
ইন্দোনেশিয়া সরকারও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল ধীরে ধীরে। অথচ এখন দেশটির মৃত্যু হার বৈশ্বিক গড় হারের চেয়ে দ্বিগুণ।
ভারত তাড়াহুড়া করে লকডাউনের নির্দেশ দিলে প্রান্তিক সম্প্রদায়ের লোকজন কঠিন অবস্থায় পড়ে। খাদ্য ও জীবিকা থেকে তারা বঞ্চিত হয়। হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক আটকা পড়ে যায়। পুলিশের কঠোরভাবে লকডাউন পালন করতে বাধ্য করার কথাও প্রকাশ পায়।
এশিয়ার বিশাল অংশে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার সময় কথা বলার স্বাধীনতার ওপর কর্তৃপক্ষ আরো কড়াকড়ি আরোপ করে।

কারফিউ লঙ্ঘনকারীদের ওপর ফিলিপাইন সরকার কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যেই সেখানে ১৭ হাজারের বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, শিশুসহ অনেক লোককে রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়, কুকুরের খাঁচায় আটকে রাখা হয়। সেখানে এমনকি কাউকে কাউকে বদ্ধ কফিনেও রাখা হয়। ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুদার্তে ঘোষণা করেন, কারফিউ লঙ্ঘনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হবে।
ভাইরাস সম্পর্কে গুঞ্জন ছড়ানোর অভিযোগে কম্বোডিয়ায় অনেক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এসব গ্রেফতার হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
মিয়ানমারে ‘ভুয়া খবর’ প্রকাশ করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সেখানে সামরিক ব্যক্তিদের বিপুল ক্ষমতা দিয়েছে।

কঠোর পদক্ষেপে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা যাবে না। এটি জনস্বাস্থ্যের একটি সঙ্কট। রাষ্ট্রগুলোর উচিত হবে বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা, স্বচ্ছতার সাথে এবং সবার স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখে।
আমরা সতর্ক না হলে আরেকটি বিপজ্জনক রোগ ওঁত পেতে রয়েছে সামনে আসার জন্য। সেটি হলো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতি।

এশিয়া টাইমস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us