আমফানের পর কি নিসর্গ হানা দিচ্ছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক | May 26, 2020 03:35 pm
আমফানের পর কি নিসর্গ হানা দিচ্ছে?

আমফানের পর কি নিসর্গ হানা দিচ্ছে? - সংগৃহীত

 

মাত্র কয়েক দিন আগে আমফান হানা দিয়েছে। ভয়াবহ এই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব এখনো বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দৃশ্যমান। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে ঝড়ো হাওয়া। বাংলাদেশে আজ দুপুরে আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বাসস’কে জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

বাসসের খবরে বলা হয়েছে, আবহাওয়ার অফিসের এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এই ঘোষণার ফলে অনেকের মধ্যেই আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে আমফানের পর নিসর্গ নামে যে ঘূর্ণিঝড়টি আসার কথা তা এসে গেছে কি না।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসের খবরে বলা হয়েছে, বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তি দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

আজ সকাল ৯টা থেকে দুপর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা জানানো হয়েছে, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলসমূহে উপর দিয়ে দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সাথে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এসব এলাকার নদীবন্দরসমুহকে ১ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে ভারতের আবহাওয়ার খবরে বলা হয়, সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় ঢোকার পরে মুখ ঘুরিয়ে তার বাংলাদেশে চলে যাওয়া দেখতেই অভ্যস্ত পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু আমফন কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা হয়ে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ গেল কেন? আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, মিয়ানমার লাগোয়া বাংলাদেশ উপকূলে দাঁড়িয়ে থাকা উচ্চচাপ বলয়ের ধাক্কাতেই আমপান বাংলাদেশের দিকে বাঁক নিতে পারেনি। উল্টে সোজা উঠে এসেছে কলকাতার দিকে। তাতেই এমন বিধ্বংসী হামলা হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের।

ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য দেখা গিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় পারাদ্বীপ পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে এলে তা উপকূল ঘেঁষে বাংলাদেশের দিকে চলে যায়। এর আগে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর কিংবা ২০১৯ সালে বুলবুলের সময় তা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু গত বুধবার মিয়ানমার লাগোয়া বাংলাদেশ উপকূলের কাছে একটি শক্তিশালী উচ্চচাপ বলয় ছিল। তার ধাক্কাতেই সুন্দরবন থেকে বাঁক নিতে পারেনি আমপান। আবহবিদেরা জানান, স্থলভূমিতে ঢোকার পরেই কলকাতার উত্তর-পূর্ব দিক থেকে কোনাকুনি ভাবে উঠে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশে গিয়েছে আমপান। সাধারণত, উপকূলের কাছে এলেই ঘূর্ণিঝড় শক্তি খোয়াতে শুরু করে। গোকুলবাবু বলছেন, ‘‘এ বার পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের কাছেও সাগরের জলের উষ্ণতা স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি ছিল। তার ফলে পানি বাষ্পীভূত হয়ে স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার আগে পর্যন্ত আমপানকে শক্তি জুগিয়েছে।’’

আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, কলকাতা-সহ বঙ্গের একাংশে এখন দমকা হাওয়া বইছে। আবহবিদেরা জানান,বঙ্গের বায়ুচাপের ভারসাম্যে কিছু ‘অস্বাভাবিকতা’ রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ও উত্তরবঙ্গের একাংশে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা আসতে দেরি থাকলেও আমফানের প্রভাবে সাগর থেকে হাওয়া ঢুকছে। সব মিলিয়েই এই পরিস্থিতি। তবে এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের ঘূর্ণিঝড় নিয়ে নানান গুজব শুরু হয়েছে। আবহবিজ্ঞানীরা জানান, আপাতত কোনও ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা নেই। ‘নিসর্গ’ বলে একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছড়িয়েছে। মৌসম ভবনের যে ঘূর্ণিঝড় নামকরণের তালিকা রয়েছে তাতে প্রথম নাম নিসর্গ। পরবর্তী কালে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় হলে সেই নাম দেয়া হবে। কিন্তু সেটা এখনই হবে এমন কোনো ঘোষণা আবহাওয়া দফতর করেনি।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us