পুলিশ বনাম সাংবাদিক

আবু রূশ্দ | Jun 18, 2020 10:08 pm
বাংলাদেশ পুলিশ

বাংলাদেশ পুলিশ - প্রতীকী ছবি

 

প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম গিয়াস কামাল চৌধুরীর সাথে ২০০৪ সালে একটি দেশ সফর করেছিলাম। ১৪ দিন একসাথে ভ্রমণ করায় তার মতো সিনিয়রের সাথেও বেশ সহজ একটা সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তিনি সে সময় আমাকে তার দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনের নানা চমকপ্রদ ঘটনা শুনাতেন। বয়স হওয়ায় তার শরীর-স্বাস্থ্য ততটা ভালো ছিল না। তাই খুব আস্তে আস্তে সময় নিয়ে নানা গল্প করতেন। আমাকে টিমের সবচেয়ে জুনিয়র পেয়ে প্রায় রাতেই খাওয়ার পর দীর্ঘ আসরে বসে যেতেন। একদিন সাংবাদিকতার নীতিমালা প্রসঙ্গে তার সাথে তর্ক লেগে গেল। তিনি অনেক কথাই বললেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে বললেন, রূশ্দ, মনে রাখবেন, সাংবাদিকতা এস্টাবলিশমেন্টের প্রশংসা করা বা তাদের প্রেস ইউনিটের মুখপত্রের মতো কথা বলার কাজ নয়। এটা মূলত এন্টি এস্টাবলিশমেন্ট পেশা। ঝুঁকি তাই অনেক। আপনার কাজ হচ্ছে এর মাঝেই সূত্র তৈরি করা, তথ্য জোগাড় করা এবং সেসব তথ্য নিয়ে রিপোর্ট করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া!

ক্যাডেট কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে সরাসরি এস্টাবলিশমেন্টে যোগ দিয়েছি ১৮ বছর বয়সে। ২০ বছর বয়সে অফিসার হয়েছি সেনাবাহিনীতে। এরপর সাংবাদিকতায় এসে মাথায় চক্কর দেয়ার অবস্থা। এর মাঝে প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়ে রিপোর্ট করতাম বা কলাম লিখতাম বলে অনেক কিছুই ছিল প্রো-এস্টাবলিশমেন্ট। আমার বিশ^াস ছিল, সশস্ত্র বাহিনী সব সমালোচনা, বিতর্ক ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে। তারা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তাই তাদের নিয়ে যখন বেশির ভাগ লেখক, সাংবাদিক নেতিবাচক কথা বলেন, তখন আমি না হয় আমার আগের পেশার পক্ষে দু-চারটি কথা বলি। গিয়াস কামাল ভাই ওই প্রসঙ্গে আমাকে আর কখনো সরাসরি প্রো-এস্টাবলিশমেন্ট হয়ে না লেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এরপর থেকে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সম্পর্কে লিখতে গেলেই এ পরামর্শের কথা মনে পড়ে।

যত দিন দৈনিক পত্রিকায় কাজ করেছি তত দিন কখনো পুলিশ নিয়ে কোনো রিপোর্ট করিনি বা করতে হয়নি। কারণ, ওটা আমার সাবজেক্ট ছিল না। এছাড়া পুলিশ নিয়ে নেতিবাচক ধারণাই ছিল বেশি। নানা কাহিনী শুনতাম কলিগদের কাছে। জীবনে একবারই শুধু একজন পুলিশ অফিসারের সাথে কিছুটা ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। তিনি ছিলেন আমার পিতার বয়সী। মরহুম আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন। বাংলাদেশ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত আইজি, অতিরিক্ত আইজি ছিলেন। তার আরেকটা বড় পরিচয় হলো তিনি একজন প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত। চাকরিকালে তদানীন্তন পাকিস্তানে ও স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি সুপরিচিত ছিলেন ডাকসাঁইটে কর্মকর্তা হিসেবে । তার লেখনীতে জাদু ছিল। তার লেখা কোনো গল্প বা বই একবার শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যেত না।

নব্বইয়ের দশকে তখন দৈনিক পত্রিকা ছাড়াও কয়েকটি সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতাম। ওর মধ্যে একটি ছিল পাক্ষিক পালাবদল। ওখানে লিখতেন সৈয়দ আলী আহসান, আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন, আল মাহমুদ, ড. তারেক শামসুর রেহমান প্রমুখ। এসব সিনিয়র মানুষের সাথে আমি বেমানান। তার পরও কী কারণে যেন, লিখতে হতো। পালাবদল কর্তৃপক্ষ লেখক সম্মানী তো দিতেনই, প্রায়ই দুই-তিন মাস পরপর দেশবরেণ্য লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিকদের দাওয়াত করে একটি মিলনমেলার আয়োজন করতেন। তখন দেখা হতো আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনের সাথে। একবার খাবার টেবিলে তার ঠিক পাশেই বসেছি আমি। তিনি খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে নানা প্রশ্ন করছেন। তার কাছে বিস্ময়কর ছিল কেউ সেনাবাহিনীর অফিসার থেকে সাংবাদিক হয় কিভাবে? অত্যন্ত রাশভারী কিন্তু অমায়িক।

আমি জীবনে আর দ্বিতীয় কোনো সিনিয়র পুলিশ অফিসারের সাথে ব্যক্তিগত সখ্য গড়তে পারিনি। তবে আমাদের ক্যাডেট কলেজের অনেকেই পুলিশের দায়িত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন। মজার ব্যাপার, তাদের সাথেও এই ঢাকায় থেকেও যোগাযোগ হয় না বললেই চলে। পুলিশ দেখলেই কেন জানি নিজেকে বিড়াল বিড়াল মনে হয়! কোনো ট্রাফিক সার্জেন্ট যখন গাড়ির কাগজ চেক করতে গাড়ি থামান তখন যেন হার্টবিট মিস হয়! হতে পারে পুলিশ সম্পর্কে আমাদের সাধারণ ধারণা থেকেই এমনটি ঘটে। একবার গাড়ি ড্রাইভ করছিলাম। সাধারণত মানিব্যাগে ড্রাইভিং লাইসেন্স রাখি। কিন্তু সে দিন কেন জানি ছিল না! বনানী কাকলী মোড়ে ঠিকই পুলিশ সার্জেন্ট আমার গাড়িটিকেই পাশে দাঁড়াতে বললেন। গাড়ির সব কাগজপত্র ঠিক ছিল, কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই! আমি কোনো দিন গাড়িতে ‘সাংবাদিক’ লেখা স্টিকার ব্যবহার করি না। কেউ জিজ্ঞেস না করলে পরিচয়ও দেই না। সার্জেন্ট আমি কী করি সেই পরিচয়ই জানতে চাইলেন! মিনমিন করে সাংবাদিক পরিচয় দিলাম। সাথে এটাও বললাম, লাইসেন্স সাথে না নিয়ে বের হওয়ার অপরাধে পুলিশের বিধান অনুযায়ী আমার যা ফাইন হওয়ার তা আমি দিতে রাজি। তার চেহারা পাল্টে গেল। তিনি খুবই ভদ্রভাবে বললেন, ‘ভাই আপনাদের সাংবাদিকরাও অনেকে আমাদের পুলিশকে দেখতে পারেন না! আমরা যখন কোনো গাড়ি চেক করতে দাঁড় করাই তখন সবাই চোটপাট করেন, পুলিশের পরিচিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে ওই ছোট বিষয়েও তদবির করেন। আপনি যখন প্রথমেই ভুল স্বীকার করে ফাইন দিতে চাচ্ছেন, আমি ফাইন করব না। আপনি যেতে পারেন।’ আমি তার পরও তাকে আমার প্রেস কার্ড ও জাতীয় প্রেস ক্লাব সদস্যের কার্ড দেখানোর জন্য মানিব্যাগ থেকে বের করলাম। তিনি ওগুলোর দিকে ফিরেও তাকালেন না।

ঢাকায় যতবার পুলিশের মুখোমুখি হয়েছি ততবারই একটা বিষয় লক্ষ করেছি যে, তাদের পেশাকে মর্যাদা দিয়ে ভদ্র ভাষায় কথা বললে তারা সমস্যার সমাধান করে দেন।

হয়তো পদমর্যাদা বা সামাজিক মর্যাদায় ওই পুলিশ সদস্য আমার-আপনার চেয়ে উঁচু না হলেও পুলিশ হলো, রাষ্ট্রের আইন বাস্তবায়নের বৈধ সংস্থা, যাকে আইনগতভাবেই হেয় করার কারো সুযোগ নেই।

একবার ইসলামাবাদ সফরের সময় পত্রিকায় দেখি জনৈক পুলিশ সার্জেন্ট কোনো একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেলকে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের জন্য কাগজ ধরিয়ে দিয়েছেন। পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর মর্যাদা বলতে গেলে সবার উপরে। তিন বাহিনীপ্রধান ও জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যানের মর্যাদা প্রটোকলে ফেডারেল মিনিস্টারের সমান! কিন্তু পুলিশ সেখানেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তাই ওই জেনারেল সাহেবকে ঠিকই ফাইন দিতে হয়েছিল।

অনেক পুলিশ সদস্য হঠাৎ করে ঢাকা বা বড় শহরে পোস্টিং পেয়ে কিছুটা রূঢ় আচরণ করে থাকেন, সেটা সত্য। ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছু দিন আগে এমনি এক বিদঘুটে ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল আমিসহ কয়েকজন রিপোর্টারকে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদ বহু দিন অস্ট্রেলিয়ায় থাকার পর ঢাকায় আসবেন। তার ওপর তখন আদালতের খড়গ ঝুলছিল। কয়েক বছর জেল হওয়ার রায় হয়েছিল তার অনুপস্থিতিতে। আমি তখন দৈনিক ইনকিলাবে সিনিয়র রিপোর্টার। প্রতিরক্ষা বিটের সাথে জাতীয় পার্টির বিটও আমাকে দেখতে হয়। জাতীয় পার্টি আবার তখন তিন ভাগে বিভক্ত। শোনা যাচ্ছিল, কাজী জাফর আহমদ ফিরে এসে বিএনপির সাথে জোট বাঁধা বিজেপিতে যোগ দেবেন। দৈনিক পত্রিকায় জাতীয় পার্টির বিট কভার করেন এমন সব রিপোর্টার ছাড়াও টিভি চ্যানেলগুলো হাজির বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের গেটে।

প্রথামাফিক সাংবাদিকদের কার্ড দেখে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিতেন প্রহরীরা। অবশ্য সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আগে আমাদের নাম পাঠিয়ে দেয়া হতো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে। কোনোবারই কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়নি। সে দিন গেটে গিয়ে দেখি ইয়া লম্বা একজন ইন্সপেক্টর ওয়াকিটকি হাতে দাঁড়ানো। তিনি বিমানবন্দর থানার ওসি। কোনোভাবেই আমাদের ঢুকতে দেবেন না। অত্যন্ত রূঢ় ভাষায় বললেনÑ কিসের সাংবাদিক, ফাংবাদিক! এটা ভিআইপি লাউঞ্জ!ঢুকতে দেবো না! গেটের প্রহরীর কাছে আমাদের তালিকা ছিল। সেও ওসি সাহেবকে বুঝাতে গেলেন। কিন্তু তিনি অনড়। এদিকে ফ্লাইট চলে আসার সময় হয়ে গেছে প্রায়। তখন সেখানে দেখার মতো এক হট্টগোল বেধে গেল। আমরা যতই ওসি সাহেবকে বোঝাতে যাই তিনি ততই হম্বিতম্বি করেন। পাশে একজন কনস্টেবল ছিলেন। তিনি এসে এক ফাঁকে আমাদের আস্তে করে জানিয়ে গেলেন যে, ওই ওসি সাহেব মাত্র দু’দিন হয় সাতক্ষীরা (যতদূর মনে পড়ে) থেকে পোস্টিং হয়ে বিমানবন্দর থানায় এসেছেন। কোনো দিন ঢাকায় চাকরি করেননি। তাই ওই রকম করছেন। এছাড়া কাজী জাফর আহমদকে বের হয়ে আসার সময় গ্রেফতার করা হবে বলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আমরা বাধ্য হয়ে পুলিশ কমিশনারকে মোবাইলে ফোন করলাম। তিনি শুনে তো অবাক।

বললেন, আপনারা একটু অপেক্ষা করুন, আমি ব্যবস্থা করছি। মিনিট দুয়েকের ভেতর দেখি ওসি ইমিগ্রেশনে এসে হাজির। তিনি ওই ওসি সাহেবকে টেনে একদিকে নিয়ে গিয়ে কী যেন বললেন। ফিরে এসে নিজে আমাদের অনুরোধ করলেন ভেতরে যেতে। কয়েকজন সহকর্মী তখনো মহাক্ষ্যাপা। তারা ওসিকে দু-চার কথা শুনিয়ে তারপর ভেতরে গেলেন। এরপর দেখি, একজন এসপি পদের কর্মকর্তা এসে হাজির। তিনি পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটালেন। ওসি সাহেবও এসে বিনয়ের সাথে মাফ চাইলেন, সরলভাবে বললেন- ‘ভাই আমি কোনো দিন মেট্রোপলিটন শহরে কাজ করিনি। আমি জানতাম, ভিআইপি ছাড়া কেউ এখানে ঢুকতে পারবেন না। সাংবাদিকদের যে ওখানে প্রায়ই যেতে হয় অ্যাসাইনমেন্ট কভার করার জন্য, তা জানা ছিল না।’ আমরাও তার অসহায়ত্বের অবসান ঘটালাম চায়ের অফার করে।

পুলিশকে নিয়ে কথা বলতে বা লিখতে হলে হাজারো ঘটনা চলে আসবে। পুলিশকে তার কাজের জন্যই দেশের সব শ্রেণীর মানুষের সাথে মিশতে হয়। সেখানে রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তি যেমন থাকেন তেমনি চোর, গুণ্ডা, ডাকাত, ধর্ষক সবই পুলিশকে ‘ডিল’ করতে হয়। তারা সবার নাড়ি নক্ষত্র জানেন এবং কারো দিকে লক্ষ করলে তার সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন। এভাবে নানা পেশার মানুষের সাথে মিশতে হয় বলে পুলিশের আচরণ ও চরিত্রগত কতগুলো বিষয় অন্য পেশার মানুষ বুঝতে পারেন না। সাংবাদিকতাও অনেকটা তাই। এই পেশায় থেকে দেশের এক নম্বর ব্যক্তি অর্থাৎ প্রেসিডেন্টের সাথে যেমন দেখা করেছি, প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে পেরেছি, তেমনি ‘উঁচু স্তরের’ পতিতা বা এসকর্ট গার্লদের ‘সুসভ্য’ দালালদেরও দেখা পেয়েছি। সীমান্তে রিপোর্ট করতে গিয়ে রাতে কৃষকের ঘরের খড়ের গাদায় শুয়ে ঘুমিয়েছি, আবার পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর হোটেলের স্যুইটে থেকেছি। মূলত ফ্রিকোয়েন্সি এত এলোমেলো হওয়ায় পুলিশ ও সাংবাদিকদের অনেকে ঠিক বুঝতে পারেন না।

বর্তমান সরকারের সময় কয়েক বছর আগে একবার ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত একটি দেশের রাষ্ট্রদূত আমাকে ও আমার স্ত্রীকে তার বাসায় এক অনুষ্ঠানে দাওয়াত করেছিলেন। তখন দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব গরম। ওই দাওয়াত ছিল নিতান্তই ব্যক্তিগত স¤পর্কের বিষয়। তার বাসায় গিয়ে দেখি, পশ্চিমা প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়ার মতো দেশের হাইকমিশনাররা সস্ত্রীক আমন্ত্রিত। সম্ভবত আমরাই ছিলাম সব ‘সাদা’ কাকের মধ্যে একমাত্র ‘কালো কাক’ জুটি! ঘরোয়া ওই অনুষ্ঠানটি ছিল সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের ভিসা কাউন্সিলরের স্বামী অধ্যাপক অশোক নাথের লেখা সামরিক ইতিহাস সম্পর্কিত একটি বই প্রকাশনা উপলক্ষে।

অধ্যাপক অশোক নাথ একসময় ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসার। তার পিতাও ছিলেন ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। অশোক নাথ ক্যাপ্টেন থাকাকালে সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ইউরোপে চলে যান। সেখানে লেখাপড়া করে একটি বিখ্যাত বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘ দিন। বিয়ে করেন ওই দেশের এক নারীকে। ড. নাথ এই উপমহাদেশ শুধু নয়, ইউরোপেও সাঁজোয়া কোরের (ট্যাংক বাহিনী) ব্যাপারে একজন প্রখ্যাত ঐতিহাসিক। বাংলাদেশে থাকার সময় তিনি আমার জার্নালে কয়েকটি আর্টিক্যাল লিখেছিলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া কোরের ইতিহাস তার বইয়ে সংযুক্ত করার জন্য তিনি আমার সহায়তা নিয়েছিলেন। তার বাসাতেও আমার হরদম যাতায়াত ছিল। যা হোক, সুন্দর একটি সন্ধ্যা পার করে আমরা বাসায় এলাম। দিন কয়েক পর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে এক জায়গায় দেখা হলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সিনিয়র এক কর্মকর্তা জানতে চাইলেন, ‘আমি কেন ওই ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতের বাসায় গিয়েছিলাম? কিভাবে রাষ্ট্রদূতের বাসায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি? ওখানে প্রায় সব রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।’ আমার সে বন্ধু তাকে জানালেন, আমাকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। ওভাবে তো কত দাওয়াতেই গিয়ে থাকি। গোয়েন্দা কর্তা তা মানতে নারাজ! তার বিশ^াস, কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই আমি কাঠখড় পুড়িয়ে ওখানে যেতে পেরেছি! কোনো একটি রাজনৈতিক দল আমাকে দূতিয়ালি করতে পাঠিয়েছে! যেহেতু ওই দলের নেত্রীর সাথে আমার কয়েক দিন আগে দেখা হয়েছিল তাই তিনি ফিল্ড রিপোর্ট থেকে যা পেয়েছেন তা আর যাচাই বাছাই না করে সরল অঙ্কের মতো ‘দুয়ে দুয়ে চার’ বানিয়ে দিয়েছেন! আমি যে সাংবাদিক হিসেবে ওই নেত্রীর সাথে দেখা করেছিলাম তা কিন্তু বিবেচনায় নেয়া হয়নি! ‘এই অভিযোগ’ হয়তো এখনো ওই সংস্থায় আমার ফাইলে ওইভাবেই বর্ণিত আছে!

কে বোঝাবে যে, সাংবাদিকদের সম্পর্ক থাকে বিস্তৃত। আমলাদের থাকে পদাধিকার অনুযায়ী ভিন্নমাত্রার আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক। এভাবেই সাংবাদিকদের তৎপরতাকে অনেকে ভুল বোঝেন। পুলিশের অবস্থাও অনেকটা সেরকমই। এর ওপর বিভিন্ন সরকার পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করায় ভুল বোঝাবুঝি আরো বেড়ে যায়। অন্য পেশাজীবীও রাজনৈতিক কারণে অনেক ‘নয় ছয়’ করেন, তা কিন্তু অতটা আলোচনায় আসে না। অন্তত এ ক্ষেত্রে পুলিশ বাহবা পেতে পারে যে, তাদের অনেকের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সংবাদপত্রে রিপোর্ট হলে বা সমালোচনার ঝড় উঠলে পুলিশ একটি বাহিনী হিসেবে ঝাঁপিয়ে পড়ে না ওইসব সংবাদকে ‘দেশবিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করতে। ব্যতিক্রম আছে। তবে সাধারণত পুলিশের সহনশীলতা অনেক বেশি। এখানে ছোট করে আরেকটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলে রাখি। ২০১৫ সালে কোনো অপরাধ না করেও একটি বড় ধরনের বিপদে পড়েছিলাম। কী করব, ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন যাকে কখনো সামনে থেকে দেখিনি তেমন একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার ঘটনা জানতে পেরে সাথে সাথে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

নিজে দায়িত্ব নিয়ে আমাকে উদ্ধার করেছিলেন ওই বিপদ থেকে। তিনি যদি সেদিন তা না করতেন, হয়তো আমার জীবনটা অন্যরকম হয়ে যেত। পরে ওই পুলিশ অফিসার ভদ্রলোক আরো বড় পদে আসীন হয়েছেন। একদিন মাত্র তার সাথে সামনাসামনি হঠাৎ দেখা হয়েছিল। সেদিন তাকে ধন্যবাদটুকু পর্যন্ত জানাতে পারিনি। অমায়িক ওই মানুষটি চিরজীবন মনে গেঁথে থাকবেন একজন পেশাদার ও দেশপ্রেমিক অফিসার হিসেবে।

এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য পুলিশকে মহিমান্বিত করা নয়। কোনো সরকারি বাহিনীকেই মহিমান্বিত করার প্রয়োজন নেই। কারণ তারা সবাই নিজেদের শপথ অনুযায়ী, জনগণের সেবক। তবে, পুলিশকে নিয়ে যত সমালোচনা বা নেতিবাচক কথাবার্তা প্রচলিত আছে তাতে মনে হয় তাদের সুখ-দুঃখের কিছু বিষয়ও মানুষের সামনে তুলে ধরা দরকার। বিশেষ করে চলতি বছর মার্চ মাসে যখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয় তখন থেকে পুলিশ যেভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তাতে তাদের ‘স্যালুট’ না করলে অন্যায় হবে। ঢাকার কথাই ধরুন। প্রায় দেড় কোটি মানুষের এই শহরে যেসব পুলিশ সদস্য ডিউটি করেন তাদের দিকে একবার তাকান। চার দিকে করোনাভাইরাসের জীবাণু কিলবিল করছে। ওর মাঝেই পুলিশ মুখে হয়তো শুধু মাস্ক পড়ে তার দায়িত্ব পালন করছেন। তারও পরিবার রয়েছে। রয়েছে মায়ার টান। তিনি খুব ভালো করেই জানেন, যেকোনো মুহূর্তে তিনি সংক্রমিত হতে পারেন।

কারণ, পুলিশকেই যে কেবল সরাসরি বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের কাছে যেতে হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে এবং অসচেতন মানুষের গায়ের সাথে তাদের গা লাগছে। ওই পুলিশ কিন্তু তার পরও কাজ করছেন। ডিউটি শেষে বাসায় যাবেন কিভাবে সে চিন্তা তার মাথায় চাপাচ্ছে অতিরিক্ত বোঝা। কারণ, পুলিশদের একসাথে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সবার থাকার ব্যবস্থা নেই। রাজারবাগে জায়গা হয় কয়জনের? বেইলি রোড, আজিমপুর অফিসার্স কোয়ার্টারে ভাগাভাগি করে তাদের থাকতে হয়। থানাগুলোতে কিছু আবাসিক কোয়ার্টার আছে। কিন্তু এসব মিলিয়ে সব পুলিশ সদস্যের বাসস্থানের সঙ্কুলান হয় না। সাধারণ পুলিশ সদস্যদের অনেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।

দেখা যায়, তার ডিউটি সায়েদাবাদে, বাসা মোহাম্মদপুরে। করোনাকালে এই মানুষগুলো আলাদা কোনো যাতায়াত সুবিধা পাচ্ছেন কি না জানি না। কারো মোটরসাইকেল আছে। সাধারণ কনস্টেবলদের হয়তো তা নেই। বেচারাকে ডিউটি শেষে ঘর্মাক্ত হয়ে পৌঁছতে হবে বাসায়। সারা দিন কিন্তু জীবাণুর মধ্যেই ছিলেন তিনি। অনেক অফিসারকে এর মাঝে দেখেছি, তার দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ছুটছেন ত্রাণ নিয়ে। নিজ হাতে ত্রাণ বিতরণ করছেন যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আমার ক্যাডেট কলেজের এক ছোট ভাই, সিনিয়র এসপিকে দেখলাম- অসহায় মানুষকে সহায়তার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন। তাকে কয়েকবার বলেছি, ‘তোমার নিজের ত্রাণ দেয়ার দরকার কী? একজন এসপি অসুস্থ হলে কমান্ড চ্যানেলে অনেক অসুবিধা হবে।

অন্যভাবে ত্রাণ বিতরণ করো।’ তাকে তার পরও দেখেছি ছুটছেন। আরেক বন্ধু আছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। তার আবার মারাত্মক ব্যাক পেইন। ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে প্রশিক্ষণের সময় আঘাত পেয়েছিলেন। প্রতিদিনই তাকে ফিজিওথেরাপি নিতে হতো। করোনার জন্য তা বন্ধ। কিন্তু তিনি সবকিছু উপেক্ষা করে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে কথা হলে দুঃখ করে বলেন, আমাদের দেশের মানুষ এমন অবস্থায়ও নিয়মকানুন মানতে চায় না। এ জন্য তাদের অনেককেই একসময় সংক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে, সাথে অন্যদেরও তারা বিপদে ফেলে দিচ্ছে। মার্চ মাসে লকডাউন দেয়ার পর যখন পুলিশ একটু কড়া ভূমিকা গ্রহণ করে, তখন চার দিকে সমালোচনা শুরু হয় ‘অমানবিক আচরণের’। আমার বন্ধুটি তখন বলেছিল যে, ‘মানুষ যেখানে এমন বিপদেও আইন মানতে চায় না সেখানে কঠোর না হলে দেশের আইন মানা মানুষগুলোকে উল্টো বিপদে পড়তে হবে।’ হয়েছেও তাই! এর মাঝে পুলিশের প্রায় ছয় হাজার সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের কয়েকজন মৃত্যুবরণও করেছেন। কোনো একক পেশায় এটাই হলো, করোনায় সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। এটা কি পুলিশের অসাবধানতা? অপেশাদারিত্ব? নাকি দায়িত্ব পালনের ন্যূনতম নীতিবোধ থেকে দানবের সামনে বুক পেতে দেয়া? বিবেচনা আপনার।

মাওয়া বা আরিচা ফেরিঘাটে যখন হাজার হাজার মানুষ পঙ্গপালের মতো জড়ো হচ্ছিল, তখন সেখানে পুলিশকে দেখেছি পরিস্থিতি সামাল দিতে সামনের সারিতে অবস্থান নিতে। মানুষের যেখানে নিজের জীবনের প্রতি মায়া নেই, দায়িত্ববোধ নেই সেখানে পুলিশও বলতে পারত, কিসের অত ঠেকা? আশ্চর্যের বিষয় তারা কেউ কিন্তু কমান্ড চ্যানেলের নির্দেশ ভঙ্গ করেননি। সংক্রমিত হতে পারেন জেনেও এগিয়ে গেছেন। এসব পুলিশ যদি জীবনে ৫-১০টা ভুল করেও থাকেন এমন পরিস্থিতিতে তাদের এই সাহসিকতাকে অবশ্যই শ্রদ্ধার সাথে দেখতে হয়। যে ক’জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে কমিশনার, ডিআইজি পদের কর্মকর্তারাও আছেন। চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মাঠে থাকতেন, তিনি এখন করোনার সাথে লড়ছেন।

এ থেকেই বোঝা যায়, উঁচু পদের কর্মকর্তারাও মাঠে যাচ্ছেন নিজ দায়িত্বের বাইরে দায়িত্ব পালন করতে। কাউকে জিজ্ঞেস করিনি কোন পদের কতজন আক্রান্ত হয়েছেন? তবে ভাবছি এই যে ছয় হাজার সদস্য আক্রান্ত হলেন, আল্লাহ না করুন হয়তো অদূরভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরো বাড়বে। তখন তাদের চিকিৎসার কী হবে? ঢাকার রাজারবাগে একটি পুলিশ হাসপাতাল আছে বটে। দেশের প্রতিটি বড় জেলায় পুলিশ লাইনে চিকিৎসক থাকেন, ছোটখাটো মেডিক্যাল সেন্টার আছে। ব্যস। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালটি সবচেয়ে বড় হাসপাতাল বাংলাদেশের প্রায় দুই লাখ পুলিশ সদস্যের জন্য।

কিন্তু যতদূর জানি সেটা সেনাবাহিনীর কোনো একটি সিএমএইচের মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত নয়। পুলিশের আলাদা কোনো চিকিৎসক কোর নেই। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। সাধারণ একটি সরকারি হাসপাতালের মতো রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল। এবার করোনায় হয়তো এই দুর্বলতা চোখে পড়বে সরকারের এবং ভবিষ্যতে আশা করি এই হাসপাতালটিসহ পুলিশ বাহিনীর চিকিৎসা ব্যবস্থার দিকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হবে। সীমিত সম্পদ ও যন্ত্রপাতি নিয়েও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালটি কিন্তু ধারণক্ষমতার অনেক বেশি পুলিশ সদস্যকে সাফল্যের সাথে চিকিৎসা দিয়ে আসছে। আক্রান্তের সাথে মৃত্যুর হার বিবেচনা করলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এ ক্ষেত্রে পুলিশ এখন পর্যন্ত জয়ী অবস্থানে রয়েছে। দোয়া করি, তারা এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠুন। কারণ যতই সমালোচনা করি, পুলিশ যদি মাঠে না থাকে, তাহলে এমন অবস্থায় কী হতে পারে তা কল্পনাও করতে পারি না।


আরেকটি বিষয়ের উল্লেখ না করলেই নয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যারা ইন্তেকাল করেছেন তাদের অনেকেরই আত্মীয়স্বজন নিতান্ত কুসংস্কার অথবা অজ্ঞতাবশত মৃতের লাশ গ্রহণ করেননি। এটা এক অবিশ^াস্য, চরম অমানবিক ব্যাপার। এমন ঘটনাও মিডিয়ায় দেখেছি যে, উপ-কর কমিশনার মারা গেছেন। কিন্তু তার নিজ বাড়িতে গ্রামবাসী লাশ সৎকার করতে দেয়নি! এরকম প্রায় সব ঘটনাতেই পুলিশ ওইসব লাশ দাফন বা সৎকারে এগিয়ে এসেছে। আমার মনে হয়েছে, তাদের উচিত ছিল লাশ দাফনের পর ওইসব আত্মীয় বা গ্রামবাসীকে কিছু ‘উত্তম মধ্যম’ দেয়া। দেশের এমন বিপদে তারা এমন হৃদয়বিদারক আচরণ করে অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন। সুতরাং তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা যায়। এই যে বড় একটি মহৎ কাজ পুলিশ সদস্যরা করছেন, তার কোনো পুরস্কার তারা পাবেন কি না জানি না। তবে আল্লাহর দরবারে অবশ্যই তাদের জন্য থাকবে উত্তম প্রতিদান।

বর্তমানে পুলিশ বাহিনীতে স্মার্ট এবং পেশা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন এমন অনেক কর্মকর্তাকে চোখে পড়ে। প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে, সামগ্রিকভাবে তাদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়নি। বাসস্থান সঙ্কট, চিকিৎসার অপ্রতুলতা রয়ে গেছে। এটা আমাদের মতো দেশে স্বাভাবিক মনে হলেও তাদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান জরুরি। যেহেতু প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে এই ১৬ কোটি লোকের দেশে পুলিশদের সব শ্রেণীর মানুষের সাথে ডিল করতে হয় এবং নানামুখী জটিল সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। তাই তাদের চাহিদার দিকেও সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে। আর জনমুখিনতা বাড়াতে অধিক মনোযোগী হতে হবে পুলিশ বাহিনীকে। আশা করি, তারা তা পারবেন।


মরহুম গিয়াস কামাল চৌধুরী বলেছিলেন এস্টাবলিশমেন্টের পক্ষে কখনো কিছু না লিখতে। কিন্তু তার নির্দেশনা আজ ভঙ্গ করলাম। ফেসবুকে বন্ধু এক পুলিশ কর্মকর্তা কয়েক দিন আগে একটি পোস্টে অভিমান করে লিখেছিলেন, তাদের বাহিনীর জনহিতকর ও জীবনবাজি রেখে করোনা সঙ্কটে কাজ করে যাওয়ার কোনো প্রশংসা কেউ করছে না। তাকে কথা দিয়েছিলাম কিছু একটা লিখব। সেই কথা রাখলাম। এটা কোনো বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরাগ নয়, দায়িত্ব বলেই মনে করেছি। এমন একটি ভাইরাসজনিত মহামারীর সময় আমি যখন ঘর থেকে দুই পা বাইরে রাখিনি গত ২৩ মার্চ থেকে, সেখানে আমারই দেশের এই ‘সর্বদা সমালোচিত’ মানুষগুলো প্রতিদিন যুদ্ধ করছেন অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে। তাদের প্রতি রইল ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। 

লেখক : সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও সাংবাদিক। বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের সম্পাদক


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us