যেভাবে আওয়ামী লীগের কমিটিতে রিজেন্টে সাহেদ

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Jul 09, 2020 06:48 am
যেভাবে আওয়ামী লীগের কমিটিতে রিজেন্টে সাহেদ

যেভাবে আওয়ামী লীগের কমিটিতে রিজেন্টে সাহেদ - ছবি : সংগৃহীত

 

নানা অভিযোগে সিলগালা করে দেয়া রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো: সাহেদকে নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠার প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে বলেছেন, বিষয়টি তাদের দলকে নতুন করে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।

দু'দিন ধরে আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতার সাথে মো: শাহেদের অনেক ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হয়েছে এবং নানা আলোচনা চলছে।

গত বছর অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যে যুবলীগের কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মুখে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোতে শুদ্ধি অভিযান চালানোর কথা বলা হয়েছিল।

কিন্তু সেসব কী শুধু কথাতেই রয়ে গেছে, সেই প্রশ্ন আবারো সামনে এসেছে।

করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত সেই রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো: সাহেদ নিজেকে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত বলে দাবি করতেন।

তার এমন দাবির মুখোমুখি হয়েছিলেন আওয়ামী লীগেরই অনেক নেতা।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ কমিটির একটি অনুষ্ঠানে মো: সাহেদ সেই কমিটির নেতাদের পাশে বসা রয়েছেন, এমন একাধিক ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

এই উপকমিটির সদস্য সচিব ড: শাম্মী আহমেদ বলেছেন, মো: শাহেদকে তাদের কমিটিতে নেয়ার জন্য দলেরই অনেকে তদ্বিরও করেছিলেন।

"আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেছেন যে, ছবি আছে, উনি আমাদের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। উনি নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন বুদ্ধিজীবী বা ঐ ধরণের হিসাবে পরিচয় দিতেন। উনি আমার বাসায়ও এসেছেন, আমাকে অনেক অনুরোধ করেছেন যে, আপা আমাকে আপনার কমিটিতে রাখেন। আমি কমিটিতে রাখিনি।"

ড: শাম্মী আহমেদ আরো বলেছেন, "ওনাকে আমাদের উপকমিটিতে রাখার ব্যাপারে এমন কিছু জায়গা থেকে আমাকে বলাও হয়েছে যে, তুমি তাকে রাখো। অনেক সিনিয়ররা বলেছেন। আমি তাদের নাম বলবো না। তারপরও আমি তাকে কমিটিতে রাখিনি।"

"আমাদের কমিটির অনুষ্ঠানের খবর কিভাবে পেতেন, তা জানি না। কিন্তু উনি অনুষ্ঠানে এসে হাজির হতেন। তবে আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি, উনি আমার উপ কমিটির কোনো সদস্য ছিলেন না।"

করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ নানা অভিযোগে সিলগালা করে দেয়া রিজেন্ট হাসপাতালের মালিককে নিয়ে আওয়ামী লীগ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।
তবে মো: সাহেদের কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগকে আবারও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বলে দলটির তৃণমুলের নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন।

কয়েকটি জেলা থেকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা কর্মী বলেছেন, এরআগেও বেশ কিছু ঘটনায় তাদের দল বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরিস্থিতি পড়েছিল।

গত ফেব্রুয়ারি মাসেই অসামাজিক নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছিল।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে যুবলীগ এবং কৃষক লীগের বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হন। সেই পরিস্থিতিও আওয়ামী লীগকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছিল।

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের একজন নেত্রী জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেছেন, এখন মো:শাহেদের ঘটনার প্রেক্ষাপটে মাঠপর্যায়ে তারা আবার প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন।

"সাহেদের মতো যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দল থেকে সুবিধা নিয়ে এসেছে, একটা দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে এদের এক বিন্দুও দ্বিধাবোধ বা সময় লাগবে না। এ ধরণের মানুষ যখন একটা বড় দলের নাম বিক্রি করে বা নামের ছত্রছায়ায় যখন এদের কর্মকাণ্ড চালায়, অবশ্যই সেটা আমাদের বিব্রত করে। মাঠ পর্যায়ে যখন কাজ করতে যাই, আমাদের অবশ্যই এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।"

তিনি আরো বলেছেন, "দলে শুদ্ধি অভিযানের যে বিষয়, আসলে প্রধানমন্ত্রী যে কাজগুলো হাতে নিয়েছেন,আমরা দেখেছি যে, প্রতি ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একাই লড়ে যাচ্ছেন এদের বিরুদ্ধে।"

গত বছর ঢাকায় ক্যাসিনো বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অভিযানে যুবলীগের কয়েকজন নেতা ধরা পড়ার পর আওয়ামী লীগ শুদ্ধি অভিযান চালানোর কর্মসূচি নিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় রয়েছে। দলটি লম্বা সময় ক্ষমতায় রয়েছে। দলটির নেতাদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে বলেছেন বিভিন্ন দল থেকে অনেকে সুবিধা নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোতে ভিড়েছে।

দলটির সিনিয়র নেতাদেরও অনেকে সেজন্য বিভিন্ন সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন।

গত বছর অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যে যুবলীগ, কৃষক লীগের কয়েকজন নেতা ধরা পড়ার পর দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল।

কিন্তু তা কতটা হয়েছে, সেই প্রশ্ন তাদের দলের ভিতরেই উঠেছে।

দলটির একজন কেন্দ্রীয় নেত্রী মেহের আফরোজ বলেছেন, "যখনই আমরা এ ধরণের খবর পাচ্ছি, আমরা কিন্তু বসে নেই। আমরা পাপিয়াকে ধরি নাই? সব কিছু রিপোর্ট না আসলে বা সমস্যা চিহ্নিত হলে কিছু করা যায় না। কারণ হুট করে কাউকে চেনাটাও অনেক কঠিন ব্যাপার।"

আওয়ামী লীগের কিছু নেতার সাথে মো: শাহেদের ছবি যেমন ভাইরাল হয়েছে, তেমনি বিএনপির কিছু নেতার সাথে তার পুরোনো অনেক ছবি ফেসবুকে অনেক শেয়ার হয়েছে।

তার সাথে আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক নেই বলে দলটির সিনিয়র নেতারা এখন দাবি করেছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, "এই ধরণের ঘটনায় যে কেউ বিব্রত হতে পারে এবং হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে কথাটা সংসদে বরেছেন যে,এর প্রত্যেকটা ঘটনাই কিন্তু আওয়ামী লীগের সরকার এবং প্রশাসনের মাধ্যমে আইনগতভাবে উদঘাটিত হচ্ছে, অন্য কেউ এসে খবর দিয়ে যায় নাই।"

তিনি আরো বলেছেন, "একটা সরকার ক্ষমতায় থাকলে নানাভাবে সেখানে অনুপ্রবেশ ঘটে। কিন্তু প্রশ্নটা হলো, এটা সরকার পালাপোষা করছে নাকি এর মূল উৎপাটন করতে চাচ্ছে-সেটাই দেখার বিষয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।"

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, তাদের দলের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এরপর এবছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শুদ্ধি অভিযানসহ সাংগঠনিক কার্যক্রমের দিকে তারা সেভাবে নজর দিতে পারছেন না।

সূত্র : বিবিসি

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us