কার আশ্রয়ে আছেন সাহেদ?

আবু সালেহ আকন | Jul 12, 2020 06:51 am
সাহেদ

সাহেদ - ছবি : সংগৃহীত

 

কর্মচারীরা গ্রেফতার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদ। প্রশ্ন জেগেছে মানুষের জীবন নিয়ে খেলার সাথে জড়িত আন্তর্জাতিকমানের এই প্রতারক সাহেদ এখন কোথায়? অনেকেরই ধারণা অবস্থা বেগতিক দেখে শাহেদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। দীর্ঘ দিন তার কাছ থেকে যারা সুযোগ সুবিধা নিয়েছে তারাই সাহেদকে দেশ ছেড়ে পালাতে সহায়তা করেছেন। না হলে তিনি এমন কোন স্থানে রয়েছেন যে স্থানে আপাতত তিনি নিরাপদ। সে ক্ষেত্রে সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন অনেক প্রভাবশালী। সাহেদের কাছ থেকে অনেকেই নানাভাবে সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি করোনাকালেও সাহেদের কাছ থেকে অনেকেই সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন।

করোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদান, ভুয়া রিপোর্ট দিয়েও সরকার এবং রোগীর কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগে গত ৭ জুলাই সিলগালা করে দেয়া হয় সাহেদের নিয়ন্ত্রিত রিজেন্ট হাসপাতাল। রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুরের দু’টি শাখাই পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় ওই হাসপাতাল থেকে প্রতারণার বিপুল আলামত উদ্ধার করা হয়। ৭ জুলাই উত্তরা থানায় সাহেদসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় মোট আটজন গ্রেফতার হলেও বাকি ৯ জন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। যার মধ্যে মূল হোতা সাহেদকেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। সাহেদ গ্রেফতার না হওয়ায় মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। ঘুরপাক খাচ্ছে নানা সন্দেহ। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের শীর্ষ ব্যক্তিরা বলে আসছেন সাহেদ দেশেই আছে এবং শিগগির ধরা পড়বেন। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেকেই সন্দেহ করছেন শাহেদের কাছ থেকে সুবিধাভোগীরাই এখন শাহেদকে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখেছে। যে কারণে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। উত্তরা হাসপাতালে অভিযান শুরু হওয়ার সাথে সাথে শাহেদ সকল প্রকার নেটওয়ার্কে বাইরে চলে যায়। তার মোবাইল ফোন, ফেসবুক আইডি থেকে শুরু করে সবকিছুই এখন বন্ধ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, সাহেদের কাছ থেকে অনেক শ্রেণী পেশার মানুষই সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করত। ও রকম কোনো সুবিধাগ্রহণকারীর কাছেই হয়তো তিনি বেশ নিরাপদে আছেন। আন্তর্জাতিকমানের এই প্রতারক শাহেদের সাথে শুধু যে দেশের প্রভাবশালীদের যোগাযোগ ছিল তাই কিন্তু নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অনেক দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে তার যোগাযোগ ছিল। যে কারণে অনেকেই ধারণা করছেন, সাহেদ ঘটনার পরপরই অবৈধপথে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

গত ৯ বছরেই রাজধানীর বিভিন্ন থানায় শাহেদের বিরুদ্ধে অন্তত ৩২টি মামলা হয়েছে প্রতারণার। আর এই প্রতারণা করার জন্যই তিনি বিভিন্ন মহলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে গড়ে তোলেন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। প্রভাবশালীদের সাথে সম্পর্ক থাকায় সাধারণ মানুষকে কোনো কেয়ারই করতেন না শাহেদ।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের দিকে সাহেদ ধানমন্ডি এলাকায় বিডিএস কিক ওয়ান এবং কর্মমুখী কর্মসংস্থান সোসাইটি (কেকেএস) নামে দুটি এমএলএম কোম্পানি খুলে গ্রাহকদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে গা ঢাকা দিলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ পর্যন্ত তার নামে ৩২টি মামলা রয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন থানায়। তারমধ্যে ধানমন্ডি, মিরপুর, উত্তরা, লালবাগ ও আদাবরে মামলার সংখ্যা বেশি। মামলাগুলো হচ্ছে, বাড্ডা থানায় ৩৭(৭)০৯, আদাবর ১৪(৭)০৯, লালবাগ ৪৭(৫)০৯, উত্তরা ২০(৭)০৯, উত্তরা১৬(৭)০৯, উত্তরা ৫৬(৫)০৯, উত্তরা ১৫(৭)০৯, ৩০(৭)০৯, ২৫(৯)০৯, ৪৯(০৯)০৯, ১০(৮)০৯ সবগুলোই প্রতারণার বলে জানা গেছে। প্রতারণা এসব টাকা রিজেন্ট কেসিএস লি. ইউসিবি ব্যাংক উত্তরা শাখায় একাউন্ট নম্বর ০৮৩২১০১০০০০১০০০৩, রিজেন্ট হাসপাতাল লি. ইউসিবি ব্যাংক উত্তরা শাখায় একাউন্ট নম্বর ০৮৩১১০১০০০০০০৬১৬, সহ ব্র্যাক ব্যাংক উত্তরাসহ বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য আছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, করোনাকালে ১০ হাজার রোগীর করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহ করে রিজেন্ট হাসপাতাল। মাত্র ৪ হাজার ২৬৪টি নমুনা সরকারিভাবে টেস্ট করে রিপোর্ট দেয়। বাকি ৫ হাজার ৭৩৬টি পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট প্রদান করা হয়। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চুক্তি অনুযায়ী, বিনামূল্যে করোনা টেস্ট ও চিকিৎসা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১০ হাজার টেস্টের বিপরীতে রিজেন্ট প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া ভর্তি রোগীপ্রতি এক লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ বিল করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার শুধু জুন মাসে সরকারের কাছে চিকিৎসা বিল বাবদ পাঠানো হয় এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার হিসাব। সেবার নামে এভাবেই অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করে রিজেন্ট। আর যখনই এসব নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো তদন্ত শুরু করে, তখন নিজেকে বাঁচাতে সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতালের তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্তের একটি নাটক করেন।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us