হাঁটাহাঁটি যখন বার্লিনে

মীর সালমান শামিল | Jul 02, 2021 02:06 pm
হাঁটাহাঁটি যখন বার্লিনে

হাঁটাহাঁটি যখন বার্লিনে - ছবি : লেখক

 

পুরো ইউরোপেই খাবারের দাম খুব বেশি নয়। তুলনা করলে আমাদের ঢাকাতেই দাম অনেক বেশি। বার্লিনেও খাবার বেশ সস্তা। রিসাতে ৯টা চিকেন উইংসের দাম মাত্র ২.৫ ইউরো মানে ২৫০ টাকা। চিকেন উইংস, তান্দুরি চিকেন এবং আরবি রুটি নিয়ে বসলাম খেতে। পেটে ক্ষুধা ছিল, খাবারও পর্যাপ্ত। চিকেন উইংস দেখেই মন ভরে গেল আর স্বাদে আমাদের দেশের Bfc-এর সাথে একদম চোখে চোখ রেখে পাল্লা দিতে পারবে। খেয়ে পেট এবং মন দুইটাই ভরে গেল। আহ! ফাবি আইয়ে আয়ালা রব্বিকুমা তুকাযিব্বান!

এখন এক কাপ তুর্কি চা হলে ব্যাপারটা একেবারে নান্নার বিরিয়ানির পরে এক গ্লাস বোরহানির মতো হয়ে যেত। কিন্তু এই তুর্কি জাতিটা এই ক্ষেত্রে মারাত্মক জাতীয়তাবাদী, তুর্কি ক্রেতাদের ফ্রি চা দেবে কিন্তু অতুর্কিদের? অনেক কাহিনী বলে নিলে হয়। এখানে সমস্যা হচ্ছে মুলামুলি করার মতো জার্মান আমি পারি না। একটা ফ্রি পরামর্শ, যদি কখনো কোনো তুর্কি দোকানে যান তাহলে সাথে একটা তার্কিশ বন্ধু নিয়ে যাবেন, তাহলে দেখবেন দুনিয়াটা কত সহজ!

খাওয়া শেষে হাঁটতে বের হলাম। আমি এখন আছি বার্লিনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র সিকান্দার প্লাটজে, সংক্ষেপে আলেক্স। জায়গাটা বেশ উন্মুক্ত, এক পাশে আছে বার্লিন টেলিভিশন টাওয়ার (জার্মানির প্রতিটি শহরেরই এই টাওয়ার আছে)। অন্যপাশে একটা কম্পাসের মতো বস্তু যাতে কোন শহর কোন টাইম লাইনে আছে তা উল্লেখ রয়েছে। গ্রিনিচ+৬ দেখতে পেলাম ঢাকার নাম! আহ, মনটাই ভাল হয়ে গেল!

আলেক্সের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশুমার কফির দোকান। দোকানের সমানে সারি সারি চেয়ার পাতা। এক উস্তাদ বলেছিলেন, ওলামাদের পানীয় হচ্ছে চা আর আউলিয়াদের পানীয় হলো কফি। তো আমি যেহেতু আউলিয়া পর্যায়ে চলে গেছি- তাই দুই ইউরো দিয়ে এক পেয়ালা কফি নিয়ে বসলাম। শেষ বসন্তের রোদ গায়ে পড়ল, সাথে আয়েশ করে কফি- আহ, আমারো ইকবালের মত বলতে ইচ্ছা হলো-

জিন্দেগী য়ুই ভি
গুজুর হী জাতী!

কফি খেতে খেতে দেখছিলাম বার্লিনের জীবন। নানা রঙের নানান ধরনের মানুষ বাস করে এই শহরে। বার্লিন একটা বহুজাতিক শহর৷ কালো আফ্রিকান থেকে শুরু করে স্বর্ণকেশী; নীল চোখের শ্বেতাঙ্গ, আরব কিংবা পীত বর্ণ সবাইকে দেখতে পাবেন। ১৮৫টা দেশের মানুষ বাস করে এই শহরে। এই জনস্রোত দেখতে আমার বেশ লাগে। কেউ যাচ্ছে উবান ধরতে, কেউ যাচ্ছে কাজে, কেউ স্কুল থেকে ফিরছে, কারো গন্তব্য হয়তো ক্লাব। আর আছে আমার মতো পদব্রাজক। বার্লিন ইউরোপের অন্যতম প্রধাম ভ্রমণ গন্তব্য। প্রতি বছর ৬০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বার্লিন ঘুরতে আসে।

কফি শেষ করে হাঁটতে হাঁটতে গেলাম আলেক্সের অন্য পাশে। এই পাশে টেলিভিশন টাওয়ার, রাতহাউস (প্রাদেশিক সরকারের প্রধান কার্যালয়)। টেলিভিশন টাওয়ারের নিচেই একটা বিশাল পানির ফোয়ারা এবং বসার জন্য ব্রেঞ্চ। অন্য পাশে রাতহাউসের সামনে বসার জন্য অসংখ্য ব্রেঞ্চ, সুন্দর একটা বিশাল ফোয়ারা এবং একটা গির্জা। একটা ব্রেঞ্চে দেখলাম এক বৃদ্ধ শুয়ে ঘুমাচ্ছে। চোখেমুখে দারিদ্র্যতার ছাপ স্পষ্ট; আফ্রিকা, বাংলাদেশ বা ইউরোপের এই পাঁচ তারকা রাজধানী, দ্রারিদ্রতার ভাষা সব জায়গাতেই এক। আবার কিছুক্ষণ বসলাম। আলসেমির আনন্দ অমৃতসম!

এরপর ঢুকলাম গির্জার মধ্যে। এই গির্জার নাম সেন্ট মেরি গির্জা৷ ১২ শ' শতাব্দীর দিকে এটি ক্যাথলিক গির্জা হিসেবে নির্মিত হয়। জার্মানিতে মার্টিন লুথারের বিপ্লবের পরে প্রোটেস্টেন্টরা এটা দখল করে প্রোটেস্টেন্ট গির্জায় রুপান্তরিত করে। জার্মানির অধিকাংশ গির্জার ভাগ্যেই এ ঘটনা ঘটেছে। এটা এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হলো, ইহুদিদের জুদাইয়া এনসাক্লোপিডিয়াতে উল্লেখ আছে, ঠিক এই জায়গাতে ১২৪৩ সালে মিথ্যা অভিযোগ এনে Host Desecration-এর অংশ হিসেবে অনেক ইহুদিকে পুড়িয়ে মারা হয়। ভেতরে ঢুকলাম, ভবনটা একদম নতুন। মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল যে এটা প্রায় ৮০০ বছরের পুরানো! প্রোটেস্টেন্টরা ভাস্কর্য বা মূর্তি বানায় না। তাই ভেতরেও কিছু নেই। দুই-দুইটা মহাযুদ্ধ গেছে এরপরেও কিভাবে এই ভবন দাঁড়িয়ে আছে এই প্রশ্ন মাথায় আসতেই পারে। উত্তর হলো, দুই পক্ষই খ্রিষ্টান। আরো নির্দিষ্ট করে বললে আমেরিকা ও ইংল্যান্ড উভয়ই জার্মানদের মতো প্রটেস্ট্যান্ট। তাই গির্জা তারা স্পর্শ করেনি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আক্ষরিকভাবেই পুরো হ্যানোভার শহরই ছাতু হয়ে যায় তবে শহরের মূল গির্জার কিছুই হয়নি। ক্যাথলিক ফ্রান্স এবং কমিউনিস্ট রাশিয়া ঢোকার পরে অবশ্য ঘটনা পাল্টে যায়। কিছু কিছু গির্জাতেও বোমা ফেলেছে তবে সেটাও সংখ্যায় অনেক বেশি না।

সেন্ট মেরি থেকে বের হয়ে রওনা দিলাম তেমন একটা গির্জায় যেটাতে বোমা পড়েছিল, কাইজার ভিলহেলেম স্মৃতি গির্জা। এই গির্জা সেন্ট মেরির ঠিক বিপোরীত। এটা নির্মাণকাল উনিশ শতাব্দী। কিন্তু দেখলে মনে হয় অনেক পুরানো। আর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সোভিয়েত বাহিনী বোমা ফেলে গির্জা একদম ধ্বংস করে ফেলে। ১৮৯১ সালে দ্বিতীয় কাইজার ভিলহেলেম এবং উনার স্ত্রী অগস্থা ভিক্টোরিয়া এই গির্জা নির্মাণ করেছিলেন। জার্মানির সোসালিষ্ট এবং শ্রমিক আন্দোলনের বিপরীতে ধর্মীয় সামাজিক জীবন ফিরিয়ে আনার জন্য এই গির্জা নির্মাণ করেন (সোভিয়েত বোমা কি এই কারণেই পড়েছে?)।

গির্জাটা পুরোপুরি ধ্বংস হলেও ডোমটা কিছুটা অক্ষত আছে। ইতিহাসপ্রেমী জার্মানরা এই ডোমকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করেছে। খুবই অল্প জায়গা একসাথে বেশি দর্শনার্থীকে ঢুকতে দেয় না। লাইনে দাঁড়লাম। আমার সামনে কয়েকজন জার্মান দাঁড়িয়েছে। পুরো পরিবারসহ এসেছে তারা। ইউরোপে ধর্মের রসায়নটা বোঝা একটু মুসকিল। তারা ধার্মিক না, কিন্তু প্রতিটি শহরের গির্জার ছড়াছড়ি এবং গির্জার জৌলুস দেখে তাদের অর্থনৈতিক শক্তি সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন। আর একটা বিষয় সুনিশ্চিত, এরা যিশুখ্রিস্টকে অসম্ভব ভালোবাসে। যিশুখ্রিস্টের প্রতি ভালোবাসাটা সম্ভবত প্রোটেস্টেন্টদের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য। কয়েক মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পেলাম৷ দেয়ালে কিছু ছবি। একপাশে একটা ক্রুস ঝুলানো জিসাসের মূর্তি মাঝখানে ছোট্ট একটু জায়গাতে বিক্রির জন্য সুভেনির। ছবি দেখতে গিয়ে একটা দারুণ জিনিস দেখলাম।

স্ট্যালিনগ্রাদ ম্যাডোনা! এটি ভার্জিন মেরির একটা ছবি। জার্মান বাহিনী এবং সোভিয়েত মধ্যে ১৯৪২ সালে স্ট্যালিনগ্রাদ যুদ্ধের ঠিক আগে জার্মান বাহিনীর চিকিৎসক এবং ধর্মতত্ত্ববিদ ড. কার্ট রেউবার সোভিয়েত ইউনিয়নের মানচিত্রের বিপরীত পাশে এই চিত্রটি আঁকেন। জার্মান বাহিনীকে চারদিক থেকে সোভিয়েত বাহিনী ঘিরে ফেলেছে। পরাজয় নিশ্চিত। মরিয়া জার্মান বাহিনী যুদ্ধে যাবার আগে এই ছবির সামনে শেষ প্রার্থনা করে। যুদ্ধে সোভিয়েত বাহিনী জয়লাভ করে। তবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তারপর এই চিত্রকর্মসহ ড. কার্ট রেউবার গ্রেফতার হোন। সোভিয়েত বন্দী শিবিরেই ড. রেউবার মৃত্যু হয়। ড. রেউবারের বেশ কিছু জিনিস পরিবার ফেরত পায়। তার মধ্যে এই ছবিটিও ছিল। জার্মানরা এই ছবি সোভিয়েতদের ধ্বংস করা গির্জাতেই রেখেছে! ব্যাপারটার একটা ভালো রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে বটে!

জাদুঘরটা ঘুরে দেখলাম কিছুক্ষণ। বের হলেই সামনে আরেকটা গির্জা। এই গির্জা বানানো হয়েছে কাইজার ভিলহেলেম স্মৃতি গির্জার ধ্বংস হয়ে যার মার্বেল পাথর দিয়ে। তাই অনেকটা আয়তক্ষেত্রের মতো স্থাপনা। ভেতরে না ঢোকা পর্যন্ত এটা যে গির্জা তা বোঝার উপায় নেই। রিতীকে অতিক্রম না করে ভেতরেটা সাদামাটা। শুধু সামনে ক্রুশে ঝোলানো জিসাস ক্রাইস্ট, প্রটেস্ট্যান্ট গির্জাগুলো যেমন হয়।

ভিলহেলেম স্মৃতি গির্জার বিপরীতে পাশের এলাকার নাম বিকিনি বার্লিন। ঊনিশ শতকের শেষের দিকে গড়ে উঠা এই এলাকাটা শিক্ষা, ব্যবসা, বিনোদন সবদিকে বেশ সমৃদ্ধ একটা উপশহরে পরিণত হয় খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা সামলাতে পারলেও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সামনে আর দাঁড়াতে পারেনি। রাস্তার পাশেই একটা বিলবোর্ডে এলাকার ধ্বংসযজ্ঞের ইতিহাস লেখা আর সাথে সেই ছবি। ছবিগুলো দেখতে দেখতে কিছুটা আনমনা হয়ে গেলাম। যুদ্ধ যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেটা সম্ভবত এই জার্মানদের চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না। প্রথম এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের তাণ্ডব দেখার পরও মানুষের হুঁশ হয়নি।

তারপরও দেশগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে সামরিক শক্তির উপর। কয়েক শ' বার পৃথিবীকে গুড়ো করে ফেলার মতো অস্ত্র এখন আছে মনুষ্য সমাজের কাছে। অর্ধ শতাব্দী চুপ থাকার পরে জার্মান সরকারও ঘোষণা দিয়েছে, ইতিহাসের দায় থেকেই জার্মানিকে সামরিক খাতে শক্তিশালী হতে হবে। ভারত-পাকিস্তান, ভারত-চীন, তুরস্ক-গ্রিস, লেবাননের সীমান্তে একটা চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশ্ব অপেক্ষা করছে তৃতীয় মহাযুদ্ধ শুরুর বোতাম টেপার শব্দ শোনার জন্য। আইনস্টাইন বলেছিলেন, কোনো অস্ত্র দিয়ে তৃতীয় মহাযুদ্ধ হবে আমি তা জানি না তবে চতুর্থ মহাযুদ্ধ হবে লাঠি ও পাথর দিয়ে। মানে আমরা কিছু দিন পরে হয়তো হিরোশিমা আর নাগাসাকিকে ভুলে যাবো। আহারে কোথায় হারিয়ে গেল সেই দশটি কড়ি...

এরপর উদ্দেশ্যবিহীনভাবে হাঁটাহাঁটি। পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি! ইউরোপে যেটা সবচেয়ে বেশি মিস করি হোঁ রাস্তার পাশের খাবারগুলো ইংরেজিতে যাকে বলে স্ট্রিট ফুড। এখন যদি ইখতিয়ার উদ্দিন মামার এক ঠোঙ্গা ঝাল মুড়ি পাওয়া যেত! তাহলে উত্তম কুমারের মতো গাওয়া যেত, এই পথ যদি না শেষ হয়!

বার্লিনের রাস্তায় আরো একটা দারুণ জিনিস পাবেন, বৈদ্যুতিক ফুট বাইক। প্রতি মিনিট ১৫ সেন্ট। একটা এপস নামাতে হবে, কোড স্কান করলেই গাড়ি চালু। এমন ফাঁকা রাস্তায় আমার সামনে ফুট বাইক মানে একজন ক্ষুধার্থ ভেজিটেরিয়ানের সামনে দোসা, আভোকাডো আর সিজার সালাদ একসাথে দেয়া। এপস নামিয়েই চড়ে বসলাম। দাঁড়িয়ে থাকবেন আর গাড়ি ২০ কিলোমিটার গতিতে চলবে! আহ! মানুষের জীবনকে সহজ করেছে যে বিজ্ঞান তার প্রতি সশ্রদ্ধ ভালোবাসা!

ঘন্টাখানিক চালিয়ে আবার সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত পদযুগলের উপর চড়ে বসলাম। পাশেই একটা সুভিনিয়র দোকান। পতাকা, ম্যাপ, মগ, চাবির রিংসহ নানা জিনিসপত্র। করিৎকর্মা জার্মানরা আরো একটা জিনিস রেখেছে, বার্লিন দেয়ালের ধ্বংসাবশেষের টুকরা। মাত্র কয়েক ইউরো খরচ করলেই আপনি ঐতিহাসিক দেয়ালের একটা অংশের মালিক হয়ে যাবেন! আমাদের দেশে হলে বলতো 'জাপানি বুদ্ধি'...

আরেকটি জিনিস দেখে কিছুটা স্মৃতি কাতর হয়ে গেলাম : ভিউ কার্ড। বার্লিন গেট, বার্লিন ওয়াল, পূর্ব বার্লিন গ্যালারি, রাইখস্ট্যাগ, টিভি টাওয়ার ইত্যাদির ছবির ভিউ কার্ড। ছোটবেলায় এসব কার্ডের গুরুত্ব আমাদের কাছে হলি গ্রেইলের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না। মনে আছে কত খুশি হতাম একটা কার্ড পেলে, জমাতাম, মাঝে মাঝে গুণতাম। একদম কথা বলার আগে থেলেই স্মার্ট ফোন চালানো প্রজন্ম এই ভিউ কার্ডের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। আমি একটা বার্লিন লেখা একটা চম্বুকযুক্ত স্টিলের শোপিস কিনলাম। ৫ ইউরো খরচ করতে হলো। হোক। আমি নতুন কোনো শহরে গেলে আমি এই জিনিন কিনি, আর দেশে গেলে ওই দেশের পতাকা। এখন ঝুলিতে আছে ১০টা পতাকা। একদিন এই পতাকার তিন অংকের ঘরে পৌঁছাবে...

সুভিনির দোকান থেকে বেরিয়ে পার্ক ধরে আবার কিছুক্ষণ হাঁটলাম। এবার সামনে পড়ল আরেকটা সৌধ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে নাৎসিরা শুধু ইহুদি না, আফ্রিকানদেরও হত্যা করে। তাদের স্মরণে এই সৌধ। দুনিয়া অদ্ভুত, শুধু শক্তিমানদেরই মনে রাখে। হলোকাস্ট নিয়ে সবাই জানে। কিন্তু আফ্রিকানদের কিংবা বাংলাদেশে ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেয়া দুর্ভিক্ষে হত্যা! বলা হয়, যদি মহাযুদ্ধে জার্মানি জিতত তাহলে হলোকাস্ট না, দুনিয়া জানত বাংলাদেশে ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেয়া দুর্ভিক্ষে মৃত ৫০ লাখ মানুষের কথা। দুনিয়া আর কী জানবে, আমরা নিজেরাই ভুলে গেছি, ব্রিটিশ এবং জমিদারদের দুই শ' বছরের লুটপাট, গণহত্যা আর অত্যাচারের স্ট্রিম রোলার। তবে সবই শেষ এটা আমি মনে করি না, একদিন এই ব্রিটিশ রয়েল পরিবার নামক গণহত্যাকারী পরিবারকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। এলব নদীর পাড়ে বসলাম। এই নদীর ব্যাস আমাদের দেশের ছোট নদীগুলোর থেকে একটু বড়। আমার ইছামতি নদীর কথা মনে পড়ল। শান্ত কিন্তু বেশ গভীর- পানির রং দেখেই বুঝতে পারছিলাম। নদীর প্রতি ভালোবাসা আমার রক্তেই প্রবহমান। মনটা প্রসন্ন হয়ে গেল। আমাদের দেশের নদীর সাথে ইউরোপের নদীর পার্থক্য হলো এখানে শীতকালে পানি প্রচণ্ড ঠান্ডা হয়, মাঝে মাঝে বরফ হয়ে যায়। ধরতে পারবেন না। আমাদের দেশে শীতকালে নদীর পানি যথেষ্ট উষ্ণ থাকে। সম্ভবত এজন্য দানিয়ুব, রাইন, এলব দেখার পরও মাইকেলের মন পড়ে ছিল কপোতাক্ষতে। দেখতে দেখতে রাত গভীর হয়ে এলো। কিন্তু অনেক মানুষ। জার্মানির অল্প কয়েকটা শহরের মধ্যে বার্লিন একটা যে ঘুমায় না। কিন্তু আমার ঘুম পেয়েছে বেশ৷ উবান নিলাম। হেডফোনে ব্রায়ান এডামসের গান-

And there ain't no place that I'd rather be
And we can't go back but you're here with me
Yeah, the weather is really fine, up on cloud number nine.


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us